Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম

ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমির উপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য চাহিদা পূরণে আমাদের কৃষকরা অনেকটা সফল হলেও এখন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। সেইসাথে নানাবিধ সংকট ও প্রতিবন্ধকতায় খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে শুরু করেছে। গত বছর দেশে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ কারণে এবার কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে চাল আমদানির সাথে দেশের উৎপাদন ও চাহিদার কোনো সামঞ্জস্য থাকে না। ধানের বাম্পার ফলন এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার পরও ভরা মওসুমে চাল আমদানি করে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এভাবে কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে এবং পরোক্ষভাবে ধানচাষে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমেও খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। এবার দেশে দীর্ঘমেয়াদি অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে ধান উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি ও পর্যাপ্ত সেচের পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলে বোরো ধানে বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সেইসাথে আম, লিচুর মত প্রধান মওসুমি ফলের বাগানগুলোতেও মুকুল ঝরে যাওয়া এবং গুটির স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

অভিন্ন নদ-নদীর পানি বন্টনে ভারতের অনীহা এবং একতরফাভাবে যথেচ্ছ পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশে মরু প্রক্রিয়া দেখা দেয়া, কৃষি ব্যবস্থা, খাদ্য উৎপাদন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার যে আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছে, তারই বাস্তব প্রতিফলন এখন স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পদ্মা ও তিস্তার উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পদ্মা-তিস্তার অসংখ্য শাখা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় গত তিন দশক ধরে সেচ প্রকল্পগুলো মূলত ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর অস্বাভাবিক হারে নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় এখন ভ‚-গর্ভস্থ পানিতেও বিশেষ টান পড়েছে। আশির দশকে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৩৯ফুট নিচে, বর্তমানে তা ৮০ ফুট থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও ১৬০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে এ এলাকায় হাজার হাজার সেচপাম্প অকেজো হয়ে পড়েছে বলে জানা জানা যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক একটি গবেষনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন এবং বরেন্দ্র বহুমুখী সেচ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমির গবেষকদের প্রকাশিত নিবন্ধে এ সম্পর্কে প্রামান্য তথ্যাবলী উঠে এসেছে বলে জানা যায়।

গতকাল ঢাকার একটি ইংরেজী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভূগর্ভস্থ পানির অনিয়ন্ত্রিত ও অপব্যবহারের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে তীব্র পানি সংকটের চিত্র উঠে এসেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের মওসুমে সেচের পানির জন্য গভীর নলকূপের উপর নির্ভরশীলতা তুলনামূলক কম থাকলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে গড়ে ওঠা শত শত অটো রাইসমিলের প্রত্যেকটিতে তিন-চারটি করে গভীর নলকূপ বসিয়ে দিনরাত পানি টেনে তোলার কারণেই সেখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এটি কোনো নতুন সংকট নয়। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে নদনদী শুকিয়ে যাওয়া এবং বড় বড় সেচ প্রকল্পগুলোর বৃহদাংশ অচল হয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তিন দশক আগেই এই সংকট শুরু হয়েছিল। তবে দশকের পর দশক ধরে কৃষকের ক্রমবর্ধমান হাহাকার এবং মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কার বাস্তবতা সামনে রেখেও ভারত সরকারকে একটি ন্যায্য পানি বন্টনে সম্মত করা যায়নি। এহেন বাস্তবতায় বাংলাদেশকে অবশ্যই ভয়াবহ খাদ্য সংকট, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মত দুর্দশা মোকাবেলায় স্থায়ী সমাধানে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে ও বিশ্বে করোনাভাইরাস অতিমারির অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এর উপর যদি অনাবৃষ্টি ও খরার পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ধান ও ফলফলাদি উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যহত হয়, তার দুর্ভোগ দেশের দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকটের সাথে সাথে হাওরাঞ্চলের ধানক্ষেতে হঠাৎ গরম হাওয়ার তান্ডবে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নতুন বের হওয়া থোড় ধানের শীষগুলো ‘মন্দ হাওয়া’য় শুকিয়ে যেতে দেখছে কৃষকরা। এসব অপ্রত্যাশিত-অনাকাঙ্খিত বাস্তবতা ডিঙিয়ে দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ এবং দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একদিকে করোনালকডাউন অন্যদিকে রমজান মাসকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এহেন বাস্তবতায় খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জরুরি ত্রাণ ব্যবস্থা এবং সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবেলায় আগেই বিশেষ উদ্যোগের কথা সরকারকে ভাবতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদ্য সঙ্কট
আরও পড়ুন