পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1719388915](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন এবার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। গত সপ্তায় জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব বান কি মুন মিয়ানমার সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ও আগ্রহের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। বান কি মুনের সফরের ৬ দিনের মাথায় রোহিঙ্গা কমিশনের দায়িত্ব পালনের জন্য কোফি আনানের মিয়ানমার পদার্পণ এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের ত্বরিৎ উদ্যোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক অধিকার রক্ষায় আমরা বান কি মুন ও কোফি আনানের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং সাফল্য প্রত্যাশা করি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত এথনিক মুসলমান নাগরিকরা কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সাবেক জান্তা সরকার এবং বৌদ্ধদের দ্বারা চরম নির্যাতনের শিকার। সামাজিক-রাজনৈতিক নিগ্রহ ও নির্মম এথনিক ক্লিনজিং-এর শিকার হাজার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছে। এসব দেশে শরণার্থী রোহিঙ্গারা নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ভুক্তভোগী হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের কাছে বারবার তাগিদ জনানোর পরও তারা কখনো এ বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্বসহ বিবেচনা করেনি।
সুদীর্ঘ কয়েক দশকের সামরিক জান্তা শাসনের পর মিয়ানমার ইতিমধ্যে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করেছে। গত বছর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী নেতা অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)’র নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ক্ষমতাসীন সেনাসমর্থিত সরকারের রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পরাজয় মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রায় শামিল হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই নতুন সরকারের প্রতি মিয়ানমারের জনগণ এবং বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা ছিল অনেক। বিশেষত, সকল নাগরিকের জন্য একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও মানবাধিকার সমুন্নত করা নতুন সরকারের একটি বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে গৃহীত হতে পারে। নির্বাচনে বিজয় লাভের পর বিশ্বনেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সেনাতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের অগ্রসেনানী অং সান সুচির উদ্দেশে অভিনন্দন বার্তায়ও এই প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখা গেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পদার্পণের সাথে সাথে এতদিনের একাকীত্ব ঘুচে গিয়ে মিয়ানমারের সামনে এখন নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার হাতছানি। একটি স্থিতিশীল সামাজিক-রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর স্বার্থে মিয়ানমারের নতুন গণতান্ত্রিক সরকারকে অতীতের কূপম-ূকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নাগরিকদের মধ্যকার বিদ্বেষ- বৈষম্যের সাংবিধানিক ও আইনগত স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সুচি সরাসরি মিয়ানমারের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান না হলেও স্টেট কাউন্সিলর পদ সৃষ্টি করে মূলত তিনিই সরকার নিয়ন্ত্রণ করছেন। রাখাইন সমস্যা নিরসনে কোফি আনানের নেতৃত্বাধীন শান্তি কমিশন ইতিমধ্যে সুচি’র সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তারা এ সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যের দাঙ্গাকবলিত অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং রাজনৈতিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিও এবার রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কোফি আনানের শান্তি কমিশনের পাশাপাশি সুচি’র নেতৃত্বেও একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ রাখাইন রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং রোহিঙ্গাসহ সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমঝোতা, সহাবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা কাজ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম সংগঠন আরাকান ন্যাশনাল পার্টি এসব শান্তি উদ্যোগে সহযোগিতা না করার ঘোষণা দিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। এহেন বাস্তবতায় ধর্মীয় ও জাতিগত দাঙ্গায় মিয়ানমারের হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকের মৃত্যু এবং লাখ লাখ মানুষের পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতা ও মানবিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা’ সারিয়ে শান্তি, সহাবস্থান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সুচি’র সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বৈরশাসনে এবং জাতিগত দমন-পীড়নে অতীতে মিয়ানমারের এ অংশে যে রক্তাক্ত ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা’ দূর করতে, মিয়ানমার সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগকে সফল করতে বৃহত্তর বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর শান্তিকামী জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের জাতিগত পরিচয় ও নাগরিকত্ব স্বীকৃতি পূর্বক তাদের আইনগত ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রত্যাশা অনুসারে কোফি আনানের শান্তি কমিশন রোহিঙ্গা সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হবেন বলে আমরা মনে করি। শান্তি কমিশনের রিপোর্ট ও কর্মপন্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এনএলডি নেতা অং সান সুচি মিয়ানমারের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দাবীকে সমুন্নত রাখতে সক্ষম হবেন, এই প্রত্যাশা সকলের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।