পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকালীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায়ও বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলো বন্ধ থাকেনি। এ ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ, দেশি-বিদেশি নতুন শিল্পবিনিয়োগ না থাকা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার কারণে দেশে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় আভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের অন্যতম খাত রফতানিমুখী গার্মেন্ট শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে দেশ। এহেন বাস্তবতায় বড় ধরনের ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও গার্মেন্ট কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার এবং শিল্পদ্যোক্তারা। একেকটি কারখানায় শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পর মাসের পর মাস ধরে কারখানা বন্ধ রাখার অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিনিয়োগকারীদের নেই। কিন্তু করোনার মত অতিমারির ঝুঁকির কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও অধিকাংশ রফতানিমুখী শিল্পকারখানার উৎপাদন চালু থাকলেও এখন শুধুমাত্র গ্যাসের অভাবে এসব কারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্পকারখানায় প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না থাকায় গ্যাসনির্ভর শিল্পকারনার উদ্যোক্তারা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। গ্যাস ও জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন ছাড়া শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো অসম্ভব।
গ্যাসের এই সংকট হঠাৎ করেই হয়নি। একদশকের বেশি সময় ধরে দেশের শিল্পাঞ্চলে চরম গ্যাস সংকট বিরাজ করছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের মাঝামাঝিতে সারাদেশে শিল্পকারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে শিল্পকারখানায় বিদ্যমান সংযোগে গ্যাসের প্রয়োজনীয় সরবরাহ অব্যাহত রাখার তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এক যুগের বেশির সময়ের মধ্যেও সংকট মোচনের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া দু:খজনক। ইতিমধ্যে আমরা সমুদ্রসীমা বিরোধ মিটিয়ে সমুদ্রে বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাসসহ বিপুল পরিমান খনিজ সম্পদ আহরণের কথা শুনছি। কিন্তু প্রায় এক দশকেও বঙ্গোপসারের বিভিন্ন বøকে জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। সমুদ্রে অপার সম্ভাবনার কথা বাদ দিলেও দেশে বিদ্যমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে সম্পদের সম্ভাবনা একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। পরিবর্তিত বিশ্ববাস্তবতায় দেশে নতুন নতুন শিল্পবিনিয়োগ, বিশেষত রফতানিমুখী গার্মেন্ট ও নীটওয়্যার শিল্পের বিপুল কর্মসংস্থান এবং রেমিটেন্স প্রবাহের বড় উৎসকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতর। গ্যাসের চাপ অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার কারণে গত প্রায় একমাস ধরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও নরসিংদির টেক্সটাইল ও নীটওয়্যার শিল্পকারখানাগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বৃহদাকারের একেকটি স্পিনিং কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় এসব কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকের অর্ধেকই এখন কর্মহীনতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানা যায়। এ সব এলাকায় গ্যাস সংকট উত্তরণে সহসা কার্যকর উদ্যোগ নিতে না পারলে রফতানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পখাতের একটি বড় অংশ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যার নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে সরাসরি পড়বে।
স্বাভাবিকভাবে শিল্পখাতের লাইনে গ্যাসের চাপ ২০পিএসআই থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তা ২/৩পিএসআই এ নেমে এসেছে। প্রায় একমাস ধরে গ্যাসের চাপ কমে গেলেও সমস্যা সমাধানে বিটিএমইএ’র তরফ থেকে গত মঙ্গলবার তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন এন্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানীকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। একযুগেও গ্যাস সংকটের সমাধান হয়নি, এখন রফতানীমুখী শিল্পকারখানাগুলোর কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হওয়ার প্রেক্ষাপটে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি তিতাস গ্যাস কিভাবে কতটা পূরণ করতে পারে তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকটের স্থায়ী সমাধান এখনি সমাধান সম্ভব না হলেও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও নরসিংদীর শিল্পাঞ্চলে চলমান গ্যাস সংকটের পেছনে সরবরাহ লাইনে লিকেজ এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগের মত বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে। গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সংস্কার ও উৎপাদনবৃদ্ধির প্রয়াস অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এই মুহূর্তে সরবরাহ লাইনের লিকেজ ও অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপবৃদ্ধির জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব সেক্টরেই নানাবিধ সংকটের চিত্র দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা, দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসহ করোনাকালীন বাস্তবতা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এহেন বাস্তবতার মধ্যে শুধুমাত্র গ্যাস সংকটের কারণে দেশের রফতানিমুখী পোশাক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেলে বা উৎপাদন ব্যহত হলে তা আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।