বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
খুলনার উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ভরা জোয়ারে বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন। যে কোনো সময় পানির তোড়ে দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যেতে পারে। ভেসে যেতে পারে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও কয়েক হাজার মৎস্যঘের। পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার আশ্বাস দিয়েও যথাসময়ে বাঁধ মেরামত না করায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত বছর ৩ জানুয়ারি উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছিলেন, বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণে ১২ হাজার কোটি ৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন ২০২১ এর বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে। একই বছর ১৪ জুলাই পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম রাজধানীতে ‘উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে জরুরি করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বলেছিলেন, আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণের চারটি প্রকল্প শেষ হবে। বাস্তবতার সাথে তাদের আশ্বাসের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বছরও বর্ষায় চরম বিপাকে পড়তে হবে উপকূলের হাজার হাজার মানুষকে। সূত্র জানায়, ষাটের দশকে বাঁধগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে বাঁধ মেরামত করা হলেও তা টেকসই হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর মেরামত ও সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ এনে তা ভাগ বাটায়ারা করে নেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তাদের এ সিন্ডিকেটে রয়েছে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। চিংড়ি চাষের নামে বাঁধ কেটে মৎস্যঘেরে পানি ঢোকানোর কারণেও বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ ঝড় জলোচ্ছাস বা ভরা জোয়ারে সহজেই পানি ঢুকে পড়ে উপকূলীয় জনপদে। এবারও গত কয়েকদিন ধরে জোয়ারে পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি স্থানে পানি ঢুকে গিয়েছে, কয়েকটি স্থানে যে কোনো মূহুর্তে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে দিন কাটছে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বাগআচঁড়া ও বাদুরগাছা গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের। মঙ্গলবার দুপুরে তেলিগাতি নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে তাদের। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। দুর্বল হয়ে যাওয়া গ্রামরক্ষা বাঁধের কোনো কোনো স্থান ভেঙে যায়। আবার কোথাও কোথাও বাঁধের ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি গ্রামে প্রবেশ করে। উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের বাগআঁচড়া ও বাদুরগাছা গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসতি। এ গ্রামের দুটি বিলে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বিলে রয়েছে ছোটবড় কয়েকশ মৎস্য ঘের। উপজেলার খর্ণিয়া বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, কদমতলা বাজার, শিবপুর গ্রামসহ বেশকিছু এলাকায় চলতি পূর্ণিমা গোনে অস্বাভাবিক ভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে।
বাগআঁচড়া গ্রামের বাসিন্দা সুকান্ত সরদার বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের গ্রাম রক্ষা বাঁধ একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে এখন মাত্র এক থেকে দেড় ফুট টিকে আছে। কিন্তু তার ওপর দিয়েই জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শোভনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল গণি বলেন, ‘প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র-বৈশাখ মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার গোনে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায়। সোম ও মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারে বাগআঁচড়া বাদুরগাছা এলাকার তেলিগাতি নদীর পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে যায়।
জেলার পাইকগাছার কাটিপাড়া নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের ভাংগনে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়- ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারের পানিতে নদের তীরবর্তী এলাকায় মৎস্য, চিংড়ি ঘের, পানের বরজ, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাড়ি ঘর ও রাস্তা ঘাট। স্থানীয় চিংড়ি ঘের মালিক রমজান আলী জানান, এখানে রয়েছে ১২টি চিংড়ি ঘের। যার জমির পরিমান প্রায় ৪শ’ বিঘা জমি। আগামীতে অমাবস্যাতে সকলেই মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার আগেই এ অবস্থার সৃষ্টিতে চরম ক্ষতি হয়েছে তাদের। তার ঘের তলিয়ে যেয়ে ৫/৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলতি পূর্ণিমার গোনে নদ-নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে কোনো কোনো স্থানে বাঁধের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে পড়ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাঁধ মেরামত করে উচ্চতা বৃদ্ধি করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।