মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যদিও ব্রিটেনের রাজকীয় ডিক্রিগুলোতে লিপিবদ্ধ পর্তুগালের কৌশলটি উপকূলবর্তী স্পর্শকাতর স্থানগুলো নিয়ন্ত্রণ করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল, ব্রিটেন ভূগোলবিদ স্যার হালফোর্ড ম্যাকিন্ডারের ভ‚-রাজনীতি সম্পর্কিত পদ্ধতিগত গবেষণায় উপকৃত হয়েছিল, যিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, বৈশ্বিক শক্তির শীর্ষে অবস্থান করার মূল চাবিকাঠি হ’ল ইউরেশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং আরও বিস্তৃতভাবে, এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা নিয়ে গঠিত একটি ত্রি-মহাদেশীয় ‘আইল্যান্ড ওয়ার্ল্ড’-এর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
বিশ্ব শাসনকারী সাম্রাজ্যগুলো তাদের সময়কালে যতটা শক্তিশালী হয়ে থাকুক না কেন, আধিপত্যের খেলায় আমেরিকা আবিভর্‚ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো শীর্ষ শক্তিই ইউরেশিয়ার উভয় অক্ষপ্রান্ত পর্যন্ত তাদের বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের অন্তর্ভুক্ত করে রাখতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ওয়াশিংটন বিশে^র প্রথম মোড়ল হিসাবে তার প্রথম দশকগুলোতে বেশ আত্ম-সচেতনভাবে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল, যা ইউরেশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।
দশকের পর দশক ধরে স্তরে স্তরে বার্লিন প্রাচীর থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলের অসামরিক অঞ্চল পর্যন্ত ইউরেশিয়া জুড়ে বিস্তৃত সাম্যবাদকে ঠেকাতে ৫ হাজার মাইল জুড়ে সমরাস্ত্র এবং সামরিক ঘাঁটিগুলোর সমন্বয়ে একটি ক্রমবর্ধমান বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পরাজিত অক্ষ শক্তি জার্মানি এবং জাপান দখলের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ইউরেশিয়ার উভয় প্রান্তে বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র সামরিক ঘাঁটিগুলো কব্জা করে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, জাপানে আমেরিকা সুদূর উত্তরের মিসওয়া বিমান ঘাঁটি থেকে দক্ষিণে সাসেবো নৌঘাঁটি পর্যন্ত প্রায় ১শ’টি স্থাপনা দখল করে নেয়।
এর পরপরই ওয়াশিংটন চীনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এবং ১৯৫০ সালের জুনে কোরিয়ান যুদ্ধ শুরু হওয়ার দু’টি ধাক্কা খায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে এনএসসি-৬৮ নামক একটি মেমোরান্ডাম গৃহীত হয়েছিল, যা স্পষ্ট করে জানিয়েছিল যে, দেশটির বিশ্বশক্তির নেতৃত্ব লাভের মূল উপায় হবে কমিউনিজম বা সাম্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইউরেশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
মার্কিন নথিপত্র বলে, ‘সোভিয়েত প্রচেষ্টা এখন ইউরেশিয়া অঞ্চলের আধিপত্যের দিকে ধাবিত হয়েছে।’ এতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমেরিকাকে তার সামরিক বাহিনী আবারও প্রসারিত করতে হবে, যদি সম্ভব হয় তবে সোভিয়েত সম্প্রসারণ রোধ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আক্রমণাত্মকভাবে সোভিয়েত পদক্ষেপ বা সোভিয়েত-নির্দেশিত কার্যকলাপ বানচাল করে দিতে হবে’।
এ কৌশলগত মিশনের উদ্দেশ্যে ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে পেন্টাগনের বাজেট ১৩.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে চারগুণ হয়ে ৪৮.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। ওয়াশিংটন দ্রুত পশ্চিম জার্মানির বিশাল র্যামস্টেইন বিমান ঘাঁটি থেকে শুরু করে ফিলিপাইনের সুবিক বে এবং জাপানের ইয়োকোসুকার বিস্তৃত নৌ-ঘাঁটি পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ সামরিক স্থাপনার একটি বলয় তৈরি করেছিল। এ ধরনের ঘাঁটিগুলো ছিল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ইউরোপের উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) থেকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আমেরিকা পর্যন্ত জড়িত নিরাপত্তা চুক্তি এএনজেডউএস, যা ইউরেশিয়ার বিস্তীর্ণ প্রান্ত জুড়ে সংগঠিত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা বলয়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হিসাবে পরিচিত এশিয়ার মুখোমুখি কৌশলগত দ্বীপাঞ্চলগুলোর পাশাপাশি ওয়াশিংটন দ্রুত জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছে। ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বহমান রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যকার আয়রন কার্টেনের পাশাপাশি, ন্যাটো বিভাগের ২৫টি সক্রিয় বাহিনী সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন ১শ’ ৫০টি ওয়ারশ চুক্তির অন্তর্গত বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছে। উভয়ই পক্ষই আর্টিলারি, ট্যাঙ্ক, কৌশলগত বোমারু বিমান এবং পারমাণবিক-সশস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্রের সমর্থিত। সূত্র : দ্য নেশন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।