Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি-সমৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২১, ১২:১৪ এএম

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ইমরান খান প্রতিবেশী ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্কন্নোয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের সাথে সীমান্তবিরোধসহ কাশ্মীর ইস্যুতে চরম বিরোধের মধ্যেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে চলেছেন। এক্ষেত্রে ইমরান খান যতটা আগ্রহী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেন ততটাই অনাগ্রহী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ইসলামাবাদে নিরাপত্তা বিষয়ক দুই দিনের এক সম্মেলনে ইমরান খান বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে ভারতকেই উদ্যোগী হতে হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখলে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার সঙ্গে ভারত সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। এতে ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। ভারতকে এখন ঘুরপথে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হচ্ছে। ভারত যদি প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে তাহলে তা সরাসরি করা সম্ভব। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইমরান খান তার এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সুসম্পর্ক সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছেন। পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার দরজা উন্মুক্ত করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে শান্তি ও সমৃদ্ধির সম্পর্ক জোরালো করার ক্ষেত্রে ইমরান খানের এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য।

ভারতের সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ ছাড়া তার অন্যান্য প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক ভাল অবস্থায় নেই। প্রায় প্রত্যেকের সাথে বন্ধুত্বের বাঁধন আলগা হয়ে পড়েছে। গত বছর করোনাকালে চীনের সাথে সীমান্ত যুদ্ধ, নেপাল এবং ভুটানের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নেপাল-ভুটানের মতো দেশ অনেকটা দূরে চলে যায়। সম্পর্ক থাকলেও আন্তরিকতার ক্ষেত্রে এক ধরনের সূ² পর্দার আবরণ রয়েছে। চীন ও পাকিস্তানের সাথে বৈরী সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। শ্রীলঙ্কার সাথে অনেক আগেই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মালদ্বীপ ও মিয়ানমারের সাথেও সম্পর্কের টানাপড়েন লক্ষ্য করা গেছে। যে আফগানিস্তানকে সবচেয়ে বেশি ভারত নির্ভরশীল হিসেবে গণ্য করা হতো, সেই দেশটিও এখন ভারত থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের এই অবনতির কারণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আভ্যন্তরীণ রাজনীতি। তিনি তার আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য হিন্দুত্ববাদী নীতি অবলম্বন করে চলেছেন। ভারতকে হিন্দুস্থানে পরিণত করা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তান্ডব এবং সেখানে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুদের ভারতছাড়া করার নীতি উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে প্রতিবেশী দেশগুলো ভালভাবে নেয়নি। বাংলাদেশের সরকারের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক থাকলেও এ সম্পর্ক এক তরফা হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। জনগণের এই অসন্তোষ ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং ভারত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে। এই প্রেক্ষাপটে, চীন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপের সাথে বাংলাদেশ বেশ জোরালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এমনকি পাকিস্তানের সাথেও সম্পর্কন্নোয়নের ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য ইতোমধ্যে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ সফর করেছেন, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এসেছেন। নেপাল, ভুটানের সরকার প্রধান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীও আসবেন। ইতোমধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সরকার প্রধানরা ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সুন্দর সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও সময়োচিত নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পর্যায়ে উঠে এসেছেন। তার নেতৃত্বের প্রতি প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা রয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার স্বার্থ হাসিলের অন্তর্মুখী ও আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আন্তরিক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে সমর্থ হননি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক, শান্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি শক্তিশালী অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের উদ্যোগে সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সার্ক সম্মেলন হলে দেশগুলোর সাথে ভারতের বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হতো। এতে পারস্পরিক সম্পর্কের জায়গাটি মজবুত হতো। ভারতের গোয়ার্তুমি এবং আধিপত্যবাদী নীতির কারণে তা স্থবির হয়ে রয়েছে। অথচ সার্ক থেকে সবচেয়ে বেশি ফায়দার সম্ভাবনা ভারতেই রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আশিয়ানভুক্ত দেশগুলো তাদের জোট কার্যকর করে পারস্পরিক শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আন্তঃবাণিজ্য, কানেক্টিভিটির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশে পরিণত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও জোটবদ্ধ হয়ে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। সার্ক কার্যকর থাকলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও এ পথে অনেক দূর এগিয়ে যেত। এতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক যেমন শক্তিশালী হতো, তেমনি পুরো অঞ্চলটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হতো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণ কূটনৈতিক দক্ষতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্থ নেতায় পরিণত হয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দেয়ার একটা বিরাট সুযোগ এখন তার সামনে উন্মুক্ত। তাদের মতে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, সমৃদ্ধি ও পারস্পরিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভাইটাল রোল’ তথা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। পরিস্পরিক সুসম্পর্ক এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির মেইলবন্ধন সৃষ্টি করে এ অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে পারেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন