মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ক্ষমতায়নের দৃষ্টিভঙ্গি দেশগুলোকে বৈশ্বিক আধিপত্যের দিক থেকে তাদের উচ্চতা মাপতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তবে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছালে সাম্রাজ্যগুলো নিজস্ব ভ্রমের মধ্যে বাস করতে শুরু করে এবং এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যায়। দীর্ঘকালীন শীর্ষত্বের দম্ভ এক অন্তহীন ক্ষমতার বিভ্রম তৈরি করে এবং এর ফলে ক্রমশ ক্ষয় হতে থাকা সাম্রাজ্যগুলো বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। ১৯৫০ এর দশকে গ্রেট ব্রিটেনের সাথে এমনটিই ঘটেছিল এবং আজকের আমেরিকার সাথেও এমন ঘটতে পারে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ইউরেশিয়াকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক বøকে একত্রিত করার জন্য তার দুর্দান্ত কৌশলের মুখে ওয়াশিংটনের দম্ভেরও পতন ঘটতে শুরু করেছে। দুই দশক ধরে চীন যখন ধাপে ধাপে বিশ্বব্যাপী তার শক্ত অবস্থান তৈরি করছিল, তখন ওয়াশিংটনের অভিজাত শক্তিমানরা তাদের চিরন্তন বিশ^ব্যাপি সামরিক আধিপত্যের অন্ধ বিশ্বাসে ডুবে ছিল।
বিল ক্লিন্টনের প্রশাসন থেকে জো বাইডেন পর্যন্ত ওয়াশিংটনের চীন নীতিটি কল্পনা থেকে সরাসরি ভ্রান্তিতে পরিণত হয়েছে। ২০০০ সালে ক্লিনটন প্রশাসন বিশ্বাস করেছিল যে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনে অন্তর্ভুক্ত হলে বেইজিং ওয়াশিংটনের কঠোর নিয়ম অনুসারণ করে পদক্ষেপ নেবে।
চীন যখন পেটেন্ট চুরির করার পরিবর্তে কোম্পানীগুলোকে ব্যবসার গোপনীয়তা রাখতে এবং মুদ্রা রফতানি বাড়াতে বাধ্য করে অভিজাত সাম্রাজ্যবাদের কঠিন খেলা খেলতে শুরু করে, তখন আমেরিকার ফরেন অ্যাফেয়ার্স বলেছিল যে, এ ধরনের অভিযোগের ‘সামান্যই ভিত্তি’ রয়েছে। তারা ওয়াশিংটনকে ‘সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ’ এড়ানোর জন্য মত পার্থক্যকে সম্মান করতে এবং সাধারণ মতক্যৈর সন্ধান এবং সম্মান করতে অনুরোধ করেছিল। ২০১১ সালে ইরাককে ভুলভাবে আক্রমণ ও দখলে ৫.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পর ওয়াশিংটন যখন বাগদাদ থেকে সরে আসল, আমেরিকার অবস্থান তখন ভবিষ্যতের মধ্যপ্রাচ্যকে ভ‚-রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে সম্ভাব্যভাবে জ্বালানি স্বাধীনতার শেষপ্রান্তে।
সেসময় ওয়াশিংটন যখন মরুভূমির বালুতে রক্ত এবং সম্পদ ঢালছিল, বেইজিং নিজেকে বিশ্বের কর্মশালায় পরিণত করছিল। দেশটি ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছিল, যা তারা ইতিহাসের বৃহত্তম অবকাঠামোগত প্রকল্প ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’র মাধ্যমে ইউরেশিয়াকে একীভূত করার জন্য একটি উচ্চাকাক্সক্ষী প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে শুরু করে।
ভূ-রাজনৈতিক জাঁকজমক নিয়ে চীনের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একটি নতুন কৌশল অবলম্বন করার চেষ্টা করেছিলেন, যা তিনি ‘এশিয়ার দিকে ফেরা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এটি ছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর একটি সামরিক স্থানান্তর এবং আমেরিকা অভিমুখে ইউরেশিয়ার বাণিজ্যের জন্য নতুন এক গুচ্ছ বাণিজ্য চুক্তি। খাতা-কলমে উজ্জ্বল সম্ভানাময় এ স্কিমটি শিগগিরই কিছু কঠোর বাস্তবতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে।
এর সূচনা হিসাবে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা যে জগাখিচুড়ি পাকিয়েছে, তা থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করা কল্পনার থেকেও অনেক বেশি কঠিন প্রমাণিত হয়। ইতিমধ্যে, বিশ্বায়ন বিরোধী জনরোষের মধ্যে আমেরিকা জুড়ে বন্ধ কল-কারখানা এবং অপর্যাপ্ত মজুরির কারণে বড় বৈশ্বিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো অনুমোদিত হওয়া শেষ পর্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এমনকি ওবামাও আমেরিকার পরাশক্তির বিরুদ্ধে টেকসই চ্যালেঞ্জ হিসেবে চীনের গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করেছিলেন। চীনের বেল্টওয়ে ভেঙে দেয়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসনকালের দুই বছর বাণিজ্য যুদ্ধে ব্যয় করেছিলেন এই ভেবে যে, তিনি শেষ পর্যন্ত আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে মাত্র কয়েকটি শুল্কে বেঁধে বেইজিংকে হাঁটু গাড়তে বাধ্য করতে পারবেন। সূত্র : দ্য নেশন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।