Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নোয়াখালী সদরের জালিয়ালে ফিল্মি কায়দায় প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন

নোয়াখালী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২১, ৭:১২ পিএম

নোয়াখালীর সদর উপজেলার জালিয়াল গ্রামে ফিল্মি কায়দায় প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কায়দায় বাড়ি, ঘর ও জমি দখলের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে একটি ভুক্তভোগী পরিবার। শনিবার নোয়াখালী প্রেসক্লাবে ভুক্তভোগী পরিবারের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী আমির হোসেন অভিযোগ করেন, নোয়াখালী পৌরসভার স্থানীয় এক কাউন্সিলরের পুত্র সায়েম উদ্দিন সানির সাথে তার বন্ধুত্বের সুবাদে আমিরকে তার সহযোগী হিসেবে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয়।

এ ব্যবসার ধরন হিসেবে সানি তার বন্ধু আমিরের বাড়ির সামনে একটি গেট ও কাচারি ঘর নির্মাণ করে দেয়ার কথা জানায়। তারা ওই ঘর থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করার সিদ্ধান্তÍ নেয়। এ বাবত সানি তার বন্ধু আমিরকে দৈনিক এক হাজার টাকা বেতন হিসেবে ধার্য্য করে।

এর কিছুদিন পরেই সানি তার বন্ধু আমিরকে প্রস্তাব দেয় যে, ব্যবসার সার্বিক হিসেব নিকেশ আমিরের নামেই পরিচালিত করবে। এ কারণে ‘মা উেইরী ফার্ম’ নাম দিয়ে আমিরের নামে সোনাপুর জিলা বোর্ড, ইউসিবিএল মাইজদী কোর্ট ও এক্সিম ব্যাংক সোনাপুর শাখায় পৃথক পৃথক হিসাব নম্বর খুলে।

এসব হিসেবের বই ওই কাচারীর ড্রয়ারে সংরক্ষিত থাকতো। আমির অভিযোগ করেন, সরল মনে সানি যখন যেভাবে ওইসব চেকে স্বাক্ষর চাইত তিনি সেভাবেই লিখে দিতেন। এরপর আমির জানতে পারেন যে, আসলে ব্যবসার নামে ওই সানি মূলত ইয়াবা, মদ ও বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জিনিসপত্র পাচার করে আসছে।
সে কারণে ২০১৮ সালে হজ্ব শেষে দেশে ফিরে এসেই সানিকে এ জাতীয় ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত না থাকার কথা জানিয়ে দেয়। এরপরই আমিরকে ঘায়েল করতে সানির মাথায় নানা ফন্দিফিকির শুরু হয়।

একপর্যায়ে, আমির এ ব্যবসা থেকে কোনভাবেই পিছু হটলে তাকে দুই কোটি টাকার চেকের অংকের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নিয়ে সর্বস্বান্ত করে দেয়ার ভয়ভীতি দেখায়।
আমির পরবর্তীতে জানতে পারেন যে, তার স্বাক্ষরিত চেকগুলোর কোনটিই সানি কোন ব্যাংকেই উপস্থাপন করেনি। এ জঘন্য প্রতারনামূলক ঘটনাটি আমিরের মা জানার পর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সানি আমিরের মাকে দেখার কথা বলে হাসপাতালে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় নেয়ার প্রস্তাব দেয়। আমিরের মায়ের চিকিৎসা বাবত সব ধরনের খরচ বহন করার কথাও জানায় সে।

পরবর্তীতে, সানির কথামতো এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে তাকে ওই চেকগুলো বাবত বাড়ি রেজিষ্ট্রি করে না দিলে ওই চেকগুলো আর ফেরত দেবেনা এবং তার মাকেও বিনাচিকিৎসায় প্রাণেহত্যা করবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

একপর্যায়ে, আমির দুই কোটি টাকার চেকের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে রাজি হয়ে যায়। এরপর ওই চেকগুলো না দিয়ে বলে পরে দেখা যাবে। আমির হতাশ ও বিষণ্ণ হয়ে ঘটনাটি সুধারাম থানার সে সময়ের ওসি নবির হোসেনকে জানালে তিনি ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে থানায় ডেকে আনেন।

এ সময় ওসির সামনেই ওই কাউন্সিলর এ নিয়ে কোন ধরনের বাড়াবাড়ি না করতে নিষেধ করে আমিরকে থানা থেকে বের করে দেয়। তাদের হুমকি-ধমকি, ক্ষমতার দৌরাত্ম্য ও প্রাণেহত্যার ভয়ে আমির ও ওই পরিবারটি বর্তমানে বাড়িঘর ছেড়ে থেকে অন্যত্র মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এদিকে, গত ৮ মার্চ আমির ঢাকা থেকে নিজের শ্বশুর বাড়ি কবিরহাটের লামছিতে এলে খবর পেয়ে সানি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ওই বাড়িতে গিয়ে সানিকে ধরে জোর করে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে স্থানীয় তোফায়েলের খেয়া নামক স্থানে জনৈক বোরহান উদ্দিন রাকিবের বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও মারধর করে।

একপর্যায়ে, এ বাড়ি থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে জোরপূর্বক আটক করে মারধর শেষে ১৮টি স্ট্যাম্পে সই স্বাক্ষর আদায় করে নেয়। এরপর সানির এক বন্ধু জনৈক পারভেজ ভুক্তভাগী আমিরের নামে মামলা করেছে এবং ওই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে বলে দাবি করে কাদির হানিফ ইউপির সদস্য আবদুর রবকে ফোন দেয়। আবদুর রব এসেই আমিরকে মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে থানায় সোপর্দ করে। তাদের সৃজিত ও পূর্বপরিকল্পিত ওই মামলায় আমির পরদিন আদালত হতে জামিনে মুক্ত হয়। বর্তমানে এ পরিবারটি চরম দু:সময় ও মানবেতর জীবন পার করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নোয়াখালী

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ