Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যক্ষ্মারোগ : প্রতিরোধ ও প্রতিকার

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৭ এএম

যক্ষ্মা বা টিবি নামক মারাত্মক রোগটির সাথে সবাই কম-বেশি পরিচিত। যক্ষ্মাকে ক্ষয়রোগও বলা হয়। ২৪শে মার্চ-বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। বিশ্বের একটি জটিল সংক্রামক ব্যাধি হচ্ছে যক্ষ্মা। কোন এক সময় মানুষের ধারণা ছিল, ‘হয় যদি যক্ষ্মা নাই তবে রক্ষা।’ এখন এ ধারণাটির আর কোন ভিত্তি নেই। কারণ তখন যক্ষ্মা বা টিবির রোগ-জীবানু সম্পর্কে চিকিৎসকদের কোন ধারণা ছিল না। এর ফলে এ ব্যধিটি প্রতিকারের কোন পন্থা তাদের জানা ছিল না। বর্তমান যক্ষ্মার রোগ-জীবানু আবিস্কারের সাথে সাথে এটি নিরাময়েরও ঔষধ বের হয়েছে। যক্ষা বা টিবি’র রোগ-জীবানু শ্বাসের সাথে শ্বাসনালীর সাহায্যে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এ রোগটি সংক্রামিত হয় মাইকোব্যাকটেরিয়াম টুবরবিউলোসিস নামক অতি ক্ষুদ্র জীবানুর মাধ্যমে। এই জীবানু বাতাসে অনেক সময় ধরে জীবিত থাকতে পারে। আমরা অনেকে মনে করে থাকি, যক্ষ্মা বা টিবিতে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির পাশে বসলেই যক্ষ্মা হয়ে যায়। কিন্তু এ রোগটি এভাবে কখনও সংক্রিমিত হয় না। এটি সংক্রমিত হয় যক্ষ্মা রোগীর হাঁচি, কাশি, কফ,মল-মূত্র ইত্যাদি দ্বারা। এছাড়াও যক্ষ্মা রোগের জীবানু বদ্ধ, স্যাঁতস্যাঁতে ও জনাকীর্ণ পরিবেশে খুব দ্রুত রোগ বিস্তার করে থাকে। যে কোন সময় যে কোন বয়সের মানুষ এ রোগের কবলে পড়তে পারে। যক্ষ্মার জীবানু মানুষের দেহে প্রবেশের কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছরের মধ্যে এ রোগের প্রকাশ ঘটে। সাধারণত দরিদ্র লোকদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে।

কফ এবং কাশি হচ্ছে ফুসফুস যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ। প্রাথমিক অবস্থায় কাশি, কফ এবং সামান্য জ্বর দিয়ে ব্যাধিটির শুরু হয়। ধীরে ধীরে আরো নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন-খাবারে অনীহা, শরীরের ওজন অল্প অল্প করে হ্রাস পাওয়া, বিষাদগ্রস্ততা, মাঝে মাঝে রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া ইত্যাদি। কোন কোন যক্ষ্মা রোগীর কফ বা কাশির সঙ্গে রক্ত নির্গত হয়। কফের সাথে যে রক্ত বের হয় তা খুব বেশি লাল হয়ে থাকে। যক্ষ্মা রোগীদের রোগের শুরুতে যে জ্বর হয় তা সাধারণত বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে থাকে কিন্তু সকালের দিকে আর রোগীর জ্বর থাকে না। কোন ব্যক্তির কাশি যদি দুই থেকে তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় স্থায়ী হয় তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে। এ রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা গেলে সুষ্ঠু চিকিৎসার দ্বারা যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভাল করা সম্ভব। যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সাধারণত কফ পরীক্ষা করে থাকেন। কফের সাথে যক্ষ্মার জীবানু পাওয়া গেলে তারা এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত হন। যক্ষ্মার জীবানু খুব দ্রুত সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, কফ, থুথু থেকে নির্গত জীবানু সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দেহে প্রবেশ করে যক্ষ্মা রোগটি সংক্রমিত করে থাকে। এছাড়াও রোগটি ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দ্বারা যক্ষ্মা সংক্রমিত হয়।

যক্ষ্মা বা টিবি হলে এখন আর আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। ডাক্তার এবং রোগীর সমন্বিত প্রচেষ্টা দ্বারা যক্ষ্মার হাত থেকে রোগীকে মুক্ত করা সম্ভব। এ ব্যাধিটির চিকিৎসককে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি রোগীর ধৈর্য ধরে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অন্যান্য ব্যাধির চিকিৎসার চেয়ে যক্ষ্মার বা টিবি’র চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদী হয়ে থাকে। ৬ মাস, ৯ মাস, ১২ মাস, এবং ১৮ মাস পর্যন্ত ও এর চিকিৎসা হয়। চিকিৎসককে রোগীদের এ রোগ সম্পর্কে ভাল করে ধারণা দিতে হবে, যাতে তারা ভীত বা আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে গ্রহণ করে। অনেক রোগী কিছু দিন ঔষধ সেবন করার পর একটু সুস্থ হতে শুরু করলে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এ কাজটি করলে রোগীর য²া বা টিবি ভয়াবহ আকার ধারণ করে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্ট টিবির দিকে মোড় নেয়। ডাক্তার যখন রোগীকে প্রেসক্রিপশন দেবেন তখন রোগীকে খুব ভাল করে ঔষধ সেবনের নিয়ম বুঝিয়ে দিতে হবে। কখনও কখনও ঔষধ খাবার পর রোগীর দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে, সেক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। য²া রোগীদের হাঁচি এবং কফের দ্বারা দ্রুত জীবানু সংক্রামত হয়। তাই সুস্থ ব্যক্তিদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়াও সুস্থ ব্যক্তিদের যে সকল বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে তাহল-বদ্ধ ঘরে থাকা যাবে না।

আলো-বাতাসযুক্ত জায়গায় বসবাস করতে হবে। যে সমস্ত টিবি রোগীর কফের সাথে টিবি’র জীবানু রয়েছে তাদের যেখানে সেখানে কফ ফেলা পরিহার করতে হবে। এ সকল রোগীর অবশ্যই করণীয় যেটা সেটা হচ্ছে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।

উপযুক্ত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যক্ষ্মার চিকিৎসা পদ্ধতি খুব বেশি ব্যয় বহুল নয়। এ রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়ের একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে পূর্ণমেয়াদে ঔষধ সেবন করা । তাই অবহেলা না করে সঠিক নিয়মে কয়েক মাস বিরতিহীন চিকিৎসা গ্রহণ ও ঔষধ সেবন করতে হবে। তবেই সকল মানুষকে যক্ষ্মা বা টিবি’র অভিশাপ থেকে রক্ষা করা সম্ভবপর হবে।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যক্ষ্মারোগ
আরও পড়ুন