পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীতে একসময় প্রায় প্রতি ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি কলোনিতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ছিল। সেখানে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণরা খেলাধুলা করত। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। খেলার মাঠকে ঘিরে তরুণ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটত। এখন সেই সব খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। একে একে খেলার মাঠ দখল কিংবা সরকার অধিগ্রহণ করে সরকারি ভবন বা স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ফলে নগরীতে খোলা জায়গা ও খেলার মাঠের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক মানুষের জন্য ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা তথা খেলার মাঠ, পার্ক, শিশুপার্ক, ঈদগাহ ইত্যাদি প্রয়োজন। বাস্তবতা হচ্ছে, রাজধানীতে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় জনপ্রতি খোলা জায়গার পরিমাণ এক বর্গমিটারেরও কম। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এবং সুস্থ বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ অত্যন্ত জরুরি। শুধু শিশু-কিশোরই নয়, বয়োবৃদ্ধদের হাঁটা-চলার জন্যও মাঠ প্রয়োজন।
রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে খেলার মাঠ ও পার্ক রয়েছে ৬৯টি। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৪টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫টি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর গবেষণা অনুযায়ী, দ্ইু সিটি করপোরেশনের ৯২টি ওয়ার্ডে সরকারি-বেসরকারি খেলার মাঠ রয়েছে ২৩৫টি। এর মধ্যে সর্বসাধারণ ব্যবহার করতে পারে ৪১টি। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা মতে, রাজধানীর প্রতি ১২ হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজন অন্তত ৩টি খেলার মাঠ। রাজধানীতে এর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অবৈধ দখল ও স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব মাঠ ও পার্কের বেশিরভাগই সংকুচিত এবং খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এক সময়ের বিখ্যাত বাংলাদেশ মাঠ, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, আব্দুল আলীম মাঠ, আরমানিটোলা মাঠসহ অনেক মাঠের জায়গায় গড়ে উঠছে স্থাপনা। অনেক মাঠে সিটি করপোরেশনের নামে দোকানপাটও বসানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দুই সিটি করপোরেশন তাদের নিজস্ব মাঠই সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারছে না। মাঠের অংশ অবৈধ দখলে চলে গেলেও তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস গত শুক্রবার ঘোষণা দিয়েছেন, প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করা হবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডের অবৈধ দখলকৃত সরকারি জায়গা উদ্ধার করে খেলার মাঠ করা হবে। আমাদের কথা হচ্ছে, সিটি রপোরেশনের নিজস্ব যেসব মাঠ রয়েছে, সেগুলো বেদখলে যায় কিভাবে? এসব মাঠ যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করে খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে মাঠ সঙ্কট অনেকটাই কেটে যেত। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব মাঠ অনেকটা বেহাল ও বেহাত অবস্থায় রয়েছে। অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করা হচ্ছে। এমন অপকর্ম সিটি করপোরেশনের নাকের ডগার সামনেই ঘটছে। এটা কি সিটি করপোরেশন দেখছে না? মুখে বড় বড় কথা বললেই হয় না। তা কার্যক্ষেত্রে করে দেখাতে হয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, রাজধানীতে মাঠ ও পার্কের অভাব এবং সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করতে পারছে না। তারা ঘরে ঢুকে গেছে। চারদেয়ালে বন্দি হয়ে গেছে। মুক্ত আলো-বাতাসহীন অবস্থায় বেড়ে উঠছে। ঘরে বসে ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তাদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সামাজিক শাসন-বারণ, নীতি-নৈতিকতা থেকে বঞ্চিত হয়ে এক ধরনের কুপমুন্ডুক মানসিকতার শিকার হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও পার্ক থাকলে রাজধানীতে এত হাসপাতালেরও প্রয়োজন পড়ত না। খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকলে তরুণ শ্রেণী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত হওয়া থেকেও বিরত থাকত।
রাজধানীতে খেলার মাঠ এবং খোলা জায়গা দেখলেই একটি শ্রেণীর মধ্যে তা অবৈধ দখলের চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। নানা উছিলায় কিংবা দোকানপাট বসিয়ে মাঠ-পার্ক দখল করতে শুরু করে। একবার দখল করলে তা উচ্ছেদ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। অনেক সময় সিটি করপোরেশনও এ কাজে সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেই কেবল নড়েচড়ে বসে। নিজ দায়িত্ব থেকে যে তাদের নিজস্ব মাঠ ও পার্কের সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচর্যার মাধ্যমে খেলাধুলা ও ভ্রমণের উপযোগী করে তোলার তাকিদ অনুভব করে না। শুধু সিটি করপোরেশনের মাঠই নয়, বিভিন্ন সরকারি কলোনির অনেক মাঠ ও পুকুরও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মাঠ এবং পুকুর ভরাট করে বড় বড় ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। এসব মাঠ ও পুকুরে শিশু-কিশোর থেকে সব বয়সীরা খেলাধুলা ও সাঁতার কাটত। আমরা মনে করি, আগামী প্রজন্মের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠার জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও পার্ক সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ করার দরকার নেই। উভয় সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা মাঠ-পার্ক দখলমুক্তকরণ এবং সেগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করে খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কেও দায়িত্বশীল হতে হবে। তার অধীনের খেলার মাঠ ও পার্ক সংরক্ষণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।