Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুনোখুনিতে উদ্বেগ-শঙ্কা

চট্টগ্রামে সহিংসতার সাথে বাড়ছে চুরি ডাকাতি দুস্যতা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামে অপরাধীদের দাপট কমছে না। অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতার সাথে বাড়ছে খুনোখুনি। একের পর এক খুনের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ-শঙ্কা বিরাজ করছে। ছয় দিনে জেলা এবং মহানগরীতে ছয়টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বিরোধেও লাশ পড়ছে। সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধে ঘটছে নিষ্ঠুর খুনের ঘটনা।

চলছে অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য। ছিনতাই, চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া অপরাধীরা। বাড়ছে মাদক কারবারিদের দাপট। নানামুখী অপরাধে জনমনে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, তারা অপরাধ দমনে সক্রিয় রয়েছেন।
পেশাদার অপরাধীদের সাথে পাল্লা দিয়ে সক্রিয় ভাসমান অপরাধীরা। পাড়ায় মহল্লায় চলছে বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। আধিপত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে হাঙ্গামায়। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর হালিশহর থানার ছোটপুলে ছুরিকাঘাতে খুন হয় এক কিশোর। নিহত মো. কাউসার (১৬) ছোটপুল শিপিং কলোনির মো. কামালের ছেলে। থানা পুলিশ জানিয়েছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং ইভটিজিংয়ের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটে। নগরীতে কিশোর গ্রুপের বিরোধে প্রায়ই খুনসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
বৃহস্পতিবার নগরীর পতেঙ্গার কাটগড়ে আকিজ কোম্পানির একটি গুদামে হানা দিয়ে ডাকাত দল দারোয়ানকে খুনের পর লুট করে। দারোয়ান রাজিব উদ্দিন কবিরকে (৪০) শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানায়, জিএম গেইট কলোনি এলাকায় চারতলা একটি ভবনের নিচতলায় আকিজ গ্রুপের সেলস অফিস। ভোরে ট্রাক নিয়ে একদল ডাকাত সেখানে হানা দেয়। রাজিব তাদের বাধা দিলে হাত-পা বেঁধে তাকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৫০ কার্টন সিগারেট ও নগদ এক লাখ টাকা লুট হওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
গুপ্ত হত্যার ঘটনাও ঘটছে। যেখানে সেখানে মিলছে অজ্ঞাত লাশ। পরিচয় সনাক্ত না হওয়ায় এসব খুনের রহস্যও অজানা থেকে যাচ্ছে। মঙ্গলবার নগরীর আগ্রাবাদে নালায় এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ জানায় তাকে হত্যার পর লাশ সেখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে। মো. ফারুক নামে ওই যুবক বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করত।
সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরোধেও খুনের ঘটনা ঘটছে। গত রোববার রাতে নগরীর আরেফিন নগরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগের এক কর্মী নিহত হন। নিহত মোহাম্মদ ইমন (২৭) ওই এলাকার নুর কাশেমের ছেলে। পুলিশ জানায়, আরেফিন নগর এলাকার সোহেল ও রিপন নামে দুজনের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। ইমন বায়েজিদ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। সোমবার রাতে ইমনের দাফন শেষে দুই পক্ষের মারামারিতে আরও দুই জন ছুরিকাহত হন। এই খুনের ঘটনায় পুলিশ ছয় জনকে গ্রেফতার করে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলার সাতকানিয়ায় স্থানীয় বিরোধে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা মো. বেলাল (৪৮)। বেলাল খাগরিয়া ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে চন্দনাইশ ও পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় বিরোধে দুই জনের প্রাণ যায়। তার আগে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও তিন জন খুন হন। পারিবারিক বিরোধেও ঘটছে খুনের ঘটনা। বুধবার পটিয়ার কুসুমপুরায় কথা কাটাকাটি জেরে ভাতিজার হাতে খুন হয়েছেন চাচা আবুল কালাম (৪৫)। জায়গা-জমি নিয়ে আগে থেকেই কালামের সঙ্গে তার বড়ভাই মোহাম্মদ মুসার বিরোধ ছিল। বাড়ির সামনের গলিতে একটি পানি রাখার পাত্র নিয়ে মুসার ছেলে সৌরভের সঙ্গে কালামের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সৌরভ চাচা কালামকে ছুরিকাঘাত করে।
গত ৩ মার্চ সাতকানিয়ার কেঁউচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হককে (৮০) রডের আঘাতে হত্যা করেন বাড়ির কেয়ারটেকার জমির উদ্দিন (২৬)। পরে ছুরি দিয়ে নিজের পা কেটে, মুখ ও পা বেঁধে ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে জমির তার মনিবকে হত্যার দায় স্বীকারের পাশাপাশি ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন। তার দাবি বেতন না বাড়িয়ে উল্টো গালি দেওয়ায় সে একাই আব্দুল হককে খুন করে।
গত ৫ মার্চ নগরীতে এক কিশোর, যুবক ও এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন ইমন হোসেন খান (১৫), মো. মনির হোসেন (২২) ও নিহা আক্তার বৃষ্টি (২০)। ৭ মার্চ রাতে নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে মম্মি বড়–য়া নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। এই চারটি ঘটনাকে পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যা বলা হলেও পুলিশ বলছে রহস্যজনক। এসব ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
নগরীতে নানা ফাঁদ পেতে অপহরণের ঘটনাও ঘটছে। প্রেমের ফাঁদ পেতে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিম্মি করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় পুলিশ বাকলিয়া থেকে চারজনকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে। থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, এই চক্রে নারীসহ দশ সদস্য আছে। তারা নানা কৌশলে লোকজনকে তাদের আস্তানায় নিয়ে আটকে রাখে। পরে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো শহীদ আলম ওরফে লেদু (৩০), গিয়াস উদ্দিন (২৯) ও মো. রায়হান (২৮)। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ