পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকার অবৈধ, এ সরকার খুব দুর্বল। তারা নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কালো আইন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তেমনি একটি কালো আইন। মানুষের বাকস্বাধীনতা ও কণ্ঠরোধ করার এ কালো আইন বাতিল করতে হবে। সেই সাথে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান।
সারা দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সমাবেশের অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই দুর্বল সরকার নিজেদেরকে রক্ষার জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করে। তিনি বলেন, আপনারা মোবাইল বলেন, ফেইসবুক খোলেন-এগুলো ওরা নিয়ন্ত্রণ করে, মনিটর করে। কে কোথায় কী বলে না বলে ওসব তারা দেখে। তারা যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরাইল থেকে। যে দেশের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যেটা আল-জাজিরা টেলিভিশন আবার প্রচার করে দিয়েছে। কী ভয়াবহ প্রচার। সেই প্রচারে আমরা বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমাদের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট চিফ জাস্টিস বলেছেন, লেখালেখি করা ভালো, কিন্তু রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়-এটা আমরা মেনে নেব না। আমরা প্রশ্ন হচ্ছে যে, অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে হবে যে, কোন কাজে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। লেখালেখি করলে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। সেজন্য মুশতাক আহমেদকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর সেজন্য কার্টুনিস্ট কিশোরের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়, তার মাথায় রক্তপাত হয়। সেখানে ইমেজ নষ্ট হয় না রাষ্ট্রের? আমরা যখন দেখি প্রায় ৭শ’ লেখক লেখালেখি করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকা পড়ে আছেন তখন রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয় না?
তিনি প্রশ্ন রেখে আরো বলেন, ‘আমরা যখন দেখি, আমেরিকার ১০ জন সিনেটর সিনেটে চিঠি দিয়ে বলছে, বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, বাংলাদেশে বিচারবহিভূত হত্যাকান্ড হয়, বাংলাদেশে বিনা বিচারে মানুষকে আটক রাখা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় চরমভাবে, তখন ইমেজ নষ্ট হয় না? যখন সাত-সাতটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বিবৃতি দেয়, বাংলাদেশে মানুষের মানবাধিকার নেই, লঙ্ঘিত হচ্ছে অন্যায়ভাবে, এখানে হয়রানি-নিপীড়ন করা হচ্ছে, তখন ইমেজ নষ্ট হয় না?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই, নির্বাচন ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তো আজ্ঞাবহ ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ। সরকারকে কিছু বলতে হয় না, তার আগে বলে দেয়, খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব জয়লাভ করে। এ নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। আজকে এই জনসভা থেকে আমরা ঘোষণা করতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে, নতুন করে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কি ভোট দিতে গেলে ভোট দিতে পারি? এই যে আমাদের ৬ জন মেয়র প্রার্থী এখানে বসে আছেন তারা কেউ ভোট করতে পারেননি। তাদের ভোটের দিন সবাইকে বের করে দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে এবং সন্ধ্যা বেলা তাদের পছন্দমতো ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নয়, ২০১৪ সালে যে সংসদ নির্বাচন হয়েছে সেখানেও নির্বাচন কমিশন ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী ঘোষনা করে। আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেইনি। আবার ২০১৮ সালে কৌশল পরিবর্তন করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে নিয়েছে। লজ্জা হয়, চিফ ইলেকশন কমিশনার তিনি যখন বলেন যে, ভোট সুন্দর হযেছে, সুষ্ঠু হয়েছে। অথচ তারই একজন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাহেব তিনি খুব পরিষ্কার করে বলেছেন, এ নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের, ভোট পরিচালনা করার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্য নয়।
নির্বাচনের প্রতিবাদে জানাতে বিভিন্ন মহানগরীতে সমাবেশ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কেন এতো ভয়? জনগণের যে কথা বলার অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেন? জনগণের ভোট দেয়ার যে অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেন? কারণ আমরা জানি, জনগণ যদি ভোট দেয়, ভোট দিতে পারে তাহলে আপনারা কোনদিনই আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে কাদের অবদান ছিলো তার সঠিক ইতিহাস জানাতেই বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, শুধুমাত্র একজনের জন্য, একটি গোষ্ঠীর জন্য, একটি পরিবারের জন্য, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এদেশে স্বাধীনতা আসেনি। বছরের পর বছর ধরে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের পরিশ্রম, আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছে। সেই স্বাধীনতাকে তোমরা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ। আমি জানি না আমি কী করে স্বাধীন বলবো। আমি বলতে পারি না, আমার সেই অধিকার নেই, আমি কথা বলতে পারি না। আমার লেখার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে। লিখলে জেলে দিচ্ছে, জেল থেকে জামিন পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে আমার ন্যায্য হিস্যা রয়েছে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সেই হিস্যাও চাইতে পারবো না।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকালে সীমান্ত হত্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে সরকারের এতো দুর্বলতা কেন? কেন সে নিজের নাগরিকের কথা বলতে ভয় পায়, কেন কানেকটিভি ওরা চায়? আমরা চাই কানেকটিভি হোক, বাণিজ্য বাড়–ক, প্রসার ঘটুক। কিন্তু পোর্ট দিয়ে দেব, এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে দেব, রাস্তা ব্যবহার করতে দেব, ফেনী নদীর পানি দেব, বিনিময়ে আমার ন্যায্য পাওনা তিস্তা নদীর পানির হিস্যা পাব না, এটা হতে পারে না। সেখানে আমরা স্বাধীন কোথায়?
সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ তৈরি করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান ফখরুল।
ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনে সড়কে দুইটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে সারা দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে’র দাবিতে এ সমাবেশ হয়। ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে সমাবেশ সমবেত হয়। নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ‘দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেব জনগণের হাতে’ প্ল্যাকার্ড এবং বাংলাদেশের জাতীয় ও বিএনপির পতাকা ছিল। তারা ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘ভোট ভোট ভোট চোর’ এর মুহুর্মুহূ সেøাগান দিতে দেখা যায়। সমাবেশের দুই ধারে বিএনপির আবদুস সালাম পিন্টু, ইসহাক সরকারসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিসম্বলিত পোস্টার ছিল। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের পুরো সড়কে লোকে লোকারণ্যে হয়ে পড়ে।
ঢাকা উত্তর আয়োজিত এ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল মোহাম্মদপুর শহীদ পার্কে। রাতে পুলিশ সেখানে আপত্তি জানালে সমাবেশের স্থল পরিবর্তন করে খিলগাঁওয়ে আনা হয়।
তাবিথ আউয়ালের সভাপতিত্বে ও মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু ও এএফএম আব্দুল আলিম নকির পরিচালনায় সমাবেশে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, বরিশালের মজিবুর রহমান সারোয়ার, খুলনার নুজরুল ইসলাম মনজু, চট্টগ্রামের ডা. সাহাদাত হোসেন, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমূখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।