Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাবতে হবে খাদ্য নিরাপত্তার কথা

ডক্টর আবু জাফর সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনা ধনী আর দরিদ্রের পার্থক্য বিবেচনা না করে আঘাত হানলেও এ অদৃশ্য আঘাত আসছে মূলত গরিবের ওপর। খাদ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে সারা বিশ্বেই পণ্যমূল্য দ্রুত ওঠানামা করছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহ চেইনেও প্রভাব পড়েছে। দামেও হেরফের হচ্ছে। খাদ্য বিভাগের চাল আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ শীর্ষক প্রতিবেদনে দাম বৃদ্ধির জন্য করোনা পরিস্থিতিকে দায়ী করা হয়েছে। এ জন্য মজুদ বাড়ানো ও সংকট এড়াতে আমদানি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে নিরবচ্ছিন্ন খাদ্যপণ্য সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার।

এদিকে মজুদ পরিস্থিতি দ্রুত কমে আসছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ৬ লাখ ৪৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং গম ১ লাখ ৮ হাজার টন। অথচ ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৪৮ হাজার টন এবং গম ১ লাখ ৫৬ হাজার টন। আর মাত্র ছয় মাস আগে খাদ্যপণ্য মজুদ ছিল ১০ লাখ টনের বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশের ১৬ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার ৩ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্র। এর মধ্যে আবার ১ কোটি ৭০ লাখ অতিদরিদ্র। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, করোনা-পরবর্তী দিনগুলোয় বিশ্বমন্দার ভয়াল থাবার পাশাপাশি হানা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য পূরণে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই যখন সার্বিক প্রেক্ষাপট তখন কৃষি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশকে। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১০টিই কোনো না কোনোভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। ফলে সামনের দিনগুলোয় খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আমলে নিয়েই মজুদ ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

খাদ্যপণ্যের মজুদ শক্ত থাকলে যেকোনো দেশের সরকার স্বস্তিতে থাকে। ফলে দুর্যোগ এলে সবার আগে জনসাধারণের জীবনের নিরাপত্তা এবং এরপরই স্থান পায় খাদ্যনিরাপত্তার কথা। করোনায় কাজ হারিয়েছে শ্রমিক শ্রেণী। আঘাতটা তাই বেশি করে আসছে গরিবের ওপর। রাষ্ট্রের সেখানে কী করণীয় আছে গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। কেবল বস্তাভর্তি চাল বিতরণেই সমাধান নেই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিলে সত্যিকার অর্থে রাষ্ট্র কল্যাণমুখী হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে এমন আঘাত এলে তা সামলে ওঠার মতো ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

একনেকের এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি সরকার মানুষের জীবিকা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, গৃহায়ণ এবং কোভিড-১৯ টিকার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ যেন খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসায় কোনো কষ্ট না পায়, কৃষি উৎপাদন যেন বিঘ্নিত না হয়, জনগণ যাতে সহজভাবে জীবন-জীবিকা চালিয়ে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখাও সরকারের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি।

মুজিববর্ষে দেশের সব মানুষকে ঘরের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। তাঁর এই কল্যাণমুখী ঘোষণা সফল করতে সর্বাত্মক কাজ চলছে। এরই মধ্যে সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে, সেখানে বাংলাদেশে যেভাবে অর্থনীতিকে চালু রাখা হয়েছে, সেটা বজায় রাখতে হবে। অন্যদিকে মানুষের খাদ্য সমস্যা না হয়, কৃষি উৎপাদন বিঘ্নিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, এখন গুরুত্ব দিতে হবে খাদ্য উৎপাদন, মানুষকে খাদ্য সরবরাহ এবং সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টিতে। প্রয়োজনে আরো ভ্যাকসিন কিনতে অর্থ সংস্থান রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

একটু পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সরকার করোনা মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের আয় বেড়েছে। অনেক হতাশার মধ্যেও আশা জাগিয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকাশিত মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদন-২০২০-এ বলা হয়েছে, করোনার সময়েও বিশ্বের মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ এগিয়েছে ৬০ শতাংশ। সর্বশেষ মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ আরো দুই ধাপ এগিয়েছে। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে।
লেখক: গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চাইল্ড কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা-ঢাকা।



 

Show all comments
  • Jack+Ali ১৫ মার্চ, ২০২১, ১২:৩২ পিএম says : 0
    We want our PM and her supporter eat nice food, we will eat oxygen, oxygen is free.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদ্য


আরও
আরও পড়ুন