পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একটা সময় গ্রাম-গঞ্জে বনেদি পরিবারের ঘরের ছাদ নির্মিত হতো মাটির তৈরি টালি বা টাইলস দিয়ে। টাইলসের তৈরি ঘর ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে সেই টাইলসের জায়গা নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের এবং রংয়ের ঢেউ টিন। এর ফলে হাজার বছরের ঐতিহ্য অন্যতম এই টাইলস বিলুপ্ত হয়ে যায়। শুধু টাইলসই নয়, মাটির তৈরি বাসন-কোসন থেকে শুরু করে কলস, জগ, মগ, হাড়ি-পাতিল, ফুলের টব, ফুলদানি, খেলনা এবং ঘরের শোভা বর্ধনের বিভিন্ন উপকরণের ব্যবহারও প্রায় শেষ হয়ে যায়। কালের বিবর্তনে এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প মৃতপ্রায় অবস্থায় উপনীত হয়। বংশ পরম্পরায় এর সঙ্গে জড়িত হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পীরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তাদের উৎপাদিত গৃহস্থালির পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদ কমে যাওয়ায় জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রেক্ষিতে, মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে এবং এই সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন শুরু করেছে। এক সময়ের ঐতিহ্য টাইলস নবরূপ দিয়ে উজ্জীবিত যাত্রা শুরু করেছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি পালপাড়ার মৃৎশিল্পরা মাটির তৈরি টাইলসে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। তারা উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে মাটির তৈরি ২০ ধরনের নানা সাইজের টাইলস উৎপাদন করছে। এই টাইলস এখন উৎপাদিত হচ্ছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক কারখানায়। তাদের তৈরি টাইলস ইতালিতে নিয়মিত রফতানি হচ্ছে। এর ফলে এলাকাটি পরিচিতি পেয়েছে ইতালি নগরী হিসেবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হচ্ছে। রফতানির একটি সম্ভাবনাময় নতুন খাত তৈরি হয়েছে। এলাকার মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা পেলে টাইলসের উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা যাবে।
আমাদের মতো উন্নয়নকামী দেশে রফতানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। রফতানি খাত যত প্রসারিত হবে, অর্থনীতি তত শক্তিশালী হবে। এজন্য যত ধরনের প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্য রয়েছে, সেগুলোর রফতানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা সাধারণত প্রচলিত কয়েকটি বড় খাতকে রফতানি বাণিজ্যের উৎস হিসেবে বিবেচনা করি। এর মধ্যে গার্মেন্ট, জনশক্তি, পাট, চামড়া, চা, চিংড়ি ইত্যাদি রয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এসব খাতই বেশি ভূমিকা পালন করে। তবে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আরও অধিক সংখ্যক রফতানি খাত অপরিহার্য। প্রচলিত রফতানি খাতের বাইরে অপ্রচলিত যেসব খাত রয়েছে, সেসব খাতে রফতানির সম্ভাবনা অনুসন্ধান করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, কৃষিখাতে মধ্যপ্রাচ্যে শাক-সবজি রফতানি হচ্ছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম-কাঠাল রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এখন আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য বিলুপ্তপ্রায় মৃৎশিল্প পণ্য টাইলস উৎপাদিত ও রফতানি হচ্ছে। এটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। যে মৃৎশিল্প একেবারে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিল, তা টাইলস রফতানির মাধ্যমে ফের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। একটা সময় বেতশিল্পেও আমাদের সমৃদ্ধি ছিল। বেতের তৈরি সোফা, বুকসেল্প, রেক, ট্রে, ভেনিটিব্যাগ, ফুলদানির ব্যাপক প্রচলন এবং আভিজাত্যের প্রতীক হয়েছিল। প্লাস্টিক, কৃত্রিম কাঠ, প্লাইউডের কারণে এই বেতশিল্পও হারিয়ে গেছে। অথচ নন্দন শিল্পের এই খাতটিকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বৈচিত্রময় পণ্য উৎপাদন করে দেশে-বিদেশে বাজার তৈরি করে রফতানি করা সম্ভভ। এতে নতুন কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে। মৃতশিল্পীরা একটা বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। তারা জানিয়েছে ইতালিতে তারা যে টাইলস রফতানি করছে তা ইতালি যাওয়ার পর সেখানে এক ধরনের কেমিক্যাল লাগানোর ফলে এর রং উজ্জ্বল, মজবুত ও টেকসই হয়। তারা সিরামিক টাইলসের মতো এগুলো মেঝে ও দেয়ালে ব্যবহার করে। ইতালিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাইলসকে উন্নতমানের করা হচ্ছে, এ প্রযুক্তি দেশে ব্যবহার করা গেলে আরও অধিক দামে টাইলস বিক্রি করা যাবে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
মাটির তৈরি টাইলস উৎপাদন ও রফতানির যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা আরও সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রে সরকারের এগিয়ে আসা উচিৎ। এ খাতের উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত প্রণোদনা, প্রযুক্তি সহায়তা এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করলে হাজার বছরের ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব যেমন টিকে থাকবে, তেমনি রফতানির অন্যতম খাতে পরিণত হবে। শুধু সাতক্ষীরা নয়, টাঙ্গাইলসহ দেশের অন্যান্য এলাকায়ও মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য রয়েছে। এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। অন্যান্য সম্ভাবনাময় অপ্রচলিত পণ্যের ক্ষেত্রেও একই নীতি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।