পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পুলিশ ঠাকুরগাঁর এক কলেজছাত্রকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করেছে। তার অপরাধ, সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে সফরের বিরোধিতা করে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে। চার মিনিটের ওই ভিডিওতে সে কেন নরেন্দ্র মোদির সফরকে স্বাগত জানাতে রাজি নয়, তার উল্লেখ করে। হুমায়ুন কবির নামের দ্বিতীয়বর্ষের এই ছাত্রকে মন্দিরপাড়া হোস্টেল থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার মোবাইল ফোনটিও জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় বিভিন্ন মহলে বিস্ময় ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন : আমরা আছি কোথায়? নরেন্দ্র মোদি আমাদের দেশের কেউ নন। তিনি ভারতীয় নাগরিক এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। স্বদেশে এবং বিদেশে তার সমালোচনার অন্ত নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় তার সম্পর্কে মতামত, সমালোচনা অতি সাধারণ ব্যাপার। এ জন্য ভারতে কিংবা অন্য দেশে কেউ গ্রেফতার হয়েছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা বলতে চাই, তিনি সমালোচনার ঊর্ধ্বে কোনো ব্যক্তি নন। তার দেশে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বুদ্ধিজীবীরা কী ভাষায় তাকে সমালোচনা করেন, তা আমাদের অজানা নেই। ভারতে ভিন্নমত প্রকাশ বা সমালোচনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে যে সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা হয়, দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে তা দেখানো হয় না। এর ভুরি ভুরি নিদর্শন রয়েছে। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ বা অবদমনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আইন যে নরেন্দ্র মোদির সমালোচনাকারীর বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হবে, এটা কেউ ধারণা করতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে দেশে বিভিন্ন দল ও মতের মানুষ মিটিং-মিছিলসহ নানা কর্মসূচী পালন করছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন। আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে নানা মতের লোক রয়েছে। তারা যে কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার অধিকার রাখেন। এই যদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থায় হয়, তাহলে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করা হলো কেন?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের এটা একটা দৃষ্টান্ত। এরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নেই। পুলিশ এই আইনের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার করছে। এর পরে যারা রয়েছে, তারা সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী। তাদের সংক্ষোভের কোনো কারণ না থাকলেও এই আইনে মামলা করে তারা দাপট দেখাচ্ছে। এছাড়া এমন অনেকে আছে, যারা ব্যক্তিগত শত্রæতাবশত বা অন্য কোনো কারণে এই আইনে মামলা করে প্রতিপক্ষকে জব্দ করছে। এ ব্যাপারে সরকার নির্বিকার। আদালতের কাছ থেকেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ব্যবহার পাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক কালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মোশতাক আহমেদ কারাগারে মারা গেছেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরাই দায়ী। কাটুর্নিস্ট কিশোরের ওপর আটকাবস্থায় যে আচরণ করা হয়েছে, তা অবাঞ্ছিতই শুধু নয়, অত্যন্ত, দুর্ভাগ্যজনকও। তার হয়রানি এখনো চলছে। এর জন্যও সংশ্লিষ্টরা তাদের দায় এড়াতে পারবেনা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তাকে অবাধই বলা যায়। এ ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে ইচ্ছেমতো। এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা এ আইনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে বাহাদুরি প্রদর্শন করছে। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া প্রয়োজন। এতে প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুলিশের সুনাম ও ভাবমর্যদার হানি হচ্ছে। সরকারেরও দুর্নাম হচ্ছে। সরকারকেও তাই বিষয়টি দেখতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের আরেকটি নজির স্থাপিত হয়েছে কিশোরগঞ্জে। অক্ষরজ্ঞানহীন এক কৃষকের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওই কৃষকের পরামর্শে অন্য একজন ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। যতদূর জানা গেছে, মামলার বাদীর সঙ্গে আসামীদের জমিসংক্রান্ত বিরোধ থাকায় তাকে জব্দ করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। আমরা জানি, মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনা করা হয়, মামলাটি আইনানুযায়ী গ্রহণযোগ্য কিনা। এক্ষেত্রে সেটা করা হয়েছে কিনা, সেটাই প্রশ্ন। অভিযোগ আসলেই পুলিশকে বা আদালতকে তা গ্রহণ করতে হবে, দ্রæত তৎপর হবে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। রীতিমত যাচাই করে মামলা নিতে হবে। এই বিবেচনায় ব্যত্যয় ঘটছে বলে অনেক মানুষ অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছে। দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যত মামলা হয়েছে তার প্রায় ৭৭ শতাংশ মামলায় আসামীরা খালাস পেয়েছেন। এতেই বুঝা যায়, হয়রানি ও কষ্ট দেয়ার জন্যই এই আইনে বেশিরভাগ মামলা হয়েছে। পুলিশ করুক বা অন্য যেই করুক, এ আইনে মামলা একটা বড় রকমের জুলুমের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠাকুরগাঁয়ের কিশোর হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে মামলা যে হয়রানি ও ‘শিক্ষা দেয়ার’ জন্যই করা, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই। এই মামলা একটা ভুলবার্তা দেবে। সরকারের বদনাম হবে। সব দায় গিয়ে পড়বে সরকারের ঘাড়ে। কাজেই, হয়রানির উদ্দেশ্য করা মামলা অবশ্যই রোধ করতে হবে। যারা এ ধরনের মামলা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারা মত প্রকাশের অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী। সংবিধানিক অধিকারের সঙ্গেও সাংঘার্ষিক। এ কারণে সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন, বিশেষত সম্পাদক পরিষদ ওইসব ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। মূলত চিহ্নিত ধারাগুলোতে মামলা করেই হয়রানি ও জুলুম করা হচ্ছে। সরকার বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন এবং এই আইনের সর্বপ্রকার অপব্যবহার রোধের ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।