পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নতুন ধারার রাজনীতির মধ্যদিয়ে জন্ম হয়েছে বিএনপির। সীমান্ত হত্যা, ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে স্বল্প সময়েই দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে এক বিন্দুও ছাড় দেননি। তারা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বরাবরই ছিলেন সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। সীমান্ত হত্যা ছাড়াও, ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, ট্রানজিট, তিস্তা ইস্যুসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল দলটি। রাজপথে কর্মসূচিও পালন করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। একারণে ভারতবিরোধী জনসমর্থনও বিএনপির প্রধান ভোট ব্যাংকে পরিণত হয়।
ডানপন্থী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সাথেও দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্টতার কারণে বিএনপির প্রতিই তাদের আস্থা ছিল বেশি। তবে বিগত কয়েকবছর ধরেই দলটি তাদের এই অবস্থান থেকে দূরে সরে গিয়েছে বলে মনে করে নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে দিল্লির সাউথ বøককে ‘ম্যানেজ’ করে বিএনপিকে ক্ষমতায় নেয়ার দিবাস্বপ্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগলোতে দলটি নিরবতা পালন করছে। ডানপন্থী এই দলটি এখন বামপন্থীদের দিকে ঝুঁকে পরার কারণে ধীরে ধীরে ডানপন্থী ও ইসলামী দলগুলোর সাথে একদিকে যেমন দূরত্ব বাড়ছে অন্যদিকে জনসমর্থিত ইস্যুতে নিরবতার কারণে নিজ দলের মধ্যেই প্রশ্নে মুখে দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শুধুই আগ্রাসন কিংবা সীমান্ত হত্যা নয়, ভারত সংশ্লিষ্ট যে কোন ইস্যুতে দলের অবস্থান স্পষ্ট নয়। বিএনপি কী এখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনে পরিচালিত নাকি অন্য কারো আমরা নিজেরাই এ বিষয়ে অজ্ঞ। কোন বিষয়েই দলের কোন সুস্পষ্ট অবস্থান নেই। আমরা কি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের পক্ষে (ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী) অবস্থান নিয়েছি নাকি এর বিপক্ষে সেটাও আমরা জানি না।
সর্বশেষ সারাদেশে মোদীবিরোধী বিক্ষোভ ও আন্দোলনে বিএনপির নিরবতায় প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। তিনিসহ দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা মনে করেন মোদীবিরোধী বিক্ষোভে বিএনপির সরব হওয়া উচিত ছিল। তাদের মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে বাংলাদেশে যে রক্তপাতের সূচনা হয়েছে তা গৃহযুদ্ধের পূর্বাভাস। অথচ এই সময়ে নীরব বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে যে সহিংসতা হলো দেশের জন্য তা অশনিসংকেত। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর(অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, এই আন্দোলনকে আমি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরণ বলে মনে করি না। এটিকে অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মনোভাব। এই ধরণের আগমনের বিরুদ্ধে বিএনপিরও সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। তবে আমরা বিদেশি মেহমানদের উপস্থিতিতে কোন জ্বালাও পোড়াও দেখতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে একটি গৃহযুদ্ধের শুরু হয়েছে। এমন রক্তক্ষরণ জীবন হরণ আমরা কখনোই কামনা করি না। একটি অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি।
জনদাবি উপেক্ষা করলে সরকারের পরিণাম ভাল হবে না বলেও মনে করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো জঙ্গি আছে তা প্রমাণ করতে চায় তারা। আওয়ামী লীগ সরকারই ভালো কারণ তারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভালো অবস্থান নিয়েছে। এসব প্রমাণ করার জন্যই আমার মনে হয় সরকার এমন একটা সহিংসতা করছে।
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আজ্ঞাবহ দায়িত্বে আবদ্ধ। ভারত যাই করার করুক তারা আমাদের ঠিকমত পানি, ব্যবসা বা সীমান্তে যতই সমস্যা করুক না কেন আমি কোন পদক্ষেপই নিব না। তবে আমরাই যেন ক্ষমতায় থাকি, এ ব্যাপারে কোন কথা থাকতে পারবে না।
বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি এখন শীত নিদ্রায় আছে। জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়েও আমাদের ঘুম ভাঙাতে পারছে না। তিনি বলেন, একটি অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ সুযোগ পেলেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছে, প্রতিবাদ করছে। কিন্তু আমরা তাদের সাথে শামিল হতে পারছি না। জনগণের যে কোন আন্দোলন-ইস্যুতে বিএনপি বরাবরই কেন নিরব ভূমিকায় থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কারাগারকে ভয় পাচ্ছি। আমাদের সিনিয়র নেতারা কারাগারে যেতে চায় না। এজন্য আন্দোলন দেখলে আমরা দূরে থাকি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের দায়িত্বশীল নেতারা এখন যেভাবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান, এরকম হলে পৃথিবীর কোন দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো না, আগামীতেও হবে না। তবে আমরা নিরব থাকলেও জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যারাই সাথে থাকবে জনগণ আগামীতে তাদেরকেই বেছে নেবে।
জনসমর্থিত যে কোন আন্দোলন হলে দলের আন্দোলনমুখী নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব হয়ে উঠেন। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ধর্ষণ, হত্যা, গুম, খুন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বোগতিসহ সকল জনসমর্থিত ইস্যুতেই আন্দোলন প্রত্যাশা করেন বিএনপির কাছ থেকে।
বিগত কয়েকদিন ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতেও বিএনপির সরাসরি সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী। এ নিয়ে সরব হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
ছাত্রদলের বিগত কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী সর্দার আমিরুল ইসলাম লিখেছেন, থেমে থেমে প্রবাহমান আন্দোলন আমাদের জাতীয়তাবাদীদের জন্য যুগপৎভাবে আশা সঞ্চারিত করে ও আশঙ্কা তৈরি করে। শেখ হাসিনার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে মূলত ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ও বিক্ষুব্ধ বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিবর্গ। বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আমরা জাতীয়তাবাদীগণ যদি এখন থেকেই এই আন্দোলন যুক্ত নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে পারি তাহলে সামনের নির্বাচনের আগেই নতুন উষার আগমন ঘটবে। আর যদি না পারি তবে শেখ হাসিনা এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কিছুটা ছাড় দিয়ে, ক্ষমতার অংশীদার করে তার ক্ষমতা আরও প্রলম্বিত করবে।
হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করছি। প্রত্যেকটা সংগঠনের, প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার আছে প্রতিবাদ করা বা তার মত প্রকাশ করার। সেই মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যখন গুলি করা হয়েছে আমরা সেটার প্রতিবাদ করছি।
বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি আজ: ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে দুই দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে আজ ঢাকাসহ সকল মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকায় সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামীকাল ৩০ মার্চ জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল অথবা সমাবেশ করবে বিএনপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।