Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমেরিকার নির্বাচনে বাংলাদেশের মিডিয়া

প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৭ পিএম, ৫ নভেম্বর, ২০১৬

স্টালিন সরকার : বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুর নাম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মার্কিনিরা তো বটেই, সারাবিশ্বই নজর রাখছে এই নির্বাচনী প্রচারণার গতি-প্রকৃতির উপর। নিত্যদিন নির্বাচনী প্রচারণায় রঙ বদলাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশটির নির্বাচন ইস্যুতে কার্যত গোটা বিশ্ব দুই ধারায় বিভক্ত। আধুনিক সভ্যজাতির দাবিদার দেশটির নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে নোংরামীর প্রতিযোগিতা চলছে। একে অপরের বিরুদ্ধে বিষ্ঠার গোলা ছুড়ছেন। তারপরও উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই। কে হচ্ছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট? কার জন্য খুলছে হোয়াইট হাউজের দরোজা?
আমেরিকার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন, রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প, লিবার্টারিয়ান দলের গ্যারি জনসন, গ্রীন পার্টির জিল স্টেইন। তাদের রানিং মেট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির টিম কেইন, রিপাবলিকান দলের মাইক পেন্স, লিবার্টারিয়ান পার্টির উইলিয়াম ওয়েল্ড ও গ্রীন পার্টির আজামু বারাকা।
আগাম ভোট দেয়ার সুযোগ থাকায় ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এই নির্বাচনের দুই প্রার্থী ডেমোক্রেট দলের হিলারি ক্লিনটন আর রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হবে লড়াই। ভোটারদের মতো এ নির্বাচন নিয়ে গোটাবিশ্বের মিডিয়াগুলো মেতে উঠেছে। আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের বিশ্বরাজনীতির গতি-প্রকৃতি। ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে যদিও ওই দেশের পররাষ্ট্র নীতিতে তেমন পরিবর্তন হয় না; তারপরও পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্ট বলে কথা। প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত জীবনাচার-চাওয়া-পাওয়া এবং অভিরুচির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। যেমন বুশ সিনিয়র-জুনিয়র মিথ্যা তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে ইরাকের প্রতি আক্রমণাত্মক হিংস্র নীতি গ্রহণ করলেও বিল ক্লিনটন-ওবামা আক্রমণাত্মক নন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা, মামলা, নারী কেলেঙ্কারি, হুমকিতে বাংলাদেশের রাজনীতিকেও ছাড়িয়ে গেছে আমেরিকা। গণতন্ত্রের সূতিকাগার, সারাবিশ্বের মডেল, আব্রাহাম লিংকনের ডেমোক্রেসি আজ পর্যুদস্ত! সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজম পতনের পর রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে ‘গর্বিত গণতন্ত্র’ বেহাল অবস্থা। সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফেরি করে বেড়ানো আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এসব কি হচ্ছে? আমেরিকায় বৈধ ও কাগজপত্রবিহীন প্রায় ৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশী বসবাস করেন। শুধু বিশ্ব রাজনীতি নয়, তাদের কারণেও ওই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বটে।
বিশ্বের তাবৎ মিডিয়া আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে মেতে উঠেছে। কেউ জরিপ করছে, কেউ পাবলিক মতামত প্রচার করছে আবার কেউ হিলারি ও ট্রাম্পের ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরছেন। আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে নিত্যদিন জরিপ প্রচার করা হচ্ছে। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দু’দিন। এখনো শক্ত অবস্থানে আছেন হিলারি ক্লিনটন। জাতীয় জনমত জরিপগুলোতে তিনি সর্বশেষ শতকরা ৫ ভাগ এগিয়ে। আগাম যে ভোটের সংখ্যা তার পক্ষে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাধারণ ভোটের পাশাপাশি ইলেক্টোরাল ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট হতে হলে ৫৩৮ ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়। হিলারির পক্ষে সে ভোট সংগ্রহ প্রায় নিশ্চিত হওয়ায় এ লড়াইয়ে তার প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প ভবিষ্যৎ অন্ধকার। প্রশ্ন হলো বিশ্ব মিডিয়ার মতো কি বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর প্রচার করছে? বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নিজ নিজ দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো কি আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসীদের স্বার্থে প্রচারণা চালাচ্ছে? নাকি সরকারের চিন্তাচেতনার প্রতি প্রাধান্য দিচ্ছে? ইসলাম বিদ্বেষী, নারী বিদ্বেষী, বিশ্বের সেরা জুয়াড়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরা। কারণ, মুসলিম বিদ্বেষী ট্রাম্প নির্বাচিত হলে বাংলাদেশের অসংখ্য প্রবাসীকে আমেরিকা ছাড়তে হবে। সে কারণে আমেরিকায় কর্মরত কয়েক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। তাদের বক্তব্য হলো, হিলারি নির্বাচিত হলে আমেরিকা হবে অভিবাসীদের নিরাপদ বাসস্থান, নারীরা পাবে মর্যাদা, মুসলমানরা থাকবেন আত্মমর্যাদা নিয়ে। একই সঙ্গে বিশ্ব যেমনি হিলারির যোগ্য নেতৃত্বের কারণে লাভবান হবে, তেমনি বাংলাদেশও লাভবান হবে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বেন আমেরিকার অভিবাসী মুসলমানরা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব অভিবাসী আমেরিকায় গেছেন তাদের মতোই বাংলাদেশী অভিবাসীকে আমেরিকা ছাড়তে হবে। যার জন্য শুধু বাংলাদেশের অভিবাসীরা নয়; সারাবিশ্বের মুসলিম দেশগুলো হিলারির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। আমেরিকায় বসবাসরত সাংবাদিক-ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী কমিউনিটি গ্রুপিং করে হিলারির পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। আর আমেরিকায় অবস্থানরত ভারতীয়, ইসরাইলী ইহুদি, রাশিয়ানরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করছে। কারণ, ট্রাম্প ইসলাম বিদ্বেষী এবং বর্ণবাদী। মুসলমানদের স্বার্থের ওপর আঘাতের অর্থই হলো হিন্দুত্ববাদী, ইহুদিবাদীদের জয়জয়কার। যার কারণে রাশিয়া ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইহুদি ও ভারতীয়রা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় কোমড় বেঁধে নেমেছে। নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করতে রিপাবলিকান দল সমর্থিত একটি হিন্দু সংগঠন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে হিলারিবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। রিপাবলিকান হিন্দু কোয়ালিশন (আরএইচসি)-এর বিজ্ঞাপনে বলা হয়, হিলারি পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাকিস্তানকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সামরিক সাহায্য এবং অস্ত্র দিয়েছেন। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিসা নিষিদ্ধ করায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইসলামকে সমর্থন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং দেশ থেকে অনুদান সংগ্রহ করেছেন হিলারি। বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরাসহ স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রতিদিন সচিত্র এসব খবর প্রচার করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশের টিভি দর্শকরা দেখছেন। বাংলাদেশের মিডিয়ার প্রচারণা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রঙ্গমঞ্চের কিছুই আসে যায় না। তারপরও প্রশ্ন হলো আমাদের মিডিয়ার ভূমিকা কি? প্রতিটি দৈনিকে নিত্যদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর ছাপা হচ্ছে। চারদিন আগে হঠাৎ করে দেখা গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর বড় অক্ষরে ‘গুরুত্ব’ সহকারে ছাপা হয়েছে। রহস্য কি? রহস্য আর কিছুই নয়; আমেরিকার এক পত্রিকার জরিপে দেখা গেছে হিলারির চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক পয়েন্ট এগিয়ে। সেকারণে খবর অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। খবরের গাঁথুনি এবং শব্দচয়ন দেখে মনে হয় বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রিন্ট মিডিয়ার নীতি নির্ধারকরা ইসলাম বিদ্বেষী এবং নারীর চরিত্রহননকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে খুশি হবেন। অথচ আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরা হিলারির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের মিডিয়া কেন ইসলাম বিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে? ইসরাইলের ইহুদি ও ভারতের হিন্দু সংগঠনগুলো হিলারির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় কি বাংলাদেশের মিডিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে? তাছাড়া নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগত ভাবে হিলারির বন্ধু। আর ড. ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক। সে কারণে কি ট্রাম্পের পক্ষে আমাদের মিডিয়ার অবস্থান? অবাক কা-!
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জটিল প্রক্রিয়ায় হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত হিলারি এগিয়ে রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় রঙ ছড়াতেই প্রতিদিন দুই প্রার্থীর সমর্থকের ‘পারদ’ উঠানামা করেছে। কিন্তু পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব সাবেক সিনেটর, সাবেক ফাস্টলেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি সব সময় এগিয়ে। রোনাল্ড ট্রাম্পের নারী কেলেঙ্কারী, কর ফাঁকি, ইসলাম বিদ্বেষী আক্রমণাত্মক বিষয়গুলো যেমন জনমত জরিপে প্রভাব ফেলেছে, তেমিন হিলারির স্বাস্থ্যগত অবস্থা, ব্যক্তিগত ইমেইল, উইকিলিকসের তথ্য ফাঁস ও এফবিআইয়ের তথ্য ফাঁস নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। ট্রাম্পের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা ও কট্টরপন্থী মনোভাবের কারণে তার দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিলারিকে ভোট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বলা যায়, হিলারির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারপরও মধ্য সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন হিলারি। গ্রাউন্ড জিরোতে অসুস্থ হয়ে পড়ে যাওয়ায় তার স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনা তুঙ্গে উঠে। গত সপ্তাহ জুড়ে শিরোনামে ছিল ওবামাকেয়ার নিয়ে সমস্যা, উইকিলিকসের তথ্য ফাঁস, আর সর্বশেষ এফবিআই প্রধান জেমস কমির ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’। গত সপ্তাহে সব জনমত জরিপের গড়ে হিলারি তার প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের চেয়ে ৫.৬ শতাংশের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। লিবার্টেরিয়ান পার্টি আর গ্রিন পার্টির দুই প্রার্থীকে বাদ দিলে ব্যবধান আরো বড় হয়ে যায়। এফবিআই-এর সর্বশেষ বক্তব্যের পর দু’টি মিডিয়া জরিপে বলা হয়, হিলারির চেয়ে জনমত জরিপে ট্র্রাম্প এক পয়েন্ট এগিয়ে। যদিও সেটা মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
মূলত, হিলারির ইমেইল পুনঃতদন্তে এফবিআইয়ের সিদ্ধান্তের পর নির্বাচনী জরিপগুলোতে এগিয়ে থাকা হিলারির সঙ্গে ব্যবধান কমতে থাকে ট্রাম্পের। এই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহে এবিসি-ওয়াশিংটন পোস্টের সর্বশেষ জরিপে দাবি করা হয়, জনপ্রিয়তায় হিলারি ক্লিনটনকে এক পয়েন্ট পেছনে ফেলেছেন ট্রাম্প। এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে হিলারি সমর্থকরা। গত বুধবার কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত জরিপে বলা হয়, ফ্লোরিডাসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে একেবারেই সামান্য ব্যবধানেই ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন হিলারি। আবার ওহাইও অঙ্গরাজ্যে হিলারির চেয়ে ট্রাম্প এগিয়ে। ওইদিন সকালে প্রকাশিত এর জরিপে বলা হয়, হিলারির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন ৪৯ শতাংশ আর ট্র্যাম্পকে ৪৭ শতাংশ মার্কিনি। আগাম ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন তিনটি অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা এবং ওহাইওতে হিলারির অবস্থান বেশ ভালো। ফ্লোরিডায় আগাম ভোটারদের মধ্যে ৬ শতাংশ বেশি সমর্থন নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। ফ্লোরিডার ৪৪ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন যা রেকর্ডসংখ্যক।
নির্বাচনের কাউন-ডাউন শুরু হয়ে গেছে। ভোটের আর মাত্র দুই দিন বাকী। বিভিন্ন মিডিয়া ও সংস্থা জরিপ করছে এবং হিলারি ও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার পারদ উঠানামা করছে। এই ‘পারদ’ ওঠানামায় দুই শিবিরে স্নায়ু উত্তেজনা বাড়ছে। হিলারির জনপ্রিয়তায় ভোটের আগে ট্রাম্পের তরী যখন ডুবুডুবু তখন রাশিয়ার হিলারিকে ঠেকাতে উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কার্ড ছোঁড়েন। সেটাতেও কাজ হয়নি। দফায় দফায় উইকিলিকস হিলারির ইমেইল বার্তা প্রকাশ করে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করলেও ওই সব ইমেইলে হিলারি’র জনহিতকর কথাবার্তা প্রকাশ পায়। উল্টো উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলতে শুরু করেছেন নির্বাচনে হিলারিই বিজয়ী হয়ে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করবেন। শেষ মুহূর্তে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প দল নিরপেক্ষ ভোটারদের ভোট পেতে ছোঁটাছুটি করছেন। মিডিয়াগুলো ব্যস্ত। তবে মার্কিন মান নিরূপক সংস্থা মুডি গবেষণা করে জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত হিলারিই বিজয়ী হবেন। গত ৯টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্ভুল পূর্বানুমান করেছিল মুডির বিশ্লেষণী মডেল। মুডির এবারের মডেলে বলা হয়েছে, হিলারি ইলেকটোরাল কলেজের ৩৩২টি ভোট পাবেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পাবেন ২০৬ ভোট। ২০১২ সালে বারাক ওবামা ঠিক এ ধরনের মার্জিনেই রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির বিরুদ্ধে জিতেছিলেন। মুডির বিশ্লেষণী মডেলটি রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ১৯৮০ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী রোনাল্ড রিগ্যান ডেমোক্রেট জিমি কার্টারকে পরাজিত করেছিলেন তার পূর্বানুমান এ দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছিল। জ্বালানির স্বল্পমূল্য ও প্রেসিডেন্ট ওবামার সর্বোচ্চ সমর্থনের বিষয়টি এবার হিলারিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হতে সহায়তা করবে। এর আগে রয়টার্স-ইপসোস স্টেটস অব দ্য ন্যাশন প্রজেক্ট জানিয়েছিল, এবার হিলারির জেতার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। তিনি কমপক্ষে ২৭৮ জন ইলেকটোরালের ভোট পাবেন। নির্বাচনে জিততে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট প্রয়োজন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যখন এই অবস্থা তখনো বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্লা ভারী এমন প্রচারণা চালাচ্ছে। এটা কি আমেরিকার নির্বাচনের প্রচারণায় প্রকৃত চিত্র দেশবাসীর সামনে আড়াল করা? নাকি শুধুই মোহাম্মদ ইউনূস ইস্যুর কারণে বাংলাদেশের মিডিয়ার জোর করে হিলারিকে পিছনে ফেলা?
বিঃদ্রঃ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সোহেল রানা ফেসবুকে একটি চমৎকার পোষ্টার পেষ্ট করেছেন। পোষ্টারের ওপরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি। ক্যাপশনে লেখা ‘ভোটের আগেই আমাকে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করুন’। নীচে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের ছবি। ক্যাপশনে লেখা ‘বিনা ভোটে প্রেসিডেন্ট হতে হলে আমাকে ছাড়া সম্ভব নয়’।



 

Show all comments
  • ইমরান ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৭ পিএম says : 0
    হিলারিই হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমেরিকার নির্বাচনে বাংলাদেশের মিডিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ