যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
বিভিন্ন সব্জির ন্যায় পেঁপেকেও আমরা সব্জি হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া ফল হিসাবেও এর পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু ভেষজরূপে এর ব্যবহার অনেকের অজানা। সারা বছরই ফলটি পাওয়া যায়। গ্রীষ্ণের শেষ থেকে শুরু করে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত কাঁচা অবস্থায় এবং শীতের শুরুতে তা পাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। চিকিৎসকরা পেঁপের অসাধারণ ভেষজ গুণের জন্য তা খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে, রোগের চিকিৎসায় পেঁপেকে ব্যবহারের সময় একটা কথা মনে রাখা দরকার, পেঁপে উগ্রজাতীয় ফল, এটি ব্যবহারে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই পেঁপেকে রোগ নিরাময়ের ঔষুধ হিসাবে ব্যবহারের আগে ফলটিতে কি কি রয়েছে জানতে হবে।
কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থায় পেঁপে শীতল, অত্যন্ত রুচিকর। অগ্নি বর্ধক, পাচক (যা হজমে সাহায্যকারী) সারক মধুর, রক্তপিত্ত রোগে কার্যকর ও বিশেষ ফলপ্রদ। পেঁপের আঠা প্লীহা এবং গুল্ম রোগ নাশ করে। পেঁপে ফুল যখন ফলে রূপান্তরিত হয় তখন থেকেই তার ভিতর দুধের মত সাদা এবং ঘন এক ধরনের আঠা বেরোয়। এ আঠায় থাকে অ্যালবুমিনয়েড। টাটকা পেঁপের মধ্যে থাকে, রেজিন, স্নেহপদার্থ, অ্যালবুমিনয়েড, চিনি, পেকটিন, সাইট্রিক অ্যাসিড, টাটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, ডেক্সটিন প্রভৃতি উপাদান। শুকনো পেঁপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সোজ, পটাশ এবং ফসফোরিক অ্যাসিড ইত্যাদি থাকে। পেঁপে সমন্ধে সা¤প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, টাটকা পেঁপের মধ্যে রয়েছে সুক্রোজ, প্যাপাইন এবং ম্যালিক অ্যাসিড। কাঁচা ও পাকা উভয় ফলই প্রচুর পরিমাণ পেকটিনের উৎস।পেঁপে গাছের ছাল, মূল এবং বীজে থাকে কারপাইন। এছাড়া পাতায় ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই সহ রয়েছে একটি অ্যালকালয়েড কারপাইন। প্যাপাইন সমন্ধে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম বা একাধিক প্রোটিওলাইটিক এনজাইম।
কোনও কোনও সময় দেখা যায় দৃশ্যতঃ কোন কারণ ছাড়াই কারও কারও শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে এ উপসর্গের প্রকোপ বেশি। শরীর অবসাদজনিত ক্লান্তি, একটা মনমরা ভাব, পড়াশোনা বা কাজকর্মে অনিচ্ছা প্রভৃতি উপসর্গ এর সঙ্গে আসে। প্রায়ই এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কোষ্ঠবদ্ধতা বা পায়খানা পরিষ্কার না হওয়া। এক্ষেত্রে পেঁপে খুব ফলপ্রদ। কাঁচা বা পাকা যে কোনও অবসাথায় পেঁপে সকালে এবং বিকালে প্রতিদিন কয়েক টুকরো করে এক মাস নিয়মিত খেয়ে যেতে পারেন। এতে আপনার সমস্যার সমাধান হবে। হজমের গোলমাল একটি ব্যাপক সমস্যা। এ সমস্যায় আজকাল প্রায় সবাই ভুগে থাকেন। হজমশক্তি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। পেট খারাপ করে। এতে কাঁচা ও পাকা পেঁপের উপকারিতা অসামান্য। কাঁচা পেঁপে পায়খানা পরিস্কার করে এবং পাকা পেঁপে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই পাকা বা কাঁচা যে কোনও ভাবে পেঁপে খেলে আপনার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পেঁপে ব্যবহার করা যায়। ৪০-৪৫ বছরের পর থেকে মানুষের রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। হয়ত রক্তচাপ বেড়ে যায় না হয় কমে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাঁচা বা পাকা পেঁপে কয়েক টুকরো খেতে পারেন। আপনাকে কয়েকমাস নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। এতে সুফল পাবেন।
প্লীহা বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। এক্ষেত্রে পেঁপে নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন। প্লীহাটি ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখা যায় তা খুব শক্ত, করে এ সময় কাঁচা পেঁপের তরকারি না খাওয়াই ভাল। এক্ষেত্রে পাকা পেঁপে খেতে হবে।
স্নায়ুর ব্যথা কমানোর জন্য পেঁপে ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক সময় এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে বা গোটা শরীরে ব্যথা হয়। এতে পেঁপে গাছের পাতা ভাল করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে ব্যথাযুক্ত স্থানে সিদ্ধ পাতা দিয়ে সেঁক দিন। মিনিট পাঁচেক এভাবে সপ্তাহে পাঁচদিন দিলে স্নায়ুর ব্যথার উপশম হবে।
যকৃতের বৃদ্ধি কমাতে পেঁপের আঠা ফলপ্রদ। যকৃৎ ঠিকমত কাজ না করলে শরীরের দূষিত পদার্থগুলো শরীর থেকে বের হতে পারে না, শরীরে থেকে যায়। এতে শরীর দ্রুত খারাপ করে। যকৃতের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। যকৃতের বৃদ্ধি ঘটলে পরিপাক গ্রন্থি তার স^াভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না।
যকৃতের বৃদ্ধি কমিয়ে একে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পেঁপের আঠা খুব ফলপ্রদ ঔষুধ। এক চামচ পরিমাণ পেঁপের আঠা সংগ্রহ করে তার সঙ্গে এক চামচ পরিমাণ চিনি মেশান। এ মিশ্রণটিকে তিন ভাগ করে দিনে তিন বার খান। এভাবে এক নাগাড়ে ১৫ দিন খেতে হবে। এতে উপকার পাবে রোগী।
কোষ্ঠবদ্ধতা রোগে যাঁরা আক্রান্ত, অর্থাৎ যাঁদের পায়খানা ঠিকমত পরিস্কার হয় না, তাঁদের জন্য পেঁপে খুব ফলপ্রদ। একটানা ১৫ দিন কাঁচা পেঁপের তরকারি খান। তাহলে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে। তবে পেঁপের তরকারি কিন্তু গর্ভবতী মেয়েরা খাবেন না। গর্ভবতী নারীদের পক্ষে কাঁচা পেঁপে বিপজ্জনক। এতে গর্ভস্রাব হতে পারে, এমনকী গভস্থ সন্তানেরও ক্ষতি হতে পারে। তবে গর্ভধারণের ৬-৭ মাস পর গর্ভিনী অবশ্য পাকা পেঁপে খেতে পারেন। কিন্তু প্রতিদিন নয়। মাঝে মধ্যে এবং খুব কম পরিমাণে।
অনেক সময় বিনা কারণে গা ম্যাজ ম্যাজ করে, বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করে না, জ্বর আসে। এসব ক্ষেত্রে পেঁপে পাতার রস খুব উপকার দেবে। কয়েকটি পেঁপে পাতা সংগ্রহ করে ভাল ভাবে বেটে রস বের করে নিন। দিনে ২-৩ বার ১ চামচ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
হƒদরোগ নিবারণে পেঁপের গুণ অপরিসীম। হƒদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পেঁপে পাতার রস দিলে উপকার পাওয়া যায়। টাটকা পেঁপে পাতা সংগ্রহ করে তা বেটে নিয়ে প্রতিদিন সকালে ১ থেকে ২ চামচ পরিমাণ খেতে হবে। খাবার আগে এক কাপ ঠান্ডা পানির সঙ্গে ওই রস মিশিয়ে নেবেন। পেঁপে পাতার রস ভীষণ তিতা, খেতেও বিস্বাদ লাগবে। তাই পানি মিশিয়ে খাওয়া ভাল।
পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে হজম শক্তির উপর। হজমশক্তি হ্রাসে অজীর্ণতা রোগ দেখা দেয় ও শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। পাকস্থলীকে শক্তিশালী করতে পেঁপের শিকড় ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। আধ ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা শিকড় সকালে পানি খাবারের পর চিবিয়ে খান। নিয়মিত ১ মাস খেলে উপকার পাবেন। হজম শক্তিও বৃদ্ধি পাবে।
মোট কথা পেঁপে কাঁচা বা পাঁকা যেভাবেই হোক এর উপকারিতার শেষ নেই।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট,
বৃক্ষ রোপনে জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণ পদক (১ম) প্রাপ্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।