পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি করেছে। জানুয়ারির শুরুতেই ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০০ কোটি ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ৬ মাসে এই টিকা বাংলাদেশে পাওয়ার কথা। তার ভিত্তিতে গত দুই মাসে দুই দফায় ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। অথচ চুক্তি অনুযায়ী ওই সময়ে এক কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। সিরামের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার যে পরিমাণ বাংলাদেশকে দেয়ার প্রতিশ্রæতি করে, বাস্তবে সেই প্রতিশ্রæতি রক্ষা করেনি ভারত। আর এক্ষেত্রে কাজ করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টিকা রাজনীতি। অথচ বাড়তি বাহবা পেতে মোদী সরকার ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দেয়। দেশের করোনা বিশেষজ্ঞদের কথা হলো, উপহারের প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশকে প্রাপ্ত টিকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী যোগানের বিষয়ে আমরা একটু চিন্তিত তো আছিই। তবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এখন পর্যন্ত হতাশ হওয়ার মতো কোন কিছু আমরা পাই নি। তার মানে আমরা টিকা পাব।
মূলত মোদি ভোটের রাজনীতিতে টিকাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি নিজের ইমেজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিরাম ইনস্টিটিউটকে নতুন নতুন দেশকে টিকা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। আর এরই প্রেক্ষিতে সিরামেও টিকার ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নরেন্দ্র মোদির এই টিকা রাজনীতির জন্যই বাংলাদেশের সময়মতো টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অথচ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে টিকার জন্য আন্দোলন বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। রাজ্যের লোকজন সিরাম ইনস্টিটিউটের টিকা যাতে নিজেরা আগে পেতে পারেন সে ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছেন। এদিকে বাংলাদেশেও প্রতিদিনই চাহিদা বাড়ছে টিকা গ্রহণকারীদের। এমনকি ফ্রন্টলাইনার হিসেবে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা প্রদাণের তারিখ না পাওয়ায় অনেকের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও চুক্তি অনুযায়ী সিরামের টিকা সময়মতো না একই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার নতুন করে আরও চার কোটি ডোজ টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে তিন কোটি ডোজ কেনার যে চুক্তি করেছে। তার ভিত্তিতে গত দুই মাসে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যায়। পাশাপাশি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ২০ লাখ টিকা পেয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৭৮ জন মানুষ টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্যে ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৩ জন টিকা গ্রহণ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের মাঝে এখন টিকা নেয়ার আগ্রহ যে হারে বাড়ছে, তাতে টিকার যোগানে ঘাটতি হলে চাহিদা সামলানো কঠিন হতে পারে। একই সঙ্গে যারা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন, তাদের সময়মতো টিকা দেয়ার জন্য একই পরিমান দ্বিতীয় ডোজ রেখে দিতে হবে। দ্বিতীয় ডোজ শুরু হচ্ছে আগামী ৭ এপ্রিল। আর তাই চুক্তি অনুযায়ী সিরাম থেকে দ্রæত সময়ের মধ্যে টিকা না পেলে বাংলাদেশের জন্য টিকা কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম টিকা সময়মতো টিকা না পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, টিকার জন্য তাগাদা দিয়ে আমরা ইতিমধ্যে বেক্সিমকোকে চিঠি দিয়েছি। বেক্সিমকোও জানিয়েছে, সঠিক সময়ে টিকা আমরা পাবো। গত মাসের বকেয়া ৩০ লাখ এবং বর্তমান মাসের ৫০ লাখ মিলিয়ে মোট ৮০ লাখ টিকা আসবে। যদিও কবে টিকা পাচ্ছি সে বিষয়ে সঠিক কোন তারিখ না বললেও টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি বলে জানান তিনি। প্রতিদিনই টিকার চাহিদা বাড়ছে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, টিকা হাতে পেলেই সব কিছু ভালোভাবে করা যাবে। আশা করছি আমরা সেটা পারব। তিনি বলেন, কোভ্যাক্স থেকে মার্চের মধ্যে কিছু টিকা আসার কথা রয়েছে। জুনের মধ্যে কোভ্যাক্স ১ কোটি ৯ লাখ টিকা দেবে বাংলাদেশকে। কিন্তু এই টিকা কবে আসবে তার দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে এই মার্চের মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করতে। আমরা সেগুলো মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করছি। কিন্তু সব কিছুই নির্ভর করছে টিকা হাতে পাওয়ার ওপর।
সূত্র মতে, আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই দেশের সব শিক্ষক ও ১৮ বছরের ওপরের বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ঘোষণার পরপরই নড়েচড়ে বসেন টিকার দায়িত্বে নিয়োজিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সঠিক সময়ে টিকা পাওয়া নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। চলমান টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি কিভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করা যাবে, তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাঁদের মধ্যে। আর এই উদ্বেগ বাড়িয়েছে সঠিক সময়ে সিরাম থেকে টিকা না পাওয়ায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, টিকার জোগান অনেকটাই ঝুলে গেছে। এতে করে চলমান টিকাদান কার্যক্রম নিয়েই তারা একরকম হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে এখন কিভাবে মার্চ মাসের মধ্যেই সব শিক্ষক ও ১৮ ঊর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করা যাবে, সেটা বড় চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মাধ্যমে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আরো তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগের চুক্তি স¤প্রসারণ, নাকি নতুন করে চুক্তি হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানা গেছে।
টিকা নিয়ে সঙ্কটের কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্যসচিব (সেবা বিভাগ) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, টিকা পাওয়া নিয়ে কিছুটা ক্রাইসিস তো আছেই। আমরা সিরাম থেকে আরো তিন কোটি ডোজ টিকা এনে দেয়ার জন্য বেক্সিমকোকে বলেছি। তারা চেষ্টা করছে। কিন্তু সেরামেও টিকার ক্রাইসিস আছে। ফলে বেক্সিমকো কখন কতটুকু টিকা আনতে পারবে, সেটা আগেভাগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গত মাসে সিরাম থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) থেকেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকার এক কোটি ৯ লাখ আট হাজার ডোজ বরাদ্দ করা হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। কোভ্যাক্স থেকেও বড় একটি অংশ আসার কথা ছিল। কিন্তু সিরাম থেকে এসেছে ২০ লাখ, অর্থাৎ ৩০ লাখ ডোজ ঘাটতি। আর কোভ্যাক্স থেকে তো মোটেই আসেনি। অথচ ওই টিকার হিসাব ধরেই পরিকল্পনা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনা এখন ঠিক রাখা যাচ্ছে না। চাহিদা থাকলেও বিভিন্ন কৌশলে টিকাদান নিয়ন্ত্রিত রাখতে হচ্ছে। তা না হলে মানুষের যে ভিড় ছিল, তাতে গত এক মাসেই দিনে দুই লাখ ডোজ করে প্রায় ৬০ লাখ ডোজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত দেশে এসেছে মোট ৯০ লাখ টিকা, যার মধ্যে ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৩ জন টিকা গ্রহণ করেছেন। গ্রহণকারীদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ রেখে দিয়ে হিসাব করলে টিকা বাকী রয়েছে আর মাত্র ৭ লাখ ৬২ হাজার ৯৩ ডোজ। যা দিয়ে আর মাত্র ৩ লাখ ৩১ হাজার ৪৬ জনকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। অথচ গতকাল বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্তই ৫৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৭৮ জন মানুষ টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে শিক্ষক ও ১৮ ঊর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৬০ লাখ ডোজ টিকার দরকার হবে।
সূত্র মতে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু করতে হবে। এ ছাড়া চলতি মার্চ মাসের বাকী ২০ দিনে দুই লাখ ডোজ করে হলেও সাধারণ মানুষের জন্য কমপক্ষে আরও ৪০ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। এপ্রিলের দ্বিতীয় ডোজের জন্য কমপক্ষে ৩০ লাখ টিকা লাগবে। আর ওই মাসে প্রথম ডোজ চালু রাখতে দরকার হবে ৬০ লাখ ডোজ। কিন্তু কিভাবে এই টিকা জোগাড় হবে, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। এছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশেই টিকা কার্যক্রম চলছে শ্লথ গতিতে। নিবন্ধন সম্পন্ন করেও অনেকের অভিযোগ, এসএমএস না পাওয়ায় অনেক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। আর এ নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রতিদিনই ক্ষোভ বাড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন জানান, তিনি গত ২০ ফেব্রæয়ারি টিকা নিতে স্বামী-স্ত্রী নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তারা কেউ এসএমএস পাননি। কবে পাবেন তারও নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কী এক ঝামেলাতে পড়লাম, এখানে আসার পর কেউ কোনো জবাব দিতে পারছে না, কেবল এখান থেকে সেখানে ঘোরাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগাযোগ করা হলে তাকে জানানো হয়, যারা এ পর্যন্ত টিকার নিবন্ধন করেছেন, তাদের সবাইকে তো একদিনে টিকা দেয়া যাবে না। রেজিস্ট্রেশন যেহেতু হয়েছে, সেখানে টিকা অবশ্যই দেয়া হবে। হয়তো আজ হচ্ছে না, কাল হবে, নয়তো পরশু, অথবা তার পরের দিন। ডেট পাননি মানেই যে কেউ ডেট পাবেন না-বিষয়টি তা নয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (টিকাদান কর্মসূচি) ডা. শামসুল হক টিকার বিষয়ে ধৈয্য ধারণ করতে বলেছেন। পাশাপাশি সবকিছু সঠিক সময়েই হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক প্রফেসর ডা. মিজানুর রহমান বলেন, নিবন্ধন যেহেতু হয়েছে টিকার জন্য এসএমএসও পাবেন। আজ না পেলে কাল পাবে, নয়তো পরশু পাবে। এটা কোন সমস্যা না। সবাই এসএমএস পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।