Inqilab Logo

রোববার, ০২ জুন ২০২৪, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা

সংবাদ সম্মেলনে লবণচাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২১, ৭:৪৬ পিএম

প্রান্তিক লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কক্সবাজার লবণচাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ।বুধবার (৩০ মার্চ) কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তুলে প্রান্তিক লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

কক্সবাজার লবণচাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ বিকেল ৩টার দিকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ইতোপূর্বে সকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

স্মারকলিপি ও সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে অপ্রয়োজনীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানি বন্ধ করে দেশীয় লবণ শিল্পের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সরকারি কৌশলী এডভোকেট মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা লবণচাষী ও লবণ ব্যবসায়ীরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

লবন সংগ্রাম পরিষদ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলে বলেন, যে লবণের দাম চাষীরা পাচ্ছেন মণ প্রতি মাত্র ১৩০ টাকা, কেন সেই লবণ প্যাকেটজাত করার পর বিক্রি করা হচ্ছে মণ প্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা করে।

তিনি বলেন, কক্সবাজার ও বাঁশখালীর কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৫৭,২৭০ একর জমিতে লবণ চাষ হয়ে থাকে। এই লবণ চাষের সাথে প্রায় ৫৫ হাজার লবণচাষী জড়িত রয়েছেন। এখান থেকে উৎপাদিত লবণই সারা দেশের ১৮ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

এছাড়াও লবণের উপর বিভিন্ন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন আরও ৮০ শতাংশ মানুষ। ফলে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন, যাদের অন্য কোন পেশা নেই।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর লবণ শিল্প রক্ষার লক্ষ্যে একটি লবণনীতি প্রণয়ন করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যার ফলে লবণ অধ্যুষিত এলাকার চাষী ও ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু একটি ‘লবণ সিন্ডিকেট’ বারবার বিদেশী লবণের উপর দেশকে নির্ভরশীল করে দেশে তৈরি লবণকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল।

তখন ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে অপ্রয়োজনে এক মুঠো লবণও আমদানি করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ঘোষণার পর দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর লবণের মূল্য স্থিতিশীল ছিল।

তিনি আরো বলেন, ‘২০১৯ সালে তৃতীয়বার বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অসাধু ব্যবসায়ীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠে। ভোজ্য লবণ আমদানিতে বিধিনিষেধ থাকায় সেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানির নামে অসাধু প্রক্রিয়ায় অনুমতি আদায় করে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ আমদানি করতে থাকে।

তারা প্রতারণা করে সেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণকে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করতে শুরু করে। এই সুযোগে মিল মালিকরা দেশীয় লবণ ক্রয় বন্ধ করে দিয়ে বিদেশী লবণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর মাঠে উৎপাদিত দেশীয় লবণ অবিক্রীত অবস্থায় মাঠেই পড়ে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের উপর ৩৪% (শতাংশ) শুল্ক আরোপ করা হয়। সেই ৩৪% (শতাংশ) শুল্ক আদায় করে প্যাকেটজাত করতে খরচ পড়ে প্রতি কেজিতে ১৪/- টাকা। কিন্তু দেশীয় লবণ ঘাটতিসহ প্যাকেটজাত করতে প্রতি কেজি লবণে খরচ পড়ে ১৮/- টাকা। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় লবণের চেয়ে অস্বাস্থ্যকর ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণ বাজারজাত করে একদিকে মানুষের স্বাস্থ্যহানি করছে, অপরদিকে দেশীয় লবণ শিল্প ধ্বংস করে পুরো দেশকে বিদেশী লবণের উপর নির্ভরশীল করে তুলছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, অদ্যাবধি দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের প্রকৃত চাহিদা কতো তা নিরূপণ করা হয়নি। যার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করে যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে স্বাস্থ্যকর দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, মনে করেন কক্সবাজারের লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার লবণচাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মকছুদ আহমদ, পেকুয়ার উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ কলিম উল্লাহ কলি, হাসান আবেদীন চৌধুরী, জামিল ইব্রাহিম, সিরাজুল মোস্তফা, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জাফর আহমদ চৌধুরী, আকতার উদ্দিন বাবুল, আনিসুর রহমান, মোহাম্মদ সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ, শফিকুল হায়দার, রেজাউল করিম প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ