Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বার বার অডিও ফাঁস বিব্রত বিএনপি নেতাকর্মীরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশে যে কোন আন্দোলন গড়ে উঠলে কিংবা রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে হঠাৎ করেই ফাঁস হয় বিএনপি নেতাদের অডিও কথোপকথন। এর কোনটি দেশের নির্বাচনের সময়, আবার কোনটি হরতাল, আন্দোলনের সময়। যখনই কোন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেন তখন বিএনপি নেতাদের এমন কর্মকান্ডে সেই আন্দোলন ভন্ডুল হয়ে যায় বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ দলের একটি অংশ সরকারের সাথে যোগসাজোসে বার বার সরকার বিরোধী আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ভন্ডুল হয়ে যায়। তবে নেতাদের কেউ কেউ বলেন, সরকার নিজেরাই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কখনো সুপারএডিটিং, কখনো আবার অ্যাপস ব্যবহার করে বিএনপি নেতাদের নামে ভূয়া অডিও ছড়িয়ে দেন।

বিএনপির এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের নেতারা কি জানে না যে, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কল রেকর্ড করে? তারপরও কেন ফোনে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে। যে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই সেসব কথা কেন বলেন? তার মানে তারা নিজেরই চান না এই সরকারের পতন হন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন, সেটি মামলা কিংবা ব্যবসা রক্ষা যে কারণেই হোক।
স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অডিও ফাঁস হওয়ার পরই সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি কঠোর হয়। আবার সম্প্রতি হেফাজতের আন্দোলনের সময় নিপুণ রায় চৌধুরীর অডিও ফাঁস হওয়াতে আন্দোলনই ঝিমিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি এই আন্দোলনে সমর্থন কিংবা যুক্ত হয়ে বেগবান করার পরিবর্তে এক অডিও দিয়ে আন্দোলনের গতিই পরিবর্তন করে দিয়েছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, নানা সময় দেখা গেছে আন্দোলন, হরতালে গাড়ীতে আগুন দেয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। অনেক স্থানে হাতে নাতে ধরাও পড়েছে। কিন্তু আমাদের নেতাদের দু’একটি অডিওর কারণে পুরোদায়ভার নিতে হচ্ছে আমাদেরকে।
সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতালের সময় বাসে আগুন ধরিয়ে সেই ভিডিও পাঠাতে কেরাণীগঞ্জের স্থানীয় বিএনপি নেতা আরমানকে মুঠোফোনে নির্দেশ দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপুণ রায়। সেই নির্দেশনার অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এই অডিওকে কেন্দ্র করে হরতালে সহিংসতা সৃষ্টির জন্য প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়কে আটক করেছে র‌্যাব। অডিও ফাঁসের বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব জানায়, নিপুণ রায় চৌধুরী হেফাজতের রোববারের হরতালে তার দলীয় ক্যাডারদের গাড়ি পোড়ানোর নির্দেশনা দেন।
এই অডিও ফাঁস হওয়ার পর সরকার দল সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে উঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, বিএনপি আবারও আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তারা যেটি করেছে, তারা শতাধিক নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে ও আহত করেছে। এমনকি তাদের হাত থেকে শিশুরাও রক্ষা পায়নি। তারা কোন রাজনৈতিক দল নয়, বরং তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
বিএনপি নেতাদের অডিও ফাঁসের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে গতবছর ১২ নভেম্বর হঠাৎ করেই রাজধানীতে বেশ কয়েকটি স্থানে ৭টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার সময় বিএনপির দলীয় অফিসের সামনে গাড়ি পোড়ানোর পেছনে যুবদলের সম্পৃক্ততার কথা বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীকে টেলিফোনে অবহিত করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন। এ সংক্রান্ত একটি কথোপকথন সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আইএসআইয়ের এক কর্মকর্তার কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়। সেই অডিওতে খন্দকার মোশাররফ টেলিফোনে মেহমুদ নামে যে ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন, তার পুরো নাম শহীদ মেহমুদ মুহাম্মদ শরিফ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫৪তম লং কোর্সে তিনি কমিশন্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। পরে তিনি আইএসআইয়ে যুক্ত হন।
ওই নির্বাচনের সময়ই বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী) আসনের বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে সোনাইমুড়ি উপজেলা বিএনপির নেতা নুরুন্নবীর কথোপকথন ফাঁস হয়। অডিওতে নুরুন্নবী ফোন করে নিজের পরিচয় দিয়ে খোকনের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় মারামারি হবে জানিয়ে নুরুন্নবীকে লাঠিসোটা রেডি করতে বলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এই একই নির্বাচনের সময় পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা গোলাম মাওলা রনির থানা ঘেরাও করার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়।
২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হয়। ওই নেতা জনৈক নওমি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অডিও ক্লিপটি আন্দোলনের সপ্তম দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য বলেন। শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলনে বিএনপি দলীয়ভাবে সমর্থন দিয়েছিল। সে সময় অডিও ভাইরাল হওয়ার বিষয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা তো আন্দোলনে দলীয়ভাবেই তাদের সমর্থন দিয়েছি। কেউ যদি সহযোগিতা করতে চায়।
একই বছরের জুলাই মাসে রাজশাহী বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় বোমা হামলা নিয়ে জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর অডিও ফাঁস হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নিক্সন চৌধুরী কিভাবে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করেছে, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদার টাকা নিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কথোপকথোনসহ নানা সময়ে অডিও ফাঁস হয়েছে। কই বিএনপি তো এগুলোকে পুঁজি করে রাজনীতি করতে যায়নি। কারণ বিএনপির সাথে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন রয়েছে। এসব নোংরা, কুরুচিপূর্ণ রাজনীতি বিএনপির প্রয়োজন হয়না। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি বিএনপির একজন কর্মীরও কোন অডিও পায় সেটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এনে আলোচনা করে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ জনসমর্থনহীন হয়ে পরার কারণে বিএনপি ভীতিতে ভুগে। যে কোন আন্দোলন দেখলেই মনে করে গদি গেলো, তখন তারা এর দায় বিএনপির ওপর চাপাতে অডিও ফাঁস রাজনীতি শুরু করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশব্যাপী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছিল দেশের সাধারণ মানুষ। সেই আন্দোলনকে দমন করতে একদিকে তারা দমন, পীড়ন, গুলি চালানো শুরু করে। অন্যদিকে গ্রেফতার করেছে। আন্দোলনকে দমন করতেই সরকার এমনটি করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ