পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বাসদের উদ্যোগে ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ রোডমার্চ উপলক্ষে গতকাল বগুড়া, রংপুর ও সিরাজগঞ্জে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন উত্তরবঙ্গ তথা বাংলাদেশকে মরুভূমি হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করুন’ এই আহ্বানে ঢাকা-তিস্তা রোডমার্চ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণে দেশ আজ মরুকরণের হুমকির মুখে। এক সময় দেশে ১ হাজার ২০০টি নদী ছিল। সরকারসমূহের ভ্রান্তনীতি ও দখল-দূষণের কারণে নদী মরে গিয়ে এখন ২৩০-এ নেমে এসেছে। ভারতের প্রতি নতজানু নীতির কারণে আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আমরা ব্যর্থ হয়েছি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আমাদের শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেকাংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। কিন্তু বাস্তবে ভারত বন্ধু বা হিন্দু রাষ্ট্র নয়, এটি একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। ফলে সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অনুযায়ী ভারত পাশর্^বর্তী দেশের উপর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক-সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
সরকারে ভারতমুখী বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বক্তারা আরো বলেন, সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট ও বন্দর ব্যবহারে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে। অথচ তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা এবং নেপাল-ভুটানের সাথে যোগাযোগের জন্য মাত্র ৩০ কি.মি. করিডোর করতে দিচ্ছে না। সীমান্ত হত্যা, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। আবার বাংলাদেশে নজরদারি করার জন্য উপক‚লে রাডার স্থাপন করছে, তাছাড়া সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প যা চীন নিজ খরছে সমীক্ষা করে দিয়েছে সেটাও না করতে ভারত বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এই হলো বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বের নমুনা! তাই বন্ধুত্বের দোহায় দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে সব উজাড় করে দিবেন জনগণ তা মেনে নিবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বেলা সাড়ে ১১টায় ব বগুড়া শহরের সাতমাথায় ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ রোডমার্চ উপলক্ষে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমরেড এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় পাঠচক্রের সদস্য নিখিল দাস, জয়নাল আবেদীন মুকুল, নব কুমার কর্মকার, আলফাজ হোসেন যুবরাজ, বাসদ বগুড়া জেলা সদস্য মাসুদ পারভেজ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মন, সভা পরিচালনা করেণ বাসদ বগুড়া জেলা সদস্যসচিব সাইফুজ্জামান টুটুল। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুল হক দুলু, সিপিবি বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড আমিনুল ফরিদ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মানব দেহের শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে থাকা নদী ও পলি দিয়ে গঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি আজ পানির অভাবে মরুকরণের হুমকির মুখে। তবে প্রাকৃতিক কারণে নয় এটা মানুষের সৃষ্টি। চীন, নেপাল, ভুটান ও ভারত থেকে আসা নদীগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে জালের মতো ছড়িয়ে গেছে। এই নদীগুলোই বাংলাদেশের প্রাণ প্রবাহ। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে ভারত ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার আগ্রাসী তৎপরতার ফলে পানির প্রবাহ কমে গিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে নদী দখল ও দূষণ। তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে সেচ মৌসুমে রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী কমান্ড এলাকায় ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে যে সেচ সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল; এখন তা কমে শুধু নীলফামারীতে ৮ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তাই এই আগ্রসনের অবসান করতে রোডমার্চে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
সমাবেশে জাতীয় নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে তিস্তাসহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, তিস্তা বাঁচাতে, নদী, পানি ও প্রাণ-প্রকৃতি বাঁচাতে সকল বাম প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহবান, আসুন ভারতের পানি আগ্রাসন, নদী দূষণ ও দখলদারদের রুখে দাঁড়াতে তিস্তা রোডমার্চ এ অংশগ্রহণ করে সফল করি।
স্টাফ রিপোর্টার রংপুর থেকে জানান, নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে “তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন”। সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক সাবেক ছাত্রনেতা পলাশ কান্তি নাগ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সদস্য সবুজ রায়,নিপীড়ণ বিরোধী নারীমঞ্চের সদস্য সুলতানা আক্তার,শ্রমিক নেতা সালাউদ্দিন আহম্মেদ বাবু,সাংস্কৃতিক কর্মী নাসির সুমন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪ নদীতে বাঁধ-ব্যারেজ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের কৃষি-পরিবেশ-প্রকৃতি বিপন্ন দশায় পতিত হচ্ছে। ভারতের প্রতি নতজানু নীতির কারণে আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছি।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-তিস্তা রোড মার্চ শুরু করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় পাঠচক্রের সদস্য নিখিল দাস ও জুলফিকার আলী। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক। সিরাজগঞ্জে বাসদের নেতারা বলেন, খরা মৌসুমে বেশিরভাগ নদীতেই পানি থাকে না। একসময়ের প্রমত্তা নদী এখন খাল-নালায় পরিণত হয়েছে। তারা আরও বলেন, ‘আমাদের শাসকশ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেক অংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। কিন্তু বাস্তবে ভারত বন্ধু বা হিন্দু রাষ্ট্র নয়, একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অনুযায়ী ভারত পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক-সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করতে চায়।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।