পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (৭৪) আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৪ টায় রাজধানী ঢাকার মহাখালী শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন। মুফতি ওয়াক্কাসের ইন্তেকালের খবরটি নিশ্চিত করেছেন রাজধানীর গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের নামাজে জানাজা আজ বাদ মাগরিব তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইমদাদিয়া মনিরামপুর যশোরে অনুষ্ঠিত হবে। মুফতি ওয়াক্কাস যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার বিজয়রামপুর গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
মরহুম মুফতি ওয়াক্কাস তিন-তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একবার ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও হুইপের দায়িত্ব পালন করেছেন। আরও মজার তথ্য হলো, প্রত্যেকবারই তিনি এমপি হয়েছেন এমন সময়, যখন তার দল কিংবা জোট ক্ষমতায়। তার নিজের কোনো গাড়ী নেই, ঢাকায় কোনো বাড়ি, প্লট কিংবা ফ্ল্যাট নেই। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দেওবন্দী ধারার আলেম ও মুফতি। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় যে কয়জন নেতা কারাবরণ করেছেন তিনি তাদের অন্যতম। তিনি একজন সাহসী অভিভাবক, বিদগ্ধ শায়খুল হাদিস ও শিক্ষাবিদ। মেধাবী, সৎ, স্পষ্টভাষী এবং অত্যন্ত আশাবাদী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং দেওবন্দী আদর্শে বিশ্বাসী আলেম। হক ও হক্কানিয়্যাত তার ধ্যানজ্ঞান। এমপি হিসেবে তিনি ছিলেন সব ধরনের লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে। এমপিদের বিরুদ্ধে কত রকমের অভিযোগ থাকে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে কখনও কোনো অভিযোগ উঠেনি। এমনকি তার সময়কার অনেকে এমপি দুর্নীতির দায়ে জেল খেটেছেন, সম্পদের হিসাব নিয়ে বিভিন্ন অফিসে হাজিরা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে মুফতি ওয়াক্কাস ব্যতিক্রম। তাকে এসব স্পর্শ করেনি। তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে রয়েছে তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু। শিক্ষাজীবনে তিনি যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তার রীতিমতো বিস্ময়কর। মাদরাসা বোর্ড থেকে দাখিলে (১৯৬৫) সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৩য়, আলিমে (১৯৬৭) সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১ম, ফাজিলে (১৯৬৯) মাদরাসা বোর্ডে প্রথম শ্রেণিতে মেধা তালিকায় ৩য় ও কামিলে (১৯৭১) মাদরাসা বোর্ডে প্রথম শ্রেণিতে মেধা তালিকায় ৩য় স্থান অর্জন করেন। দাখিল পরীক্ষার অবসরে মাত্র ৩ মাসে কোরআনে কারিম হিফজ করেন। ১৯৭২ সালে মণিরামপুর মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করেন।
এরপর মুফতি ওয়াক্কাস তার মুরুব্বি ও মুর্শিদ হজরত মাওলানা তজম্মুল আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহির নির্দেশে দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন ও সেখানে ৪ বছর অধ্যায়ন করেন। ১৯৭৩ সালে ১ম বিভাগে মওকুফ আলাইহি, ১৯৭৪ সালে দাওরায়ে হাদিস (মেধা তালিকায় ৪র্থ), ১৯৭৫ সালে তাকমিল দ্বীনিয়াত (মেধা তালিকায় ১ম) ও ১৯৭৬ সালে ইফতা (মেধা তালিকায় ১ম) শেষ করে মুফতি সনদ লাভ করেন। সময়ের হিসেবে তিনি দেওবন্দে পড়াশোনার সময় শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও শিক্ষকদের পেয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি শায়খ তজম্মুল আলী (রহ.)-এর হাতে বায়াত হন এবং ১৯৮৪ সালে খেলাফত লাভ করেন। মরহুম মুফতি ওয়াক্কাসের ইন্তেকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার পৃথক পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ এবং মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদন জ্ঞাপন করেছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র সহসভাপতি শাইখুল হাদিস মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম মরহুমের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, মরহুম মুফতি ওয়াক্কাসের লাশ দাফনের জন্য ঢাকা থেকে যশোর মনিরামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।