পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাজারে চালের দাম বাড়ছেই। সরকার বলছে সংকট নেই। চাল উৎপাদন এবং রেকর্ড উদ্বৃত্তের আশা, অথচ বাজারে দাম বাড়ছে। হচ্ছে আমদানিও। আমদানির পরও কমছে না চালের দাম। ঘটনাটা কী? চালের বাজার কি ফের পড়লো সিন্ডিকেটের খপ্পরে? চাল ব্যবসায়ীরা বলছে, মিলগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারে। আর মিল মালিকরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম। বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট পাঁচ মাস আগে আভাস দিয়েছিলো যে, বছরের শেষে প্রায় সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। অথচ বাজারে সব ধরনের চালের দামই বেড়ে যাচ্ছে।
বিবিসির সূত্রে জানা যায়, খাদ্য সচিব নাকি বলেছেন, আমদানির প্রথম চালানের ৫০ হাজার টন চাল ইতোমধ্যেই দেশে এসেছে। ধাপে ধাপে আরও অন্তত দেড় লাখ টন চাল আসার কথা। তবে এ আমদানির সাথে বাজারে চালের দামের কোনো নাকি সম্পর্ক নেই। কারণ, ধান বা চালের কোনো সংকট নেই। যদিও প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে গেল বছর। তারপরেও সেটার জন্য খুব একটা বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাহলে বাজারে চালের দাম বাড়ল কেন?
চালের দামের ঊর্ধ্বগতিতে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক বছরে শুধুমাত্র মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪৮ শতাংশ। বাজারেও বেসরকারি হিসেবে মোটা চালের দাম বেড়েছে একবছরে কেজিপ্রতি কমপক্ষে ১৫ টাকা, তিন মাসে বেড়েছে ৬ টাকা। দেশের দৈনিক চাল সরবরাহের প্রয়োজন ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। সরবরাহ আছে ৮০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। চালের দাম কমানোর ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট। সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও বাজারে চালের দাম কমেনি, বরং আরও বেড়েছে। সরকারি কোনো পদক্ষেপেই সিন্ডিকেট মুক্ত হতে পারছে না চালের বাজার। এ অবস্থায় চালের অসাধু ব্যবসায়ী, মজুদদার ও সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত সাতটি মনিটরিং টিম মাঠে রয়েছে। এর পরও সিন্ডিকেট-মিল মালিকদের কারসাজি বন্ধ হয়নি। দাম বাড়ার কোনো কারণ না থাকলেও অস্থির হয়ে উঠছে চালের বাজার। এদিকে আমদানির প্রভাব নেই চালের বাজারে। দেশের বাজারে আমদানিকৃত চালের বিক্রি শুরু হলেও তার প্রভাব মিলছে না বাজার দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তগুলোতে চালের দাম না কমে বরং প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে। আমদানি করা এসব চালের মান ভালো না হওয়ায় আড়তদাররা এই সুযোগ নিচ্ছে বলে জানায় চালের খুচরা বিক্রেতারা। ফলে এখনো চড়াই রয়েছে চালের বাজার।
কয়েক দফা শুল্ক কমিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করা হলেও বাজারে এর তেমন কোনোই প্রভাব নেই। এর ফলে অসাধু চাল ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয়েছে কিংবা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে চালের দাম বাড়েনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। বিপুল পরিমাণ চাল সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আমদানি করা হয়েছে। আরও আমদানি করা হচ্ছে। দেশে চালের কোনো রকম সংকট নেই। তাহলে চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন?
চালের দাম কমানোর জন্য সরকারের নানা রকম উদ্যোগ আমরা লক্ষ করেছি। এর অংশ হিসেবে চালের আমদানি শুল্ক কমানো। এতে প্রতি কেজি চালের আমদানি খরচ ছয় টাকা কমেছে। কিন্তু তাতেও খুচরা বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। চাল নিয়ে এই অনৈতিক কারসাজিকে হালকাভাবে নেয়ার অবকাশ নেই। স্বেচ্ছাচারী কিংবা অসাধু ব্যবসায়ীরা যা করছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। চালের দাম আরও বাড়তে পারে, এমন গুজবও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তাতে চালের দাম বাড়তে থাকে। যারা চাল নিয়ে চালবাজি করছে সরকার তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?
এদেশে চালের দাম বাড়ে, ডালের দাম বাড়ে, বেগুন, তেল লবণ চিনির দাম বাড়ে। কারণে বাড়ে, আকারণে বাড়ে। চালের দাম বেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে। টিসিবির তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশের বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৪২.১৯ শতাংশ। মোটা চালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরু চালের দামও। চালের বাজার বলতে গেলে বেসামাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মোটা চালের দাম বেশি রেড়েছে। সরু চালের দাম বাড়লে উচ্চবিত্তের তেমন সমস্যা হয় না, যত আপদ বিত্তহীনদের ওপর। এভাবে কেন বাড়লো চালের দাম? এর অনেক ব্যাখ্যা আছে। যে যার মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। চাহিদা অনুপাতে চালের জোগান যে কম সে কথা বলা যাচ্ছে না। বাজারে চাল আছে। কেউ কেউ মনে করছেন, চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে। চাল সিন্ডেকেট চক্রের হাতেই চালের মজুত রয়েছে। এরাই অব্যাহতভাবে চালের দাম বাড়িয়ে চলেছে। এদিকে দেশে চালের দাম অব্যাহত বৃদ্ধির কারণ স্পষ্ট করতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী। চালের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার জন্য খোলাবাজার সরকারি উদ্যোগে চাল নিয়ে কর্মসূচি বন্ধ থাকার কারণে চালের বাজারে বিরাজ করছে অস্থিতিশীলতা। হাওর অঞ্চলের দুর্যোগকেও চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ চালের বাজারে এর প্রভাব পড়ার কোনোই কারণ নেই বলেই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বাজারে নতুন ধানও এসেছে। এ সময় চালের দাম নেমে আসে। এরপরও দাম কেন বাড়ছে?
আমরা মনে করি, চালের বাজার এবং চালবাজদের ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। বিত্তহীনদের স্বার্থে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চালের দাম কমিয়ে আনার দিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন অতি মুনাফাখোর, লোভী ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেবল মুখে মুখে নয়, চালের বাজার কারসাজিতে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতনির্ভর দেশের মানুষ যদি চাহিদামতো চাল কিনতে না পারে তবে এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? সরকারের উচিত, যে কোনমূল্যে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।