পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত চারদশকে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এ সময়ে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। গত একদশক ধরে খাদ্যে স্বয়ম্বরতা অর্জনের দাবি করছে সরকার। শুনতে ভালই লাগে। একই সঙ্গে আমরা যখন প্রতি বছরই ভারত থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানির খবর শুনি, ভরা মওসুমে চাল আমদানির কারণে ধানের মূল্য না পাওয়ায় কৃষকের হতাশার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তখন খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্বরতার দাবির পেছনে প্রশ্নবোধক চিহ্ন এসে দাঁড়ায়। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও। শীতকাল মাত্র গত হল, এখনো দেশে পুরোপুরি গরম শুরু হয়নি, এরই মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে লোডশেডিংয়ের পুরনো বিড়ম্বনার শিকার হতে শুরু করেছে মানুষ। অথচ গত কয়েক বছর ধরেই বিদ্যুতখাতে ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে, বিদ্যুতে স্বয়ম্বরতা অর্জনে লক্ষকোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, গত ৬ বছরে শুধুমাত্র বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ভাড়া বাবদ ৬২ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। রেন্টাল- কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের শর্ত মোতাবেক জাতীয় গ্রিডে কোনো বিদ্যুৎ না নিয়েও সার্ভিস চার্জ হিসেবে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। বলা হচ্ছে, উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ খরচ করার জায়গা নেই। অথচ লোডশেডিং এখনো আমাদের পিছু ছাড়ছে না! জাতি কোনটা বিশ্বাস করবে, কোথায় আস্থা রাখবে?
খাদ্য উৎপাদনের সাথে আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যোগান নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি বোরো মওসুমে চাহিদা অনুপাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎপ্রাপ্তি নিয়ে দেশের কৃষকদের মধ্যে বড় ধরনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। শিল্পোৎপাদনে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এখনো তেমন গতি লাভ করেনি। অন্যদিকে শীতে বিদ্যুতের চাহিদা এমনিতেও তুলনামূলক কম থাকায় বিদ্যুৎ গ্রিড ও সঞ্চালন লাইনের উপর তেমন চাপ না পড়লেও গ্রীষ্মের আগেই অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের বাস্তবতা বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞ ও সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। এখন বোরো মওসুমে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যহত হলে তা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার উপরও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগে দেশে উৎপাদন ও ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা যেখানে ২১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে এবং রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের বেশির ভাগ বসিয়ে রাখতে হচ্ছে, সেখানে বোরো চাষের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা আড়াই হাজার মেগাওয়াটের কম বিদ্যুৎ যোগান দিতে সমস্যা হচ্ছে কোথায়? এ পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্নভাবে নিশ্চিত করতে না পারলে তা সরকারের বিদ্যুৎ খাতের জন্য অনেক বড় ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে খরা বা বৃষ্টিহীনতা চলছে। এটি যদি আরো কয়েক সপ্তাহ প্রলম্বিত হয়, তাহলে তা বোরোসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারোনাকালীন বাস্তবতায় দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম অব্যাহত গতিতে বেড়ে চলেছে। একদিকে ভারত থেকে লাখ লাখ টন চাল আমদানি চলছে অন্যদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে মোটা চালের দাম। আর সরকারের তরফ থেকে খাদ্যে স্বয়ম্বরতার দাবি করা হলেও খোদ কৃষিমন্ত্রী চাল-আলুর মতো কৃষিপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য পরিসংখ্যানের গড়মিলকে দায়ী করছেন। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাফল্যের দাবিও কি ভুল পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে করা হচ্ছে? যদি তা না হয়, বিদ্যুৎ খাতে লক্ষকোটি টাকার ভর্তুকির গচ্চা কোথায় গেল? একদিকে ধানের উৎপাদন খরচ না উঠায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা, হাহাকার অন্যদিকে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ভরা মওসুমে ভারত থেকে চাল আমদানি করেও কেন চালের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে? এসব যৌক্তিক প্রশ্নের জবাব সরকারের সংশ্লিষ্টদেরই খুঁজে বের করে সমাধান দিতে হবে। বিদ্যুৎ ও খাদ্য উৎপাদনে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সাফল্যের দাবি, ভারত থেকে আমদানি নির্ভরতা এবং অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির গোলক ধাঁধা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন ও চাহিদা নিরূপণে কথিত পরিসংখ্যানের গড়মিল কীভাবে ঘটল তা খতিয়ে দেখে এর পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।