Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ববাণিজ্য পুনরুদ্ধারের পথে নতুন ধাক্কা সুয়েজ খাল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

কভিড-১৯ মহামারির ধকল সামলে বিশ্ববাণিজ্য কেবল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিস্তৃত হচ্ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এমন এক পরিস্থিতিতে সুয়েজ খালে ব্যাঘাত বিশ্ববাণিজ্যে নতুন করে ধাক্কা দিয়েছে। বৃহদাকার একটি জাহাজ সুয়েজ খালে আড়াআড়িভাবে আটকে যাওয়ায় এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ইউরোপের মধ্যকার বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে ইউরোপের উৎপাদন ও গাড়ি খাত। ফলে এরই মধ্যে বেশকিছু পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। বেড়ে গেছে জ্বালানি তেল, এলএনজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। আর এ সংকট বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যপ্রবাহের দুর্বলতা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। খবর বøুমবার্গ ও রয়টার্স। গত মঙ্গলবার জাপানের মালিকানাধীন এমভি এভার গিভেনের একটি বিশালাকার জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সুয়েজ খালে আড়াআড়িভাবে আটকে যায়। তাইওয়ানের এভার গ্রিন মেরিন সংস্থার পরিচালিত জাহাজটি উদ্ধারে অভিযান শুরু হলেও এখনো আশার খবর মেলেনি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সুয়েজ খালের নৌপথ স্বাভাবিক হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। শুক্রবার জার্মান বীমা প্রতিষ্ঠানের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ প্রতিবন্ধকতায় এক সপ্তাহে বিশ্ববাণিজ্যে ৬০০ কোটি থেকে হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে। কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সুয়েজ খাল লোহিত সাগর ও ভ‚মধ্যসাগরকে সংযুক্ত করেছে। ১২০ মাইল দীর্ঘ এ নৌপথ ৩ হাজার ৫০০ মাইলের পথ বাঁচিয়ে দিয়েছে। এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার সংক্ষিপ্ততম এ জলপথ দিয়ে বিশ্ববাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ সম্পন্ন হয়। বাজার বিশ্লেষক সংস্থা আইএইচএস মার্কিটের মতে, সুয়েজ খাল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় হাজার কোটি ডলার ম‚ল্যের পণ্য পরিবহন হয়। এর মধ্যে ইভার গিভেন সংস্থাই প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি ডলার ম‚ল্যের পণ্য পরিবহন করে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিংয়ের (আইসিএস) মহাসচিব গেই প্লাটেন বলেন, এ বাধার প্রভাব ব্যাপক। খালটি ব্যবহারের জন্য দুই শতাধিক জাহাজ অপেক্ষায় রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক জাহাজ এ খাল ব্যবহার করে। আটকে পড়া জাহাজটি উদ্ধারে যত দেরি হবে, বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে আঘাত তত ব্যাপক হবে। পরিবহনে বিপুল ব্যয় থেকে শুরু করে মৌলিক পণ্যগুলোয় ব্যয় বাড়িয়ে তুলতে পারে এ ব্যাঘাত। আর পণ্য পরিবহনে দেরির প্রভাবটি কেবল কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বরং পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। এদিকে সুয়েজ খাল বন্ধ থাকা বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান মুডি’স। সংস্থাটির মতে, এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে রয়েছে ইউরোপের উৎপাদন ও গাড়ি খাত। সুয়েজ খালে আটকে থাকা জাহাজে বিশ্বের বৃহত্তম আসবাব বিক্রেতা আইকিয়ার প্রায় ১১০টি কনটেইনার রয়েছে। এছাড়া ওই চ্যানেলে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা অন্যান্য জাহাজেও তাদের কনটেইনার রয়েছে। আইকিয়া ব্র্যান্ডের মালিক হ্যানস মার্ড বলেন, আমাদের সরবরাহ চেইনে বাধার বিষয়টি জাহাজটি উদ্ধার কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে চলছে এবং শেষ করতে কতদিন সময় লাগবে তার ওপর নির্ভর করছে। ন্যাশনাল কাস্টমস ব্রোকারস অ্যান্ড ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার উপকমিটির চেয়ারম্যান রিচার্ড রোচে বলেন, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারের জন্য এটি বিধ্বংসী ঘটনা। এ ঘটনা উচ্চ চাহিদার এ সময়ে আমদানি পণ্যগুলোকে মাঝসমুদ্রে আটকে দিয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি যদি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানও হয়, তবুও যানজট এবং এরই মধ্যে ব্যাহত সরবরাহ চেইন আরো বিলম্ব সৃষ্টি করবে। মুডি’স বলছে, মহামারিজনিত কারণে উড়োজাহাজে পণ্য পরিবহন কঠিন হয়ে উঠেছে এবং চীন ও ইউরোপের মধ্যে রেল পরিবহন অত্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকায় বিকল্প পথগুলোও খুব সীমিত। যে জাহাজগুলো এরই মধ্যে সুয়েজ খালের মুখে রয়েছে, সেগুলোকে বিকল্প দীর্ঘ পথে নিয়ে যাওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে দ্রæত সিদ্ধান্ত দরকার। দীর্ঘ এ পথ জাহাজগুলোর যাত্রায় অতিরিক্ত প্রায় ১০ দিন যোগ করবে। মুডি’সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল হারলিড বলেন, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের সঙ্গে নতুন করে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সাময়িক এ ব্যাঘাত বিশ্ববাণিজ্য পুনরুদ্ধারে আমাদের প্রত্যাশাকে আদতে পরিবর্তন করতে পারবে না। ব্লুমবার্গ, রয়টার্স।

 



 

Show all comments
  • মাহাদী ৩০ মার্চ, ২০২১, ২:২২ পিএম says : 0
    ইসরাইলের নতুন খাল খননের ধান্দা এটা অন্য কিছুই নয়☝️এত শত শত বছর কতো ছোট ছোট জাহাজ বাতাসে বেকে আটকালো না আর এই এতো ভারি ইসরাইলের দালালের জাহাজ বাতাসে বেকে আটকে গেলো!!!এটা ষড়যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছুই নয়...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ