পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আগামী অক্টোবরে গণচীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ঢাকা সফরে আসছেন। কয়েকদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ৮ ঘণ্টার জন্য ঢাকা সফরে এসেছিলেন। এখন চীনা প্রেসিডেন্ট আসছেন। এ থেকেই বোঝা যায় যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব রাজনীতিতে বিশেষ করে বর্তমান পরাশক্তির চোখে এবং আগামী দিনের পরাশক্তির চোখে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। জন কেরি এসেছেন এবং চলে গেছেন। কিন্তু বড় কোনো অর্থনৈতিক সাহায্য বা সহযোগিতার আশ্বাস মেলেনি। হতে পারে যে, তার সফরের সাথে অর্থনৈতিক সাহায্য ও সহযোগিতা এবার সম্পৃক্ত ছিলো না। তার সফরের ধরন-ধারণ এবং সফরকালে প্রদত্ত বক্তৃতা-বিবৃতি এবং মন্তব্যে মনে হয় যে, তার সফরের উদ্দেশ্য ছিলো প্রধানত রাজনৈতিক এবং কৌশলগত। আরেকটি কারণ হতে পারে যে, তিনি যে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেই সরকার অর্থাৎ ওবামা সরকারের মেয়াদ আছে আর মাত্র ২ মাসের সামান্য কিছু বেশী। আগামী ৮ নভেম্বরের নির্বাচন পরবর্তীতে ওবামা যেমন আর প্রেসিডেন্ট থাকবেন না তেমনি জন কেরিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকবেন না। সুতরাং এই ২ মাসের মেয়াদে তার পক্ষে বড় কোনো অর্থনৈতিক কমিটমেন্টের সুযোগ নেই। এই দিক দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সফর অর্থনৈতিক বিবেচনায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে তার সফরের যে রাজনৈতিক ও কৌশলগত তাৎপর্য নেই সে কথা বলা যাবে না। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরেই বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বিরাজ করছে। ভারত মহাসাগর কিংবা দক্ষিণ চীন সাগর প্রশ্নে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ অবলম্বন করেনি। বেশ কয়েকটি মৈত্রীসেতু চীন তৈরি করে দিয়েছে। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতেও চীনা কন্ট্রাক্টরদের ভূমিকা রয়েছে। চীন বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহী। চীনা রাষ্ট্রদূত মা সিং ছিয়াং বলেছিলেন, প্রয়োজনে অন্য যে কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হলেও চীন এ কাজটি করতে চায়। চীনের অনুকূলে বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য থাকলেও চীন এরই মধ্যে পাঁচ হাজার বাংলাদেশী পণ্যকে সে দেশে বাজারজাতকরণে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। চীনা বিনিয়োগও বাড়ছে দিন দিন। ২০০২ সালে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা এখনো বলবৎ রয়েছে। আমাদের সীমান্ত থেকে চীনের দূরত্ব খুব বেশী দূরে নয়। চীন এই মুহূর্তে এশিয়ার অর্থনীতিতে এক নম্বরে এবং ভারতের অবস্থান তৃতীয়। ফলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে চীন ও ভারত যে ফ্যাক্টর, তা অস্বীকার করা যাবে না।
গণচীন বর্তমানে যেসব দেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেসব দেশকে মুক্তহস্তে সাহায্য ও সহযোগিতা করছে। পাক-চীন করিডোর বলে যে সংযোগ সড়কটি নির্মিত হচ্ছে এবং বেলুচিস্তানের গোয়াদরে যে সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে সেসব বাবদ চীন পাকিস্তানে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশ যদি সুকৌশলে চীনের সাথে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে তাহলে বাংলাদেশেও চীনের বিশাল অর্থনৈতিক সাহায্য আসতে পারে। বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর ৩ শাখাতেই চীনা সমরাস্ত্রের প্রাধান্য রয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চীনের নিকট থেকে ২টি সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তি করেছে। এসব সাবমেরিন আগামী বছরের মধ্যেই বাংলাদেশকে ডেলিভারী দেয়ার কথা। তবে বাংলাদেশকে খেয়াল রাখতে হবে যে, পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে তার এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত হবে না যার ফলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে ভূম-লীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির খপ্পরে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ঘিরে ফেলার জন্য চীনের চার ধারে মুক্তার মালা গেঁথে চলেছে। সেই মুক্তার মালায় প্রধান মুক্তা হিসেবে ফিট করা হচ্ছে ভারতকে। অন্যদিকে ভারত ইন্ডিয়ান ওশানে নিজস্ব আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন্স প্রভৃতি দেশকে নিয়ে এই মুক্তার মালা গাঁথার চেষ্টা করছে আমেরিকা। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষে বাংলাদেশের জড়িত হওয়া উচিত হবে না। ঢাকাকে এ ব্যাপারে পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।
ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী, এটি যেমন চরম সত্য তেমনি একথাও চরম সত্য যে, চীন ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে উত্থিত হয়েছে। এবং আগামীতে রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবেও উত্থিত হতে যাচ্ছে। এতোদিন পর্যন্ত চীনের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কোনো ইচ্ছা বিশ্ববাসীর কাছে দৃশ্যমান হয়নি। কিন্তু চীনকে যখন আমেরিকা ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে, তখন চীনকেও তার মিত্রের সন্ধান করতে হচ্ছে। এমন একটি পর্যায়ে চীনের বাড়িয়ে দেয়া বন্ধুত্বের হাতকে যদি বাংলাদেশ শক্ত করে ধরে তাহলে সেই বন্ধুত্ব অত্যন্ত মজবুত হবে এবং সেই বন্ধুত্ব থেকে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশ পেতে পারে। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানটি এমন যে এখন আমেরিকা, চীন এবং ভারত সকলের কাছেই বাংলাদেশের কদর দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন যেটি বাংলাদেশের প্রয়োজন সেটি হলো, একটি কৌশলী পররাষ্ট্র নীতি যেখানে থাকবে না কোনো বিশেষ দেশের প্রতি একক নির্ভরতা। সকলের সাথেই বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়- পররাষ্ট্র নীতির এই মূল সুর যেন আমাদের বিদেশ নীতিতে বর্ণে বর্ণে প্রতিফলিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।