পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শেষ নেই। এই দু’টি সেবাপণ্যের দাম বাড়াতে সরকার অতিউৎসাহীই নয়, বেপরোয়াও। দফায় দফায় এদের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ঔচিত্যবোধ ও গ্রাহকদের সঙ্গতির কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। নিরুপায় গ্রাহকরা উচ্চদাম গুনেও তুল্য ও কাক্সিক্ষত সুবিধা পাচ্ছে না। এ মুহূর্তে রাজধানীতে গ্যাসের সঙ্কট ভয়াবহ। সেই সঙ্গে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। গ্রাহকরা রীতিমতো নাকাল হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ না পেয়ে। খবরে প্রকাশ, রাজধানীজুড়েই দেখা দিয়েছে গ্যাসের তীব্র সঙ্কট। গ্যাস না থাকায় চুলা জ্বলছে না। অধিকাংশ এলাকায় দিনের অর্ধেক সময়ই গ্যাস থাকে না। গ্যাস এলেও তার ফ্লো এত কম যে, রান্নাবান্না করতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল রাজধানীতেই নয়, রাজধানীর আশপাশ এলাকা, এমনকি চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই চলছে গ্যাসের সঙ্কট। ফলে আবাসিক গ্রাহকদের সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরাও ভোগান্তি ও ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আবাসিক গ্রাহকদের সঙ্গত অভিযোগ : তারা গ্যাসের স্থিরীকৃত বিল প্রতি মাসে পরিশোধ করে; অথচ গ্যাস পায় না। তাহলে ওই স্থিরীকৃত বিল তারা দিতে যাবে কেন? তাদের এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। যদি এমন হতো, যে যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করবে বা যতটুকু গ্যাস পাবে কেবল ততটুকুরই সে দাম দেবে, সে ক্ষেত্রে তাদের অর্থের অনেক সাশ্রয় হতো। গ্যাসের চুলায় মিটার লাগানোর কথা অনেক দিন থেকে শোনা যাচ্ছে; কিন্তু এ নিয়ে কাজের কাজ কিছু হয়নি। গ্যাসস্বল্পতার কারণে শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যে ক্ষতি হচ্ছে, তার খেসারত সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদেরই দিতে হচ্ছে। কেন তারা এই ক্ষতি স্বীকার করবে?
জ্বালানি বিভাগের সূত্রমতে, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন কম। গৃহস্থালী, সারকারখানা এবং সিএনজি থেকে শুরু করে বেশ কিছু শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে করে এসব খাতে সঙ্কট চলছে। পেট্রোবাংলার মতে, গ্যাস সঙ্কটের বড় একটি কারণ অবৈধ সংযোগ। বরাবরই আমরা লক্ষ্য করে আসছি, গ্যাস সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে গ্যাস সরবরাহ এক খাতে কমিয়ে অন্য খাতে বাড়ানো হয়। যে খাতে কমানো হয়, সে খাতের গ্রাহকরা দুর্ভোগ ও ক্ষতিতে পড়ে। এই ‘সংস্কৃতির’ অবসান হবে বলে মনে হয় না। আমরা এ-ও দেখে আসছি এবং জানি যে, গ্যাসের অসংখ্য অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এই অবৈধ সংযোগ সরবরাহকৃত গ্যাসের একটা বড় অংশ গিলে খাচ্ছে। অথচ অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নেয়া হচ্ছে না এ জন্য যে, তাতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে অবৈধ সংযোগগুলো স্থাপিত হয়েছে। অবৈধ সংযোগের দায় থেকে তাই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্ত থাকতে পারে না। অবৈধ সংযোগের দৌরাত্ম্য শুধু গ্যাসের ক্ষেত্রে নয়, বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ যে কত আছে, তার ইয়ত্তা নেই। এর সঙ্গে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অসাধু ব্যক্তিরা জড়িত। বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগের কারণে বৈধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, শিকার হচ্ছে লোডশেডিংয়ের। এক খবরে জানা গেছে, ডিপিডিসির স্পেশাল টাস্কফোর্স গত এক মাসে ৬২টি শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে বিদ্যুৎ চুরি, রাজস্ব ফাঁকি, অতিরিক্ত লোড ব্যবহার ইত্যাদি অপরাধের সন্ধান পেয়েছে। একই সঙ্গে ১১ দশমিক ১০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা উদঘাটন করেছে। অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি সিস্টেম লস বলেই চালিয়ে দেয়া হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিদ্যুতের সিস্টেম লস আমাদের দেশে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। প্রশ্ন হলো, চুরির খেসারত গ্রাহকরা দেবে কেন?
গ্যাস-বিদ্যুৎ অবাধে চুরি হবে, অপচয় হবে আর তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষতির শিকার হবে গ্রাহকসাধারণ, এটা হতে পারে না। একইভাবে এই দুই অপরিহার্য সেবাপণ্যের দাম যখন-তখন ইচ্ছামতো বাড়ানো হবে, এ-ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, গত কিছুদিন ধরে ফের গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জোর পাঁয়তারা চলছে। কথিত গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিলেও জানা গেছে, দাম বাড়ানো হচ্ছেই। উল্লেখ করা যেতে পারে, সবগুলো গ্যাস কোম্পানিই বর্তমানে মুনাফায় রয়েছে। পেট্রোবাংলাসহ গ্যাস কোম্পানিগুলোর তহবিলে অলস পড়ে আছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তারপরও দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের কাজ ব্যবসা করা নয়। দেখা যাচ্ছে, সরকার সেটাই করছে। গ্রাহকদের সুখ-সুবিধা ও সেবার কথা বিবেচনা করছে না। স্বভাবতই এ আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে এবং সেখানে গ্যাসের দামের বিষয়টি অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো হবে। ওয়কিবহাল মহলের মতে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ ও যুক্তি নেই। যে সঙ্কটের কথা বলা হচ্ছে, চুরি-অপচয় রোধ করলেই তার অনেকাংশেই অবসান ঘটতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা গ্যাস-বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ কর্তন ও অপচয় প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাই। আমরা আশা করি, এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ অবিলম্বে নেয়া হবে। আমরা আরো আশা করি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া ও সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসবে। গ্রাহকদের প্রাপ্য সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।