২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে প্রতি বছর ২০শে মার্চ সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে থাকে সাধারন জনগনের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য মুখের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সবার মধ্যেই উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ মুখের ভালো স্বাস্থ্য আপনাকে দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন যাপনে সাহায্য করে থাকে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পেইন থিম হলো “ইব চৎড়ঁফ ঙভ ণড়ঁৎ গড়ঁঃয” প্রতিদিন আমরা আমাদের মুখ ব্যবহার করে থাকি। অস্বাস্থ্যকর মুখের কারণে মুখের ব্যথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। দাঁতের যত্নে একটি ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। সকালে খাবারের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে। কৃত্রিম পানীয় পরিহার করে পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। ধুমপান বর্জন করতে হবে। এলকোহল পান করা মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শুধু মুখের স্বাস্থ্য নয় বরং এলকোহল পানের কারণে আপনার নন-এলকোহলিক ফ্যাটি লিভার হতে পারে। প্রতি ছয় মাস পর পর ডেন্টাল চেক-আপ করাতে হবে।
বিশে^র মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় মুখের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অধিকাংশ মুখের রোগের ক্ষেত্রেই অন্যান্য শরীরের রোগের মত একই ধরণের রিস্ক ফ্যাক্টর বিদ্যমান থাকে। হৃদরোগ ইতিমধ্যেই শীর্য ঘাতক ব্যাধি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে যা মাঢ়ি রোগের সাথে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি জরিপে দেখা গেচে মাঢ়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া- ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সাথে সম্পৃক্ত। মাঢ়ি রোগের মাধ্যমে যদি “ভিরিড্যানস্ স্ট্রেপটোকক্কাই” ব্যাকটেরিয়া রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাঢ়ি রোগের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবহেলা করবেন না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় পেরিওডন্টাল রোগে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় বা দেখা যায় তার মধ্যে ষ্ট্রেপটোকক্কাস স্যানগুইস বা স্যানগুইনিস হার্টে সংক্রমিত হয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস দেখা দিতে পারে। স্ট্রেপটোকক্কাস স্যানগুইনিস সুস্থ মানুষের মুখে বিদ্যমান, বিশেষ করে ডেন্টাল প্ল্যাকে। সম্পতি গবেষণায় জানা যায় যে, মাঢ়ি রোগের সাথে শুধুমাত্র হৃদরোগ সম্পৃক্ত নয় বরং মাঢ়ি রোগের কারণে ব্রেন স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। তাই মাঢ়ি রোগের ক্ষেত্রে অবহেলা না করে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে। সাধারণত পেরিওডন্টাইটিসের ক্ষেত্রে দাঁত নড়ে যায়। কিন্তু দাঁত বেশি নড়ে গেলেই সেটি পেরিওডন্টাইটিসের কারণে হয়েছে, এমনটি ভাবা ঠিক নয়। আর এ ক্ষেত্রে পেরিওডন্টাইটিস ভেবে দাঁত তোলাও ঠিক নয়। রোগীদেরও দাঁত নড়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে এসে দাঁত ফেলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা মোটেই ঠিক নয়। কারণ পেরিওডন্টাইটিস ছাড়াও মাঢ়ির ক্যান্সারের কারণে দাঁত নড়ে যেতে পারে। এছাড়া রক্তনালীর টিউমার হেমানজিওমা হলেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। সে সব ক্ষেত্রে ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে দাঁত ফেলে দিলে বড় ধরণের সমস্যা যেমন- অঝোর ধারায় রক্তপাত হতে পারে। মোট কথা টিউমার, সিস্ট এবং অন্য কারণেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। মাঢ়ি রোগ বা মাঢ়ির পাশে আলসার বা ঘাঁ দেখা দিলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে। থাইরয়েড গ্রন্থির অচলাবস্থার কারণে মুখের অভ্যন্তরে পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে। আবার পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্য খারাপ হলে সংক্রমনের মাধ্যমে আপনার হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে। লিভারের রোগে অনেক সময় মুখে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়ে বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। পেরিওডন্টাইটিসের সাথে লিভারের রোগ যেমন নন এলকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায়, অর্থাৎ এসব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। মুখের অভ্যন্তরে কোন সার্জারীর পর রক্তপাত বেশি হতে পারে লিভারের রোগে। কোয়াগুলোপ্যাথির জন্য সামান্য আঘাতে মাঢ়ি থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রনিক লিভার ডিজিজে দাঁত ও মাঢ়িতে সবুজ দাগ এবং এনামেল হাইপোপ্লাসিয়া দেখা যেতে পারে। আপনি যদি গর্ভবর্তী হয়ে থাকেন এবং আপনার মাঢ়ি রোগ থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয় ঐ শিশু আকার আকৃতিতে ছোট হবে।
হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে মুখের ক্যান্সার ও সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ কে মুখের ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসাবে গণ্য করা হয়। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস প্রতিরোধে আপনার সন্তানের যৌন জীবন শুরু করার আগে টিকা প্রদান করুন। দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় আমাদের দেশে আমরা ব্যাপক ভাবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকি। দুঃখের বিষয় ডাক্তারের কাছে আসার আগেই রোগী ঔষধের দোকান থেকে মুখস্থ এন্টিবায়োটিক সেবন করে থাকেন। যথাযথ এন্টিবায়োটিক সেবন না করার কারণে অর্থাৎ এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে এক সময় এন্টিবায়োটিক রেজিষ্টেন্ট হয়ে যায়। রোগীর যে কোনো রোগের চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হলে তখন আর এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। এই অবস্থা সুপারবাগ সংক্রমন নামে পরিচিত। সুপারবাগ সংক্রমনের কারণে প্রতিবছর আমাদের দেশে বহুরোগী আইসিইউ-তে অসহায় ভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক সেবন করবেন না।
অতএব, মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যকে নিয়ে ভাববে। মনে রাখবেন মুখ ও মুখগহবরকে অবহেলা করে কখনই আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যকে ভাল রাখা সম্ভব নয়।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইলঃ ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইলঃ [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।