Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। সাধারণ মানুষ তাদের জান মালের নিরাপত্তাজনিত কারণে অসহায় পড়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের আপামর জনসাধারণ নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও শংকিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনি অনেকটা দেখেও দেখেনা, শুনেও শুনে না বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধ বাড়ছে, অপরাধী সর্বদাই সক্রিয় রয়েছে। যাদের দায়িত্ব অপরাধ প্রতিহত করা, অপরাধীদের দমন করা, তারা তা যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না। অপরাধ প্রবণতা এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, কে কখন কিভাবে আক্রান্ত হবে, কার সম্পত্তি কে দখল করবে, কে কখন লাঞ্চিত হবে, কে কখন অপহরণ হবে এ আশংকায় সাধারণ মানুষের উদ্বেগের শেষ নেই।

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতদূর অবনতি হয়েছে তা বুঝতে পান্ডিত্য বা বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না। দেশে রয়েছে, একটি গণতান্ত্রিক সরকার। বিধিবদ্ধ আইনের আশ্রয়ে চলছে প্রশাসন। তাদের সহযোগিতায় আছে পুলিশ বিভাগ। অথচ প্রাণহানি, খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন থেমে নেই। প্রকাশ্যে জনবহুল এলাকায় চলছে অস্ত্রের মহড়া, ছিনতাই, রাহাজানি এবং খুন। রাজপথে বসছে বাজার, ফুটপাত দেওয়া হচ্ছে লিজ, রাজপথের উভয় পার্শ্বে যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড, এগুলো সরাবার উদ্যোগ তো নেই-ই বরং দৈনিক, সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। এখানে চাঁদাবাজ কারা, কে তাদের দেখবে, কে গ্রেফতার করবে, বিচার করবে কে ? যারা করবে তাদের অনেকেই এসব অপরাধে জড়িত বলে সাধারণ মানুষের ধারণা।
অপরাধীদের এত বেপরোয়া হয়ে যাওয়ার কথা নয়। দেখা যায়, বারবার পুুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অপরাধীরা তাদের কাজ হাসিল করে পার পাচ্ছে। পুলিশ তাদের খোঁজও পাচ্ছে না। কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা একান্তই প্রয়োজন। ব্যর্থতার কারণ কি তা নিয়ে কোন সরকারী ব্যাখ্যা সাধারণত পাওয়া যায় না। আমাদের মত দেশে বিভিন্ন শহর ও জনপদে যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যদি লাগাতার অভিযান চলে, শান্তি নিশ্চিত হয় তাহলে তারা অপরাধ জগৎ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। বেপরোয়া হয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে না।
দেশের সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলাজনিত স্বাভাবিক পরিবেশ ও সুষ্ঠু পরিস্থিতি। অথচ সেরূপ পরিস্থিতির নিশ্চয়তার জন্য প্রচেষ্টা কি চালানো হচ্ছে? যদি হয়ে থাকে তবে ফলাফল কোথায় ? দেশের জনগনকে সকল শক্তির-সকল ক্ষমতার উৎস বলা হলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের আশ্রয় দেওয়া হয়। জুলুম ও জালেমকে যেখানে আমাদের ঘৃণা করা উচিত সেখানে তারা বহাল-তবিয়তেই থাকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঐক্যবদ্ধ সামাজিক প্রতিরোধ আর শাস্তির কঠোর বিধানই সন্ত্রাসের একমাত্র জবাব। একথা অবশ্য আমরা মাঝে মধ্যে বলে থাকলেও কার্যক্ষেত্র তার প্রতিফলন ঘটাতে পারি না। ন্যায় ও নীতির অনুসরণে আইনের প্রতি আস্থাশীল জনসাধারণ সহযোগী শক্তিতে পরিণত হয়।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে এবং ব্যবস্থা গ্রহণে সময়ক্ষেপণ করা হলে প্রতিকার পাওয়া যায় না। অপরাধীরা আরও দুঃসাহসী ও শক্তিশালী হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। তাই উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। পরিস্থিতিকে সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়া প্রজ্ঞার পরিচায়ক নয়। জনগণকে যতই অসহায় মনে করা হোক না কেন, জনগণই ক্ষমতার উৎস। জনগণের শক্তি অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে যে নৈরাজ্য নেমে আসে তা কারো জন্য কল্যাণকর হতে পারে না-এমন নজির ইতিহাসে রয়েছে। কোন শক্তিধর ব্যক্তি বা গোষ্ঠীই গণজোয়ার ঠেকাতে পারেনি এবং পারবেও না। গণশক্তিকে ভাল রাখাই নেতৃত্বের পরিচয়।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপরাধ-দমন
আরও পড়ুন