পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1719383696](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পদ্মা নদীর ভাঙা-গড়ায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট বারবার বিলীন হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়ছেন এ রুটের যাত্রীরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে ফেরি ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে। প্রকাশিত খবরাদিতে দেখা যাচ্ছে, নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার দীর্ঘ এক মাস পর মেরামত শেষে ১ নম্বর ফেরিঘাটটি গত সোমবার দুপুরে চালু করার আগেই এখানকার অপর তিনটি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ঈদের আগে ফেরি পারাপারে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। এদিকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নাব্যসঙ্কট প্রকট থাকায় এখনো এ রুটে রো রো ফেরিসহ অধিকাংশ ফেরি ধারণ ক্ষমতার কম যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার একটি ইংরেজি দৈনিককে জানিয়েছেন, যানবাহন সংখ্যার বৃদ্ধিতে ঈদের সময় ফেরি সার্ভিস স্বাভাবিক রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি মনে করেন স্বাভাবিক সময়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় ৩৫০০ যানবাহন চলাচল করে। ঈদে এ সংখ্যা বেড়ে ৬৫০০ও ছাড়িয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে যাত্রীসাধারণ বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এ এলাকায় খাদ্য, পানীয় সঙ্কটসহ টয়লেট ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে। ফেরিঘাটের কর্মকর্তাদের মতে, ঈদুল আজহার প্রাক্কালে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠতে পারে। গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনায় বিআইডব্লিউটিসির আরিচা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ মনে করেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাটটি কাঁঠালতলায় স্থানান্তর করা প্রয়োজন। বিআইডব্লিউটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শেখ মোহাম্মদ নাসিমও ফেরিঘাটটি দ্রুত সরানোর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন।
ফেরিঘাট নিয়ে বর্তমানে যে আলোচনা স্থান করে নিয়েছে বিষয়টি কার্যত নতুন কিছু নয়। একদিকে বলা যায় স্বাভাবিক সময়েও এ ধরনের আলোচনা হয়ে থাকে। বর্ষা ও ঈদকে কেন্দ্র করে ফেরিঘাটের অব্যবস্থাপনা দূর করার প্রসঙ্গ নতুন কিছু নয়। তবে এবারের পরিস্থিতির ভয়াবহতা আগে থেকেই আন্দাজ করা হয়েছে। বিশেষ করে ফারাক্কার সবগুলো গেট ছেড়ে দেয়ার পর পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করতে না পারার কোনো কারণ থাকার কথা নয়। এদিকে চলতি বর্ষা মওসুমে ঘাট এলাকায় এমন বিপর্যয়কর অবস্থার আশঙ্কা জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসন বিআইডব্লিউটিএকে শুষ্ক মওসুমেই ব্যবস্থা নিতে অন্তত ২০০ চিঠি দিয়েছে। এতে কর্ণপাত করেনি সংশ্লিষ্টরা। মূল সমস্যা সমাধানে না গিয়ে শুষ্ক মওসুমে কিছু গাছের গুঁড়ি-বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। এছাড়া চলতি বর্ষা মওসুমে ভাঙনকবলিত ঘাটগুলো একইভাবে মেরামত করে চলছে। এতে ফলাফল শূন্য হলেও এ প্রক্রিয়ায় গত জুন পর্যন্ত দেড় কোটি টাকারও অধিক ব্যয় হয়েছে। গত ৬ আগস্ট দৌলতদিয়ার ১ নম্বর ফেরিঘাটটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এটি চালু হওয়ার আগেই ৪ নম্বর ঘাটটিতে ফেরি ভিড়তে গিয়ে তীব্র ¯্রােতের কারণে প্রচ- ধাক্কা লাগে। ফলে ঘাটটি অকেজো হয়ে যায়। ৩ নম্বর ঘাটটিতে র্যামের নিচে সামান্য মাটি রয়েছে। যেকোনো সময় তা ধসে যেতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, র্যামের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার কারণে বারবার ফেরিঘাট বন্ধ হলেও বেশ কিছুদিন ধরে কোনো কার্যক্রম নেয়া হচ্ছে না। একের পর এক ঘাট ভেঙে যাচ্ছে আর পন্টুনগুলো ওপরে তুলে দায় সারছে বিআইডব্লিউটিএ। অথচ এ ধরনের কাজেই অবিশ্বাস্য বিল ভাউচার দিয়ে অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করছে। এটা বোধহয় বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না যে, এখনকার পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফেরি সঙ্কটের কারণে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এক ঘণ্টা ফেরি পারাপারের জায়গায় এখন ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা লাগছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে পরিস্থিতি যতটা গুরুতর সংশ্লিষ্টরা তা কার্যতই অনুভব করছেন কি না সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
প্রতিবছরই ঈদযাত্রাকে নির্বিঘœ করতে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান জানালেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়েছে বা হচ্ছে কোনো বিবেচনাতেই তেমনটা বলা যাবে না। একদিকে সড়কের বেহাল দশা অন্যদিকে নৌপথের অবস্থাও ভালো নয়। কার্যত প্রয়োজনীয় নজরদারির অভাবেই পরিস্থিতি এমনতর হয়েছে বা হতে পারছে। ফেরিঘাটগুলোর অবস্থা নিয়ে অনেক দিন থেকেই লেখালেখি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরাও যোগাযোগ করেছেন। দেখা যাচ্ছে কাজের চেয়ে কাজের নামে লুটপাটই হয়েছে বেশি। এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে প্রকারান্তরে নাড়ির টানে যারা প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে বাড়ি যাবার চিন্তা করছেন তাদের পক্ষে আদৌ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হবে কি না সে প্রশ্নই গুরুতর হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে পশু পৌঁছাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর সাথে জড়িত রয়েছে পাইকারদের কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ঈদে প্রয়োজনীয় পশুর যোগান নিশ্চিত করার অপরিহার্য দায়। কোনো বিবেচনাতেই ফেরিঘাটের অব্যবস্থাপনা কাম্য নয়। বিষয়টি এমন নয় যে, এর কোনো সন্তোষজনক সমাধান নেই বা সম্ভব নয়। মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে সাধারণকে জিম্মি করে বিষয়টি নিয়ে টাকা লুটপাটের এক ধরনের মওকা খোঁজা হচ্ছে। সুতরাং ফেরিঘাট নিয়ে টালবাহানার কোনো সুযোগ নেই। দ্রুতই ফেরিঘাটকে সাধারণের জন্য নির্বিঘœ করা জরুরি। ঈদে ঘরমুখো লাখো মানুষকে জিম্মি করার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট মহল সাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে আন্তরিক হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।