Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জীবন বাঁচাতে রক্তদান : প্রচলিত আইন ও ইসলামী আইনি দিক

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০৪ এএম

আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই এ ভ্রাতৃত্ব-সম্পর্ক রক্ষা করা আবশ্যক। ভ্রাতৃত্বের এ সম্পর্ক বিভিন্নভাবে রক্ষা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জীবন, সম্পদ বা কথা দিয়ে মুসলিমের জীবনে পারস্পরিক সাহায্য করা যায়। পারস্পরিক সহমর্মিতা তথা অন্যের ব্যথিত হওয়া এবং তার আনন্দে আনন্দিত হওয়ার মাধ্যমেও সাহায্য-সহযোগিতা করা যায়। রাসূলুল্লাহ স. বলেন, তুমি দেখবে ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে মুমিনরা একই দেহের মতো। এ দেহের একটি অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে অন্য অঙ্গসমূহ এর জন্য ব্যথিত হয়। জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে ও বিনিদ্র রজনী কাটায়। আর কোনো মুসলিম অসুস্থ হলে তার যথাসম্ভব সেবা করা পারস্পরিক অধিকারের মধ্যে একটি অধিকার ও দায়িত্ব। ইসলাম প্রত্যেক মুসলিমকে তার সমাজের ব্যক্তিবর্গের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা নিষেধ করেন।

রক্তদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি সুপারিশ : এক. বাংলাদেশে কোন বিশেষ দিন বা ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্তদান পরিলক্ষিত হয়। এতে নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনের তুলনায় বেশী রক্ত সরবরাহ হয়। অনেক সময় উদ্বৃত্ত রক্ত নষ্টও হয়ে যায়। অন্যদিকে সারা বছর দেশে যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন তাও পূরণ হয় না। ফলে শুধু রক্তের অভাবে অসংখ্য মানুষ মারাও যায়। এ ক্ষেত্রে রক্তদাতারা নিয়মিত ‘ব্লাডব্যাংকে’ রক্তদান করলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। রক্ত বেশীদিন সংরক্ষণ করা যায় না। তাছাড়া রক্ত নির্দিষ্ট তাপমাত্রার বাইরে কয়েক ঘন্টা রাখা হলে রোগীর শরীরে পরিসঞ্চালনের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই ব্লাডব্যাংকে রক্তাদাতাদের তালিকা সংরক্ষণ করা হলে প্রয়োজনের মুহুর্তে রক্ত সরবরাহ করা যায়।
দুই. নিজের আত্মীয়স্বজনের প্রয়োজনে রক্ত দেয়ার মানসিকতা বৃদ্ধি পেলেও তা যথেষ্ট নয়। অথচ প্রত্যেক রোগীই তার আত্মীয়-স্বজন থেকে প্রয়োজনীয় মুহুর্তে রক্তের যোগান পেতে পারে। আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি বদান্যতা, কৃপা, উদারতা, সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ের ইসলামী বিধান উপস্থাপনের মাধ্যমে রক্তদানে আরও উৎসাহিত করা যেতে পারে।
তিন. দেশে পেশাদার রক্তদাতাদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত। এদের রক্ত ব্যবহারে রোগী সাময়িকভাবে সুস্থ হলেও দীর্ঘমেয়াদে রক্তবাহিত জটিল কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে নির্দিষ্ট পরীক্ষা করার ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ করতে হবে। নিরাপদ রক্তদানের ব্যাপারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সর্ব সাধারণ পর্যায়ে জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহের উদ্দেশ্যে সন্ধানী, রেডক্রিসেন্ট, বাঁধন প্রভৃতি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিতকরণে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
চার. বিয়ের আগে ছেলে ও মেয়ের রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। এতে তাদের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ পুরো অন্ধকার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রহিত হবে। বিয়ের পর শারীরিক সম্পর্ক ও রক্তের মাধ্যমে এইচআইভি/ এইডস, হেপাটাইটিস বি ও সি, ডায়াবেটিস, লিউকোমিয়া, সিজোফ্রেমিয়া ইত্যাদি বেশ কিছু সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ হতে পারে। সেক্সুয়্যাল প্রবলেম যেমন স্বামী-স্ত্রীর নরমাল প্রোডাক্টিভিটিও নষ্ট হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া নামের এই রেগাটি বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর। বাবা-মা দুইজনই এই রোগের বাহক হলে সন্তান জন্মের পরই এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং সাধারণত একুশ বছরের বেশি বাঁচে না। এতসব ঝামেলা এড়ানোর জন্যই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
উপসংহার: রক্তের অপর নাম জীবনপ্রবাহ। ফলে রক্তদান এ অর্থে জীবনদান। তাই রক্তদান আত্মার বাঁধন তৈরি করে। রক্তদান নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। রক্তদান ও পরিসঞ্চালনের প্রতি ধর্মীয় ও সামাজিক উভয় প্রকার স্বীকৃতি রয়েছে। নিয়মিত রক্তদানে দাতার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়। অন্যদিকে প্রতিদিন বিভিন্ন কারণে প্রয়োজনীয় হাজার হাজার ব্যাগ রক্তের চাহিদা পূরণ করে গ্রহীতাদের জীবনও রক্ষা করা সম্ভব হয়। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে রক্তদানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রক্তদান কর্মসূচিতে মানুষ রক্ত দিতে ভিড় করে। বিশেষ করে এতে ছাত্রছাত্রী ও তরুণ সমাজের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক। বেশিরভাগ রক্তদাতাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।
অনেক রক্তদাতা কেবল পরিচিতজনদের প্রয়োজনে রক্তদান করে। অনেকে সমাজ সেবামূলক কাজ হিসেবে রক্তদান করেন। কেউ কেউ তার ভবিষ্যত প্রয়োজনে রক্ত পেতে বিভিন্ন রক্তদাতা সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করে নিয়মানুযায়ী রক্তদান করেন। তবে জনগণকে আরও সচেতন করতে পারলে স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ