Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজেপিতে প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা হতেই অন্তর্কোন্দল বেধেছে বিজেপিতে। জেলায় জেলায় প্রার্থী নিয়ে চলছে বিক্ষোভ, ভাঙচুর। এরিমধ্যে এক জায়গায় প্রার্থী বদল করা হয়েছে। ক্ষোভ সামলাতে ব্যস্ত দলের নেতারা। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

শিলিগুড়ির সমতলের চারটি আসনের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রের প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন দলেরই সাবেক সভাপতি নৃপেন দাস। সদ্য সিপিএম ছেড়ে আসা শঙ্কর ঘোষকে প্রার্থী করায় তিনি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। শঙ্করকে সরাসরি আক্রমণ করে, তিনি একহাত নিয়েছেন দলের বর্তমান জেলা সভাপতি প্রভীন আগরওয়ালকেও। তার কথায়, ‘টাকার লোভে শঙ্কর দলে এসছে। যার হাতে এখোনো চে গুয়েভারের ট্যাটু জ্বলজ্বল করছে, যে বিজেপিকে এতদিন আক্রমণ করে এসেছে। তাকে কেন প্রার্থী করা হল?’ দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিজেপি এখন ধর্মশালায় পরিণত হয়েছে। শঙ্করকে ভোট না দেয়ার আবেদন জানিয়ে পালটা শহরে প্রচারে নামবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন।

তৃণমূল থেকে আসা শিখা চট্টোপাধ্যায়কে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে প্রার্থী করায়ক্ষুব্ধ আদি বিজেপি নেতা অলোক সেন। নিজেই এই কেন্দ্রে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দাঁড়াবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে হেরেছেন, তিনি বিধানসভা ভোটের প্রার্থী?’ শঙ্করকে শিলিগুড়ি কেন্দ্রে প্রার্থী করানোরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। ফাঁসিদেওয়া কেন্দ্রে সতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন আর এক বিক্ষুব্ধ নেতা দিলা শৈবাও। তার নাম তালিকাতে থাকা সত্বেও কেন বাদ দেয়া হল? প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে দল সামলে এসেছি। সংগঠন তৈরী করার পর দল এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষুব্ধ তার অনুগামীরাও। বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে নামবেন তারাও। নেতা, কর্মীদের ক্ষোভের কথা স্বীকার করেছেন বিজেপির শিলিগুড়ির সাধারন সম্পাদক রাজু সাহা। তিনি বলেন, প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সমীক্ষা করার পরই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। বিক্ষুব্ধদের সাথে কথা বলে বিষয়টি মেটানো হবে। সকলকে নিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপাবে দল।

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপির অভ‚তপূর্ব উত্থান হয় বাংলায়। সেই ভোটে বিধানসভা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে ১২১ কেন্দ্রে এগিয়েছিল তারা, যা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের ম্যাজিক ফিগার ১৪৮-এর কাছাকাছি। দুই বছর পর বিধানসভা নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন সাংগঠনিকভাবে বেশ অগোছালো লাগছে মোদি-শাহের দলকে। তৃণমূল ২৯১টি আসনে একইসঙ্গে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর বিজেপি হোঁচট খাচ্ছে। তারা একাধিক দফায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। তারপরই শুরু হয়েছে তুমুল বিক্ষোভ। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর খোদ কলকাতায় বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে বিক্ষোভ হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিজেপি নেতা-কর্মীরা দপ্তর ঘেরাও করে রাখে। এরপর পরের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই মালদা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, জগদ্দল, দুর্গাপুর, দমদমে দলীয় বিক্ষোভ দেখা যায়। কোথাও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর, কোথাও পথ অবরোধ, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ক্ষোভের প্রকাশ করেছেন বিক্ষুব্ধরা। প্রতিবাদে অনেক বিজেপি কর্মীপদ ছেড়েছেন, কেউ দল। কোচবিহার বিজেপির সহ সভাপতি ভবেশ রায় প্রার্থী অসন্তোষের জেরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

বিক্ষোভের নেপথ্যে মূলত দুইটি কারণ উঠে আসছে। বহিরাগত বনাম ভ‚মিপুত্র এবং আদি ও নব্য বিজেপির লড়াই। বিক্ষুব্ধ বিজেপির নেতা-কর্মীদের বক্তব্য, স্থানীয় পর্যায়ে যারা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে রাজনীতি করেছেন, তাদেরকে প্রার্থী করা হয়নি। বহিরাগত ইস্যুতে বরানগরের পার্নো মিত্র, আলিপুরদুয়ারের অশোক লাহিড়ি, দমদমের বিমলশঙ্কর নন্দর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দমদম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, ‘কলেবরে বিজেপি বাড়ছে, এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দল হিসেবে মনোনয়নের সময় এরকম হতেই পারে। আর যারা বিজেপির উত্থানে শঙ্কিত, তারা উদ্দেশ্য নিয়ে বিক্ষোভগুলো করাচ্ছে।’

দ্বিতীয়ত, যারা সদ্য তৃণমূল ও অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাদের কেন প্রার্থী করা হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ করছেন কর্মীরা। সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেখানকার বিজেপি কর্মীরা। জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিরুদ্ধে পান্ডবেশ্বরে বিক্ষোভ হয়েছে। শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে জগদ্দলের প্রার্থী করায় রীতিমতো পথে নেমে, দলের ফ্লেক্স ছিঁড়ে, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা।

শুধু বহিরাগত-ভূমিপুত্র বা আদি-নব্য সংঘাত নয়, প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির অভাব দেখা গেছে। চৌরঙ্গিতে শিখা মিত্রের নাম ঘোষণা করার পরই প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা আপত্তি জানিয়েছেন। ভোটের লড়াই থেকেও সরে গিয়েছেন তিনি। নাম ঘোষণার পর ভোটে লড়তে চাননি বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত। পরে উচ্চতর নেতৃত্বের অনুরোধে সিদ্ধান্ত বদল করেছেন তিনি। আবার কর্মীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছে দল। সেই লক্ষ্যেই বিজেপির প্রথম তালিকায় স্থান পাওয়া আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী অশোক লাহিড়িকে বাদ দেয়া হয়েছে। সূত্র : নিউজ ১৮, ডয়চে ভেলে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজেপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ