পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি আমাদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জনপদগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য শক্তির চাহিদাও বাড়ছে। একবিংশ শতাব্দীতে শক্তি বা জ্বালানি নিরাপত্তা যেকোনো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে শক্তির নিরবচ্ছিন্ন সরবারাহ আবশ্যক। সাধারণত উৎসের উপর নির্ভর করে মোটামুটি জীবাশ্মশক্তি ও নবায়নযোগ্যশক্তিতে বিভক্ত করা যায় শক্তিকে। জীবাশ্মশক্তি ও নবায়নযোগ্যশক্তির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো জ্বালানি বা শক্তি উৎসটির নবায়নযোগ্যতা অর্থাৎ যে জ্বালানিটি ব্যবহার করা হবে সেটি যেনো সহজে নিঃশেষ না হয়। শক্তির টেকসই স্তর বজায় রাখতে এবং আমাদের গ্রহকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে রক্ষা করার জন্য নবায়নযোগ্যশক্তির উৎসগুলোর উদ্ভাবন ও এর সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি ও কয়লার মতো জ্বীবাশ্ম জ্বালানিগুলোর নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সৌরশক্তি, পানিবিদ্যুৎ ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের সহসা নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা নেই। ফলে, আগামীর পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তির কোনো বিকল্প নেই।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তি হলো এমন শক্তির উৎস, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং এর ফলে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস যেমন, সূর্যের আলো ও তাপ, বায়ুপ্রবাহ, পানিপ্রবাহ, জৈবশক্তি (বায়োগ্যাস, বায়োম্যাস, বায়োফুয়েল), ভূ-তাপ, সমুদ্রতরঙ্গ, সমুদ্রতাপ, জোয়ারভাটা, শহুরে আবর্জনা, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। নবায়নযোগ্য শক্তিকে কখনো কখনো সবুজশক্তি বা পরিষ্কারশক্তি নামেও অভিহিত করা হয়।
শিল্পবিপ্লবের পর থেকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রাধান্য পেয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পাশাপাশি মানবস্বাস্থ্যের জন্য বড় প্রভাব ফেলে। শক্তির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে তিন-চতুর্থাংশ বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটে এবং এটা স্থানীয় বায়ু দূষণের জন্য দায়ী, যা এমন এক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে, যাতে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
বাংলাদেশ সর্বদা পরিবেশবান্ধব উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়। নাবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে ২০৪১ সালের মধ্যে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৭ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসবে। নেট মিটারিং গাইডলাইন সোলার রুফটপ ব্যবহার করতে গ্রাহকদের উৎসাহিত করবে। বাংলাদেশে সোলার হোম সিস্টেম ৫৮ লাখ। অফ-গ্রিড এলাকা আলোকিত করতে সোলার হোম সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সৌর শক্তি, হাইড্রো, বায়োগ্যাস, বায়োমাসকে, জিয়োথারমাল, ওয়োভ এবং টাইডাল এনার্জি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রধান উৎস। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সবচেয়ে সম্ভাবনাময় উৎস হচ্ছে সৌর শক্তি। সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে যার সিংহভাগই এসেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অফগ্রিড এলাকায় স্ট্যান্ড এলোন হিসাবে স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেম থেকে। দীর্ঘমেয়াদী গড় রৌদ্রজ্জ্বল তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে উজ্জ্বল রৌদ্রের সময়গুলির সময়কাল দৈনিক ৩ থেকে ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এগুলি ইঙ্গিত দেয় যে দেশে সৌর তাপ এবং ফটোভোলটাইজ প্রয়োগের ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিবেশের বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশে জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উতপাদনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এমতাবস্থায়, বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোয় পৃথিবীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিবর্তে কয়লা, তেল, গ্যাস ও পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উতপাদন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি দৃশ্যমান।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউটেড জেনারেশনকে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে নেট মিটারিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নেট মিটারিং পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ গ্রাহক নিজ স্থাপনায় স্থাপিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক সিস্টেমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নিজে ব্যবহার করে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ বিতরণ গ্রিডে সরবরাহ করে। এভাবে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল পরবর্তী মাসের সাথে সমন্বয় করা হয়। এ প্রক্রিয়ার ফলে গ্রাহকের বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় হয়। এ পর্যন্ত প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের পঞ্চাশটিরও অধিক দেশে নেট মিটারিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। বর্ণিত পরিস্থিতিতে, অনগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ গ্রাহকগণকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে নেট মিটারিং সুবিধা প্রদানের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ নেট মিটারিং পদ্ধতি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা হোক, নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃক বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকর উপাদান নির্গত না হওয়ায় পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সীমিত, তবু জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ বিপর্যয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে সমগ্র বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, দ্য এনভায়রনমেন্ট রিভিউ ম্যাগাজিন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।