Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মোদির সফরে তিস্তাসহ পানিচুক্তি হচ্ছে না

পশ্চিমবঙ্গের ভোটের পর তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভাবনা ভারতের : সাংবাদিকদের পানি সচিব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০৭ এএম

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পর তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ভারত। গতকাল বুধবার ভারতে থেকে ফিরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এ তথ্য জানিয়েছেন।

ভারতের সাথে পানিসম্পদ বিষয়ক সচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিস্তারিত নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কবির বিন আনোয়ার বলেন, ভারত বলেছে, তাদের যে আগের অবস্থান অর্থাৎ ২০১১ সালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেটাই রয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতপার্থক্যের কারণে বিষয়টি আটকে আছে। তারা বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পরে এটার বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে বাংলাদেশ-ভারতের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। গত বছর ভারতীয় সচিবকে আমরা নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে আমরা এক বছর পিছিয়ে যাই। এই বৈঠকটি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিস্তাসহ আমাদের সবগুলো অভিন্ন নদী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব পজিটিভ ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

পানি সচিব বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা যে পাম্প হাউস নির্মাণ করেছি, প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমাদের চাষাবাদ হবে। সেই পানি সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মহানন্দা নদীতে পানি কমে গেছে, সেটা নতুন করে আলোচনা করেছি। আশা করছি মহানন্দা নদীর পানির বিষয়টিও একটি জয়েন্ট সার্ভে (জরিপ) করে, আমাদের দুই দেশের যে ইঞ্জিনিয়াররা রয়েছেন তাদের নিয়ে যৌথসার্ভে করে দেখা হবে পানির অবস্থা। বাংলাদেশ অংশে পানি কমে যাওয়ায় আমরা বিষয়টি তুলেছি। তিনি বলেন, তাদের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে নির্বাচনের কারণে এ মুহূর্তে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর বা পারস্পরিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর নিয়ে তারা বলছে, নির্বাচনের পর তারা করতে সক্ষম হবেন।

গত মঙ্গলবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও গত ১০ বছরে সই হয়নি। এই চুক্তিটি দ্রুত করার বিষয়ে বাংলাদেশ জোর দেয়। একইসঙ্গে মনু, ধরলা, গোমতি, খোয়াই, দুধকুমার ও মুহুরি নদীর পানি বণ্টনের ওপরও জোর দেন সচিব কবির বিন আনোয়ার। গঙ্গা পানি চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ যে পানি পায়, সেটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য যৌথ সমীক্ষার ওপরেও জোর দেয় বাংলাদেশ। এছাড়া রহিমপুর খাল খনন, তিতাস নদীর পানিদূষণ, পশ্চিমবঙ্গে পানি প্রত্যাহারের কারণে মহানন্দা নদীর পানি হ্রাস ও অববাহিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করে। শুষ্ক মৌসুমে অনেক নদী শুকিয়ে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভিন্ন ছয় নদীর পানি বণ্টন নিয়ে এ বৈঠকেই এসব নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং ভারতের পক্ষে পঙ্কজ কুমার।

বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশন বলছে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে এর মধ্যে ৫৭টি আন্তঃসীমান্ত নদী যার ৫৪টিই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন এবং বাকি তিনটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে। ১৯৭২ সালের মার্চে যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়েছিলো দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদের এক যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হলেও অভিন্ন বাকি নদীগুলোর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। তবে গত কয়েক বছরে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ২০১৯ সালে আলোচনায় আসে ছয়টি নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে যৌথ নদী কমিশন কাঠামোর আওতায় ভারত-বাংলাদেশ পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ