এমন একটি মাইলফলকের ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন সময়ের সেরা তারকা, দলও পেয়েছে ৪-১ গোলের স্বস্তির জয়। ম্যাচের ১৩তম মিনিটে তার গোলেই এগিয়ে যায় বার্সা। এসময় ডি-বক্সের বাইরে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার তাকে ফাউলের ইচ্ছাতেই পায়ে লোথি মারেন। তবুও অবিচল থেকে সেই বল ঘুড়িয়ে এনে অসাধারণ নৈপুণ্যে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। দারুণ ভঙ্গিমায় প্রতিপক্ষের বাধা এড়িয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোলটি করেন তিনি। বল ক্রসবারের ভেতরের কানায় লেগে ভিতরে ঢোকে।
এই গোলটির সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি কীর্তিও গড়েছেন মেসি। লিগ ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা ১৩ মৌসুমে ২০ বা তার বেশি গোল পেলেন বার্সা অধিনায়ক। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার একটু আগে নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলের বড় জয় নিশ্চিত করেন মেসি। আরেকটি পিচিচি ট্রফির পথে ছুটে চলা আর্জেন্টাইন তারকার গোল হলো ২১টি।
মাঝে তার সঙ্গে গোল উদযাপনের উপলক্ষ্য এনে দেন আঁতোয়ান গ্রিজমানও। ব্যবধান দ্বিগুণ করা এই গোলটিও হলো দর্শনীয়। ৩৬তম মিনিটে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য এদিনই প্রথবারের মতো স্প্যানিশ জাতীয় দলে ডাক পাওয়া পেদ্রির বাড়ানো বল ধরে একটু এগিয়ে সামনে ফাঁকা পেয়ে দূর থেকে জোরালো শট নেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি সফরকারী গোলরক্ষক।
বিরতির ঠিক আগের শেষ শটে ব্যবধান কমায় হুয়েস্কা। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে রাফা মির ডি-বক্সে ঢুকে পড়লেও সতীর্থের ক্রসে পা লাগাতে ব্যর্থ হন। তবে টের স্টেগেন এগিয়ে এসে তাকে ফাউল করে বসেন। পেনাল্টি পেয়ে কাজে লাগাতে ভুল করেননি স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড মির।
বিরতি থেকে ফিরেই কাতালান জার্সিতে নিজের প্রথম গোল করে ব্যবধান আরো বাড়ান বার্সেলোনা যুব দল থেকে উঠে আসা তরুণ ডিফেন্ডার অস্কার মিনগুয়েজা। সেটিতেও ছিল মেসির ছোঁয়া। বাঁ দিক থেকে দলনেতার বাড়ানো দারুণ ক্রসে লাফিয়ে হেডে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন অরক্ষিত ২১ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক। সেই ব্যবধান আর ঘুঁচাতে পারেনি অবনমনের শঙ্কায় থাকা তলানির দল হুয়েস্কা।
দারুণ এই জয়ে আবারও পয়েন্ট তালিকায় দুইয়ে ফিরেছে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সফলতম দলটি। শীর্ষে থাকা অ্যাটলেটিকো সঙ্গে রোনাল্ড কোমানের দলের ব্যবধান এখন ৪ পয়েন্টের। লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে বাজে শুরুর পর ছন্দে ফেরা বার্সেলোনা এই নিয়ে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত রইলো। গত ৫ ডিসেম্বরের পর আর হারেনি তারা।
২০০০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে কাতালান ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছিলেন মেসি। চার বছর পর ২০০৪ সালে হয়েছিল তার মূল দলে অভিষেক। এরপর থেকে ক্লাবটিতে সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড গড়েছেন মেসি। আর যে কয়েকটি রেকর্ড ভাঙার পথে আছেন তিনি, তার মধ্যে এটি একটি। আগামী রোববার লিগে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে খেললেই জাভিকে ছাড়িয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নিবেন রেকর্ড ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় দীর্ঘদিন শীর্ষে থাকা সেসার রদ্রিগেসকে ২০১২ সালে টপকে যান মেসি। আর ২০১৮ সালে দলের সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়ী হিসেবে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে ছাড়িয়ে যান তিনি। ক্যাম্প ন্যু’য়ে এ পর্যন্ত রেকর্ড ৩৪টি শিরোপা জিতেছেন ‘লা পুলগা’ নামে পরিচিত সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মেসির গোল এখন ৬৬১। ক্লাবের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট (২৮৯), সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিক (৪৮), এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৭৩)সহ আরও অনেক রেকর্ড শোভা পাচ্ছে তার নামের পাশে। এত এত ক্লাব রেকর্ডের পাশাপাশি ২০১৪ সালে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও নতুন করে লেখেন মেসি।