পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে এমন কোনো দূষণ নেই যা হচ্ছে না। নদীদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ থেকে শুরু করে যত রকমভাবে পরিবেশ দূষণ করা যায়, তার সবই হচ্ছে। এসব দূষণ প্রাকৃতিকভাবে হচ্ছে না, বরং মানুষই তা করছে। দেশের পরিবেশদূষণ নিয়ে বহু লেখালেখি হচ্ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন দৈনিকে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বা পরিবেশ অধিদফতরের কোনো টনক নড়ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীরদূষণ ও বায়ুদূষণ এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, এর প্রতিক্রিয়ায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। মানুষ নানা ধরনের কঠিন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ নগরীর একটি হিসেবে ঢাকা বরাবরই চিহ্নিত হয়ে আসছে। এক বায়ুদূষণে রাজধানীর কত মানুষ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। অথচ নদী ও বায়ুদূষণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় না, তা মানুষের দ্বারাই হচ্ছে। রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীর অবৈধ দখল এবং তরল ও কঠিন বর্জ্যরে অবাধ নির্গমন নদীগুলোকে মেরে ফেলেছে। স্বাভাবিক কোনো স্রোতধারা নেই। অন্যদিকে, রাজধানীতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কারণে বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নেয়ার উপায় নেই। দালান-কোঠা, যানবাহন, গাছ-গাছালির পাতায় পাতায় ধুলোর পুরো আস্তরণ পড়ে এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নগরবিদরা মনে করছেন, পরিবেশদূষণের এ দায় সরকার ও সংশ্লিষ্টরা এড়িয়ে যেতে পারে না। তাদের উদাসীনতা ও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে নদ-নদীর অবৈধ দখল-দূষণ এবং বায়ুদূষণ রোধ করা যাচ্ছে না।
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধে সরকার হাজারিবাগের ট্যানারিশিল্প সভারে স্থানান্তর করেছে। দেখা যাচ্ছে, বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর জন্য যে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়েছে, তা সাভারের দুই নদী ধলেশ্বরী ও বংশীকে দূষণ করে চলেছে। এক নদী বাঁচাতে আরও দুটি নদী মেরে ফেলার অপকর্ম চলছে। বলা হয়েছিল, সাভার শিল্প এলাকায় ট্যানারি স্থানান্তর করা হলে বুড়িগঙ্গার দূষণ অনেকটাই কমে যাবে। সেখানে অত্যাধুনিক কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে। এতে চামড়ার তরল ও কঠিন বর্জ্য শোধন করে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে। দেখা যাচ্ছে, শোধনাগার থাকা সত্তে¡ও তা কোনো কাজে আসছে না। এ নিয়ে চলছে চীনা কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক দোষারোপ। ট্যানারি মালিকরা অভিযোগ করেছেন, শোধনাগার পরিপূর্ণভাবে স্থাপন না করেই চালু করা হয়েছে। শোধন সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তাদেরকে খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলতে হচ্ছে। তা গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরী ও বংশী নদীতে। এতে নদীর মাছ থেকে শুরু করে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ নানা রোগ-বালাইতে আক্রান্ত হচ্ছে। নদী দুটি বুড়িগঙ্গার মতোই দূষিত হচ্ছে। অন্যদিকে বুড়িগঙ্গার দূষণ আগের মতোই চলছে। এ নদীতে রাজধানীর গৃহস্থলী থেকে শুরু করে কলকারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য অবাধে ফেলা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধে গত বুধবার হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। বলা বাহুল্য, পরিবেশদূষণ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হচ্ছে। অথচ এ দূষণ রোধের দায়িত্ব সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের। হাইকোর্টের নির্দেশনার অর্থই হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দূষণ রোধে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। রাজধানীর বায়ুদূষণ প্রতিরোধের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হলেও তা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কেবল পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেই মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশনকে পানি ছিটাতে দেখা যায়। এতে আরও বিপত্তি বাড়ে। সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য, রাজধানীতে ধুলোর অন্যতম উৎস বিভিন্ন বড় বড় মেগাপ্রকল্প। এসব প্রকল্পের খনন ও বিভিন্ন উপকরণ থেকে ব্যাপক হারে ধুলোবালি উৎপাদিত হয়। আবার রাস্তা-ঘাট খোঁড়াখুঁড়ি করে দিনের পর দিন ফেলে রাখায় শুষ্ক মৌসুমে তা ধুলোর কারখানায় এবং বর্ষায় পানি জমে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়। এতে নগরবাসী পড়ে উভয় সংকটে। ধুলোর কারণে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে, পানির নিচে তলিয়ে থাকা গর্তে পড়ে আহত হচ্ছে। বিশ্বের কোনো নগরীতে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এমন অপরিকল্পিত ও দূষণ সৃষ্টি করে হয় কিনা, আমরা জানি না। নদ-নদীতে শহরের গৃহস্থালী ও শিল্পকারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার এমন নজির কোথাও নেই।
রাজধানীর ভূখন্ড ও চারপাশের নদ-নদীর পরিবেশ যেভাবে দূষণ চলছে, তাতে রাজধানী যেমন অবাসযোগ্য হয়ে পড়েছে, তেমনি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরবাসীর জীবন ক্ষয়ে যাচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে। মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর এই দায় কে নেবে? নিশ্চিতভাবেই এই দায় পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের উপর বর্তায়। তারা রাজধানীর স্বাস্থ্যপোযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার কারণে রোগাক্রান্ত মানুষের অসুস্থ্যতা ও মৃত্যুর দায়ও তাদের নিতে হবে। জনস্বাস্থ্যের এই ক্ষতিপূরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিভাবে দেবে? বছরের পর বছর ধরে চলা নদী ও বায়ুদূষণ নিরসন করতে না পারায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে, তা চলতে পারে না। পরিবেশ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ রোধের দায়িত্ব, তা তাদের যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এটা তাদের এবং সরকারের অপরিহার্য দায়িত্ব। কেবল পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন ও আদালতের নির্দেশ দিলে নামকাওয়াস্তে কিছু উদ্যোগ নিলে হবে না। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিয়মিত এবং যথাযথ কর্মকান্ডের মাধ্যমে পালন করে রাজধানীর বাসপোযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।