Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক লোন ও মহাজনদের সুদের টাকা পরিশোধের চিন্তায় কাটে নির্ঘুম রাত

বানের পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের ৪০ লাখ টাকার মাছ

প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আরিচা সংবাদদাতা
সর্বনাশা বন্যায় সবকটি পুকুরের সকল মাছ ভেসে যাওয়াতে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার রানীনগর গ্রামের প্রান্তিক মৎস্য চাষি ভজন চন্দ্র হালদার পথে বসেছে। সে এখন শুধু সারাদিন ফ্যাল ফ্যাল করে পুকুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রতিদিন পুকুর পাড়ে এসে এই যে তার বসে থাকা তা যেন আর শেষ হয় না। ভজনের ১৩টি পুকুরের সকল মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বন্যায়। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুকুরের পাড়। এতে তার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ব্যাংক লোন ও মহাজনদের নিকট থেকে সুদে টাকা ধার নিয়ে মাছ চাষ করেন ভজন। একদিকে ধার করা টাকার চিন্তা অপরদিকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভজনের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কেউ কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে চোখের পানি ছেড়ে দেয় ভজন। সর্বনাশা বন্যায় ভজনের মেরুদ- ভেঙ্গে দিয়েছে। ভবিষ্যৎ সুখ স্বপ্নের আশা ধুলিৎসাত করে দিয়েছে বন্যায়। এখন তার পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। জানা গেছে, হতদরিদ্র ভজন চন্দ্র হালদার এক সময় তার পৈত্রিক পেশা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রতিদিনের আয় দিয়ে সংসার চালিয়ে কিছু কিছু করে পয়সা জমা করতে থাকে। এভাবে সে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এক সময় তিল থেকে তাল বানায়। দিন এনে দিন খাওয়া এ অবস্থা থেকে সংসারের কিছুটা পরিবর্তন ঘটায়। এরপর আরো ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। সেই স্বপ্নকে সামনে রেখে ভজন চন্দ্র হলদার প্রথমে তার নিজস্ব পুকুরে মাছের চাষ করেন। এতে তার প্রতিবছরই ভাল লাভ হয়। কিছু দিন পর তার পৈত্রিক পেশা মাছ শিকার করা ছেড়ে দেয় সে। মৎস্য চাষের সাথে ভজন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি তার  কাজে সহযোগিতা করার জন্য  আরো ৪/৫ জন লোকও খাটে। পুকুরের পিছুনে সবসময় সময় দিতে হয় তাদেরকে। এতে কয়েকজন লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। বিগত ২০ বছর ধরে ভজন চন্দ্র হলদার মাছের চাষ করে বেশ সফলতা অর্জন করেছেন। এ সফলতায় তাকে আরো উৎসাহিত করে তোলে। এরই ফল স্বরূপ এবার সে তার মাছ চাষের আরো বিস্তৃতি ঘটান। এবছর তার নিজের ও অন্যের লিজ নেয়া পুকুরসহ মোট ১৩টি পুকুরে মাছের চাষ করেন। এর মধ্যে তার বেশির ভাগ পুকুরই লিজ নেয়া। এতে তার খরচ হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। ব্যাংক লোন, মহাজনদের নিকট থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে এবং জীবনের সঞ্চিত সকল অর্থ বিনিয়োগ করে মাছ চাষে। আরো বেশি লাভের আশায় ভজনের এ বিনিয়োগ। অবশ্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত না হলে তার এবার অন্তত ১৫/২০ লাখ টাকা আয় হতো। প্রবাদে আছে কানার ভাগ্যে কখনও ধন মিলে না এরই বাস্তবতায় ভজনের বেলায় বিধি বাম সাধে। তার সকল স্বপ্ন ও আশা ভেঙ্গে চুরমার করে দিল সর্বনাশা বন্যায়। সবগুলো পুকুরের পাড় ভেসে যায় বন্যার পানিতে। ভেঙ্গে বা ধসে যায় অনেক পুকুরের পাড়। এসময় তার চাষ করা পুকুরের সমস্ত মাছ বন্যার পানির সাথে ভেসে যায়। এতে তার প্রায় ৪০/৪৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। এমতাবস্থায় তার পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। ভজন চন্দ্র হালদার এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রতিবছর আমি বন্যার আগেই পুকুরের মাছ বিক্রি করে দেই। অন্যান্য বছর সাধারণত বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে বন্যা হয়। কিšুÍ এ বছর হঠাৎ করে বর্ষার প্রথমেই বন্যা শুরু হয়। যদি জানতাম এভাবে বন্যা হবে তাহলে আগেই মাছ বিক্রি করে দিতাম। তাহলে হয়তো এরকম ক্ষতি আমার হতো না। এবারের বন্যায় আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা মনে হয় আমার বাকি জীবনে পুশিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারিভাবে যদি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে হয়তো মৎস্য চাষে ফিরে যেতে পারবো।  তা না হলে আর আমি মাছ চাষ করতে পারবো না। জীবন বাঁচানোর তাগিদে পূর্বের পৈত্রিক পেশায় ফিরে যেতে হবে। তানা হলে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের রানীনগর গ্রামে ভজন চন্দ্র হালদারের বাাড়। পৈত্রিক পেশা মাছ শিকার করা। স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে  ভজনের  ৪ জনের সংসার। ছেলে সবার ছোট, তাই তিনিই একমাত্র সংসারের আয়ের উৎস। মাছ চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছিল ভজন। কিšুÍ বিধি বাম তাই তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারল না। ভজন চন্দ্র হালদার এবার ছোট বড় মোট ১৩টি পুকুরে মৎস্য চাষ করে। এর মধ্যে ১২টি পুকুরই মাছ চাষের জন্য এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে নগদ টাকা অগ্রিম দিয়ে পুকুরগুলো ইজারা নেন। তার জীবনের সঞ্চিত সকল টাকা, ব্যাংক ঋণ ও মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে মোট ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন মাছ চাষে। ক্ষতিগ্রস্ত না হলে  এতে তার প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকা আয় হতো। কিন্তু সুখ কপালে সইলো না। সর্বনাশা বন্যায় কেড়ে নিল সকল সুখ ও স্বপ্ন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক লোন ও মহাজনদের সুদের টাকা পরিশোধের চিন্তায় কাটে নির্ঘুম রাত
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ