Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অ্যাস্ট্রাজেনেকায় ফিরছে স্থগিতকারী দেশগুলো

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২১, ১২:১৪ এএম

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যেসব দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা দেয়া স্থগিত করা হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগ দেশেই আবার ওই টিকা দেয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইইউ-র ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে ‘নিরাপদ এবং কার্যকর’ বলে আখ্যা দেয়ার পর জোটের ওইসব দেশ এই টিকা দেয়া শুরু করবে। শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার সাথে এই টিকার সম্পর্ক থাকার আশঙ্কা থেকে ইইউ- ১৩টি দেশ এই টিকা দেয়া স্থগিত করেছিল। এরপরেই ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) বিষয়টি পর্যালোচনা করে।
পর্যালোচনায় বলা হয়, রক্ত জমাট বাঁধার উচ্চ ঝুঁকির সঙ্গে এই টিকার সম্পর্ক নেই। এখন জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, এবং স্পেন বলছে যে তারা এই টিকা দেয়া আবার শুরু করবে। তবে কবে থেকে এই টিকা দেয়া শুরু হবে, তা দেশগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। যেমন সুইডেন বলেছে যে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের আরও কিছুটা সময় দরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৃহস্পতিবার দেশগুলোকে টিকা নেয়ার আহবান জানিয়েছে। সংস্থাটি এই টিকার বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ শুক্রবার প্রকাশ করবে।
ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি নির্দিষ্ট করে অল্প কিছু ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করেছে। যেসব ঘটনায় শরীরে অস্বাভাবিক অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ছিল, বিশেষ করে তারা সেই সব ঘটনার দিকে নজর দিয়েছে যেখানে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছে। টিকার ব্যবহার স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ওই অঞ্চলে টিকাদান কার্যক্রমে উদ্বেগ তৈরি করে, যার ফলে ইতিমধ্যে এর প্রভাব হিসেবে টিকার যোগানের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্যাটেক্স বৃহস্পতিবার তার দেশের জন্য নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার যে মহামারি দ্রুত গতি পাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ বাড়ছে। পঞ্চান্ন বছর বয়সী মি. ক্যাটেক্সের শুক্রবার বিকেলে টিকা নেবার কথা।
ইএমএ আসলে কী বলছে?
ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সির নির্বাহী পরিচালক এমার কুক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ টিকা নিরাপদ এবং কার্যকরী। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের ফলে মৃত্যু এবং হাসপাতালের চিকিৎসা নেয়ার যে সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে, তার তুলনায় এই টিকার উপকারী দিক হল যে টিকাটি এসব ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে।
মিস কুক বলেন, ইএমএ’র ওষুধ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে যে রক্ত জমাট বাঁধার সামগ্রিক ঝুঁকি বাড়ার সাথে এই টিকার সংশ্লিষ্টতা নেই।
তবে তিনি এও বলেন যে, ইএমএ অল্প সংখ্যক বিরল এবং অস্বাভাবিক কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার সঙ্গে এর সম্পর্ককে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না। তা এই কমিটি প্রস্তাব করেছে টিকার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা, টিকাতে তৈরিতে কি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা জানানো নিশ্চিত করা। মিস কুক বলেন, এই ব্যাপারে অতিরিক্ত তদন্ত করা হচ্ছে।
যদি এটা আমি হতাম, তাহলে আগামীকাল টিকা নিতাম -মিস কুক বলেন। কিন্তু আমি জানতে চাই টিকা নেয়ার পর যদি কিছু হয়, তাহলে আমার তখন কী করা উচিত হবে, এবং সেটার কথা আজ আমরা বলছি। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে নিরাপদ এবং কার্যকরী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পাহন বলেন, যেসব নারীর বয়স ৫৫ বছরের নীচে তাদের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির ব্যাপারে ডাক্তারদের কাছে তথ্য থাকা উচিত, যাতে তারা রোগীকেও সেই তথ্য দিতে পারে।
ইউরোপীয় দেশগুলো কেন এমন করলো?
ওই অঞ্চলে অল্প কিছু মানুষের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার পর ১৩টি দেশ টিকা দেয়া স্থগিত করে। প্রথম সারির এই রাষ্ট্রগুলো বলেছে যে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা এটি স্থগিত করেছিল।
ফ্রান্সের সরকারের উপদেষ্টা বোর্ডের প্রধান অ্যালান ফিসার ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে বলেন, সময় শেষ হয়ে যায়নি। কিছু অস্বাভাবিক এবং সমস্যাযুক্ত ঘটনা ছিল যা এই স্থগিতাদেশ এবং বিশ্লেষণ ঠিক ছিল বলে প্রমাণ করে। জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, টিকা নেয়ার পর কয়েকজনের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনায় তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যান্য দেশ যেমন অস্ট্রিয়া টিকা দেয়া স্থগিত করে। তবে বেলজিয়াম, পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিক সেই সব দেশের মধ্যে রয়েছে যারা বলেছে যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তারা চালু রাখবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে কিছু রাজনীতিবিদ এবং বিজ্ঞানী সমালোচনা করেছেন।
জার্মানির বিরোধীদল ফ্রি ডেমোক্রাটস-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন যে, এই সিদ্ধান্ত দেশটির সামগ্রিক টিকা কর্মসূচীকে পিছিয়ে দিয়েছে। জার্মান গ্রিন পার্টির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইয়ানোস ডাহমেন মনে করেন কর্তৃপক্ষ টিকা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারতো। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহ্যামের ওষুধ নিরাপত্তা গবেষক ডা. অ্যান্থনি কক্স এটিকে একটি খারাপ সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করে বিবিসিকে বলছেন যে এই সিদ্ধান্ত ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে গেছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা কী বলছে?
কোম্পানিটি বলছে যে টিকা নেয়ার ফলে রক্ত জমাট বাঁধার কোন প্রমাণ নেই। তারা বলছে, মার্চের ৮ তারিখ পর্যন্ত ইইউ এবং যুক্তরাজ্যে এক কোটি ৭০ লক্ষের বেশি মানুষ এই টিকা নিয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৭ জনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে বলে বলা হয়েছে।
যে বিশাল সংখ্যক জনগণকে এই টিকা দেয়া হয়েছে, সেই তুলনায় এই সংখ্যাটা অনেক কম, বলছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের পরিচালক যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরি করেছে। তিনি বিবিসিকে সোমবার বলেন, যুক্তরাজ্যে রক্ত জমাট বাঁধা বাড়ছে এমন কোন প্রমাণ নেই। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথা শোনার জন্য এবং টিকার নিতে সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ