পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা নিরসন ও দারিদ্র্য বিমোচনে নানাবিধ উদ্যোগের পাশাপাশি এবার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কটিকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক হিসেবে চারলেনে উন্নীত করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। বিশেষত, সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল রোড কানেক্টিভিটির আওতায় ভারত-নেপাল ও ভূটানের সাথে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের সামগ্রিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত ১২৮৯৪ কোটি টাকার ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ঢাকা-রংপুর হাইওয়ে চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অন্যতম। সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন ফান্ড (সাসেক) এর আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এসব প্রকল্পে সহায়তা হিসেবে ৯ হাজার ৫২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকার যোগান দেবে, বাংলাদেশ সরকার ৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকার ব্যয় বহন করবে বলে একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পপনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন। ১৯০.৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এর গতিপথ টাঙ্গাইলের কালিহাতি, সিরাজগঞ্জ সদর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, বগুড়া সদর, শেরপুর ও শিবগঞ্জ, সাদুল্লাপুর উপজেলা, পিরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলাকে সংযুক্ত করবে বলে জানা গেছে। এই চারলেন মহাসড়ক দিয়ে বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত ও নেপালের সাথে এবং বুড়িমারি দিয়ে ভারত ও ভূটানের সাথে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ প্রক্রিয়া সহজতর হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের অনুন্নত অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে।
লক্ষণীয়, এখনো বাস্তবায়নাধীন দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিগণিত প্রধান জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৯০.৪৮ কিলোমিটার চারলেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি কয়েক দফা সময় ও ব্যয়বৃদ্ধির পর ব্যয় ৩ হাজার ৮১ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ২১শ’ কোটি টাকা। আর প্রায় একই দৈর্ঘের ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের শুরুতেই প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে ১১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ ব্যয়বৃদ্ধির পর ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারে নির্মাণব্যয় যেখানে ২০ কোটি টাকা সেখানে ঢাকা-রংপুর প্রকল্পের ব্যয় শুরুতেই দাঁড়াচ্ছে ৬২.৫৩ কোটি টাকা। উভয় মহাসড়কেই অনেকগুলো ওভারপাস, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যয়বৃদ্ধির কথা বলা হলেও বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরীতে শ্রমিক নিয়োগের সুবিধা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ব্যয়ে মহাসড়ক নির্মাণের রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। একদিকে সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারা অন্যদিকে নানা অজুহাতে প্রকল্পব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জাতির ঘাড়ে অস্বাভাবিক ঋণের ভার বাড়িয়ে তুলছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি এবং আভ্যন্তরীণ অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়না। তবে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশের সারিতে অবস্থান করেও অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে অবস্থানের কোন যৌক্তিক কারণ নেই। এক জরিপে দেখা যায়, ভারতে ও চীনে প্রতিকিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১০ কোটি টাকা, ইউরোপে ২৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশে ৫৪ কোটি টাকা। অথচ প্রকল্পের কাজের মানের ক্ষেত্রে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৯ম স্থানে রয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বে সর্বোচ্চ হারে টাকা খরচ করে আমরা নিম্নমানের অবকাঠামো নির্মাণ করছি।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের যথাযথ মান বজায় রাখতে না পারার অন্যতম কারণ হতে পারে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি। যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এবং নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রকল্পব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ফোরলেন প্রকল্প। ২০০৬ সালে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের পর ২০১১ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অদ্যাবধি এই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়নি। এই অস্বাভাবিক দীর্ঘসূত্রতার জন্য একদিকে ২ হাজার ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প ৩ হাজার ৮৮১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, অন্যদিকে এক দশকের বেশী সময় ধরে এই রুটের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনকারীরা নানাবিধ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা যায়, চারলেন প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক সময় ক্ষেপণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ সমুদয় প্রকল্পব্যয়ের চেয়ে বহুগুণ বেশী। এডিপি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়গুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতায় সরকারের শীর্ষ মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনার পরও অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। ঢাকা-রংপুর হাইওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেন ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে প্রকল্পের মত না হয়, সেদিকে আগেই প্রয়োজনীয় নজরদারি থাকতে হবে। সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং কাজের মান রক্ষায় কোন রকম আপস করা চলবেনা। এমনকি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণের মাঝপথে এবং পরে বড় ধরনের নির্মাণ ত্রুটি ও শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে। অতীতের এসব অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকা-রংপুর চারলেন হাইওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।