Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিকৃবিতে বুদ্ধিভিত্তিক দূর্নীতিতে চলছে লাগামহীন প্রকল্পবাজী : জিকে শামীম চক্র হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ !

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২১, ৫:২৩ পিএম

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে প্রকল্পবাজী। তোয়াক্কা নেই নিয়মনীতির। ওপেন সিক্রেট সেই প্রকল্পবাজীর নৈপথ্যে সিকৃবি সংশ্লিষ্টরাই। এহেন বৃদ্ধিবৃত্তিক দূর্নীতিতে চলছে লাগামহীন লুটতরাজ। নিজস্ব বলয় ও কমান্ডে চলছে সব অনিয়ম। দূর্ণীতির অনিয়মের বিরুদ্ধে সুপারিশ হলেও কার্যকারী হয়না সিকৃবিতে। বরং অনিয়ম দূর্ণীতিকে কাবু করে আর্থিক ফায়দা নেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষমতাবান সিকৃবি সংশ্লিষ্টরা অর্থের মোহে বেপরোয়া, তাদের পকেট ভারী হলেই যথেষ্ট, উন্নয়ন অগ্রগতি কেবল একটি উপলক্ষ্য। এনিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য এখন সিকৃবিতে।

সিকৃবির ভেটেরিনারী অনুষদ ভবন নির্মাণ কাজের ব্যয় ১০ কোটি ৩৮ লাখ থেকে ১৬ কোটি ৩০ লাখে পৌছানো হয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয় সাপেক্ষে এ ব্যায় বাড়ানো নজিরবিহীন ও বৈআইনী। তারপরও কারসাজি করে ‘মালিথা ট্রেডার্স’কে কাজ দিয়ে এমনটি হয়েছে সিকৃবিতে। গত মাসে এ ব্যয়ের উপর উঠেছে অডিট আপত্তি। এছাড়া এ ভবন নির্মাণকালে পাইলিং কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেছে। মেজারমেন্ট ফিতা ৪ ফুট কর্তন করে মাপ ঝোঁক করে পকেট ভারী করেছেন তদারকি সংশ্লিষ্ট সিকৃবি প্রকৌশলীরা। গত ২০১৪ সালের ৬জুন এ ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনকল্পে ২য় বৈঠকের এক প্রতিবেদনের জানানো হয় এমন তথ্য। ভবনের ২১৭টি পাইলের মধ্যে লোড টেস্টে ফেইল করে ১৫টি পাইল। অথচ এ সময় ঠিকাধারী প্রতিষ্টানকে তদারিক করেছেন সিকৃবির প্রকৌশলীরা। গত ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর পুনরায় ভেটেরিনারী অনুষদ ভবন নির্মাণ জটিলতা নিরসন কমিটির এক সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত সমূহের অন্যতম ছিল জটিলতা সৃষ্টির পেছনে সংশ্লিষ্টদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ। কিন্তু তদন্ত কমিটি হলেও জড়িত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ কার্যকারী হয়নি সিকৃবিতে।

একাধিক সূত্র জানায়, সুপারিশ প্রতিবেদন গায়েব হয়ে যায়, দোর্দন্ড প্রতাপশালী প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: সারফুদ্দীনের টেবিলে। অথচ সুপারিশ সমূহ কার্যকর হলে, পাইলিং কেলেংকারীর দায় পড়তো সিকৃবির প্রকৌশলীদের ঘাড়ে। এর মধ্যে দিয়ে সিকৃবিতে বন্ধ হতো অনিয়ম দূর্নীতির বেপরোয়া গতি। কিন্তু তা হয়নি বরং দায়ীদের রক্ষা করা হয়েছে অর্থের বিনিময় সহ লুটেরা সিন্ডিকেট বলবৎ রাখতে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, সিকৃবির উন্নয়ণ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করলে অনিয়ম দূর্নীতির অবিশ^াস্য তথ্য বেরিয়ে আসবে। এমনকি ব্যক্তি বা প্রতিষ্টানের বৈআইনী কর্মকান্ড পুঁজি করে তারা লাভবান হন তাও চাপা থাকতো না। জবাবদিহিতার উর্ধ্বে উঠে এহেন অনিয়ম দূর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন সিকৃবির উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের কারনে বাধ্য হয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করতে হচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকেও। নচেৎ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো বা পাইলিং কেলেংকারীর ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটতো না।

এদিকে, কারান্তরীণ জিকে শামীম চক্রের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকার একটি উন্নয়ণ প্রকল্পের কাজ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ২ একাডেমিক ভবন ও অডিটোরিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে আহবান করা হয় দরপত্র। নির্মাণ খরচ বাবদ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৬ হাজার ৪শত ৩৩ টাকা। ইজিপি দরপত্র খোলা হয় ২৫ জানুয়ারী। এতে অংশ গ্রহন করেন ৩টি প্রতিষ্টান। এর মধ্যে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্টান ছিল মেসার্স ফ্রেন্ডর্স ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া ঢালি কনষ্ট্রাকশন ২য় দরদাতা ও ৩য় দরদাতা প্রতিষ্টান ছিল দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস-চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। শর্ত অনুযায়ী সর্বনি¤œ দরদাতা কাজের সুযোগ পাওয়ার অগ্রাধিকার থাকলেও শেষ অবধি বিশেষ আঁতাত ও কারসাজিতে কাজ দেয়া হয়েছে জি কে শামীম চক্রকে। অথচ খোদ সিকৃবিতে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী সিকৃবির ছাত্র হল ও ছাত্রী হল নির্মাণ কাজের জমাকৃত দরপত্রের ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছিল শামীম চক্রের প্রতিষ্টান ‘দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি:। এসময় সর্বনি¤œ দরপত্র দাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল তারা। পরবর্তীতে ১৬ মার্চ দরপত্র যাচাই বাছাইয়ে একসভায় মূল্যায়ন কমিটি এঘটনা সামনে নিয়ে এসে ‘দি বির্ল্ডাস এসোসিয়েটেস লি:’র দরপত্র মূল্যায়ন বিচেনায় না নিয়েই মেসার্স মালিথা ট্রেডার্সকে কাজ পাইয়ে দেন সিকৃবি সংশ্লিষ্টরা। মূল্যায়ন কমিটি এসময় বলেছিলেন দরপত্র বিজ্ঞপ্তির ২১(বি) এর শর্ত মোতাবেক অত্র বিশ^বিদ্যালয়ের আগামী ৫ বছর কোন দরপত্র কার্যক্রমে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বিরত রাখার বিধান থাকায় বর্তমানে দাখিলকৃত দরপত্রটি বিচেনায় করা সুযোগ নেই। জিকে শামীম চক্রের প্রতিষ্টান ‘দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি: সুকৌশলে আউট করে মালিথা ট্রেডার্সকে উন্নয়ণ কাজে জড়িত করেছিলেন সিকৃবি রাগববোয়ালরা। কাজ দিয়ে আখেরগোছানো শেষ হয়নি, প্রকল্পের বিল বাড়ালেন, পাইলিং কেলেংকারী করা হয়েছে চুপিসারে। এমনকি দরপত্রের সর্বোচ্চ লয়েস্ট মানিতে কাজ দিলে প্রকল্প তথা আর্থিকভাবে লাভবান হতো সিকৃবি। কিন্তু লয়েস্ট মানির বিষয়টি সিকৃবির কল্যাণে বিবেচনার চেয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নিজের পকেটে নিয়ে কাজ দিয়েছেন পছন্দের প্রতিষ্টান মালিথা ট্রেডার্সকে। সূত্র জানায়, দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি: ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দরপত্রের সাথে জমা দিলে, শাস্তিমুলক ব্যবস্থা কার্যত গ্রহন করলে পরবর্তী উন্নয়ণ কাজের দরপত্রে দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটর্স লি: অংশ গ্রহনের সুযোগ পেত না। বরং মালিথা ট্রেডার্সকে কাজ পাইয়ে দিতে যেয়ে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছেন কথিত ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি পত্র দেয়ার তথ্য। যদি এমন শাস্তির সিদ্ধান্ত হতো তাহলে অবশ্যই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সার্বিক তথ্যসহ শাস্তির সুনির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করতে পারতেন তারা। কিন্তু তা করা হয়নি।

সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভাগবাটায়ারায় বনিবনা না হওয়ায় ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি তথ্য সামনে এনে দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি: বাদ দিয়ে মালিথা ট্রেডার্স কাজ বাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আতাঁত পূর্বকই সুবিধা নিয়েছে মালিথা ট্রেডার্স। এদিকে, সম্প্রতি প্রায় ১৪ কোটি টাকার কাজ সিকৃবির সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই হাতিয়ে নিয়েছে দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি:। সর্বনিম্ন দরদাতাকে মাইনাস করা হয়েছে দি বির্ল্ডাস এসোসিয়েটর্স লি: এর চলমান সকল ক্রিমিনাল রেকর্ড চাপিয়ে। ৩য় সর্বনিম্ন দরদাতা এবার হয়েছিল দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি:।

সিকৃবির মূল্যায়ন কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প পরিচালক অবশ্যই মূল্যায়ন কমিটির নজরে ‘দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটর্স লি:’ এর অতীত ও চলমান ক্রিমিনাল রেকর্ড তথ্য তুলে ধরা উচিত ছিল। কোন অদৃশ ইশারায় হয়তো এগুলো আড়াল করা হয়েছে। অথচ ‘দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি:’ এর খোদ সিকৃবিতেই সুনামের বদলে দূর্ণাম রয়েছে। তারপরও কাজ নিয়ে গেলে তারা।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এসবের পেছনে প্রকল্প পরিচালকের শক্ত ভূমিকা রয়েছে। মুলত অন্যদের দৃষ্টি সরিয়ে দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটসকে সিকৃবিতে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন তিনিই। এছাড়া তিনি বলেন একজন প্রকল্প পরিচালক বিশেষ করে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের তুলনায় এব্যাপারে বিজ্ঞ, প্রকল্পের স্বার্থে সুনাম ও নির্ভরশীল কোন প্রতিষ্টানকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় অগ্রাধিকারের দাবী রাখে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প পরিচালক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, অগ্রিম এক কোটি টাকার ভাগবাটোয়ারায় এ কাজ হাতিয়ে নিয়েছে ‘দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি:’। সেই পথ সুগম করে দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক সহ তার সিন্ডিকেট।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিকৃবির উন্নয়ণ কাজের নিয়ন্ত্রকে রয়েছেন বির্তকিত নিয়োগ প্রাপ্তরাই। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: সারফুদ্দীন ও তার সহযোগী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামাল হোসেন মোল্লা। সিকৃবিতে তার যোগদানও ছিল বির্তকিত। সিকৃবির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা শুরু হয় ২০১২ সালে। তৎকালীন ভিসি প্রফেসর শহীদ উল্লাহ তালুকদার, ভিসি পিএস টু ডা: খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার শাহজাহান ও প্রফেসর জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া ছিলেন এ নিয়োগ সিন্ডিকেটের হোতা। এঘটনায় তোলপাড় ঘটে। সিকৃবি নিয়ে শ্লোগান উঠেছিল টাকা দিলে নিয়োগ না দিলে বিয়োগ। এমন পরিস্থিতিতে
এ অবৈধ নিয়োগের উচ্চ আদালতে একটি রীট করেন সচেতন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) নিয়োগ প্রাপ্তদের আর্থিক সুবিধা ছাড় দেয়নি দীর্ঘকাল। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মৌখিকভাবে এ নিয়োগ বন্ধের জন্য নির্দেশনা দেন। বেপরোয়া এ অবৈধ নিয়োগে বির্তকিত হয়ে ভিসি শহীদ উল্লাহ ক্যাম্পাস ছাড়তে হয় বিদায়ী সংবর্ধনা ছাড়াই। সেই সময়কার অবৈধ নিয়োগের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী জুটিয়ে নেন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সেক্রেটারী প্রকৌশলী মো: কামাল হোসেন মোল্লা। পল্লী বিদ্যুতের একজন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে অবৈধ নিয়োগের পথে আর্থিক ফায়দা প্রদান করে সিকৃবির সিভিল বিভাগে সরাসরিই নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নেন তিনি। অথচ একজন সহকারী প্রকৌশলী সরকারী দপ্তরে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। কিন্তু তার কিছুই লাগেনি যোগ্যতা ছাড়াই রাম-রহিম হয়ে গেছেন অর্থের জোরে অবৈধ নিয়োগের সুযোগে। একই সময়ে চাকুরী পান সিকৃবির বর্তমান প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: সারফুদ্দীন। এরপূর্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ছিলেন। সিকৃবির নিয়োগ বানিজ্যের অন্যতম হোতা তৎকালীন ভিসি পিএস টু ডা: খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার শাহজাহানের পকেটভারী করেই এ নিয়োগ জুটিয়েছিলেন বলে গুঞ্চন রয়েছে। শাহজাহান ও প্রকল্প পরিচালক মো: সারফুদ্দীনের গ্রামের বাড়ী নরসিংদিতে। সেকারনে শাহজাহানের পকেটে টাকা ঢেলেই ঝুঁকি ছাড়াই সিকৃবিতে চাকুরী নিশ্চিত করেন মো: সারফুদ্দীন। অলাভজনক খাতে বিনিয়োগ করেনি সারফুদ্দীন। সেকারনে প্রকল্পবাজীর মাধ্যমেই লুটছেন সিকৃবিতে। উন্নয়ন কাজ সংশ্লিষ্ট অনেক ঠিকাদার প্রতিষ্টান সূত্র জানায়, ‘প্রকল্প পরিচালকের মুজেযা ছাড়া কোন নিয়ম নীতিতে সিকৃবিতে কাজ পাওয়া দুষ্কর। তিনি অনিয়মকে-নিয়মে, নিয়মকে-অনিয়ম করার ক্ষমতা রাখেন। তাই তাকে তার চাহিদা মতো খুশি করতে হয়। বাদ বাকী তিনিই সামাল দেন। প্রকল্প হাতে নেয়ার আগেই কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে প্রস্তুতি করে রাখেন তিনি। সেখাতে একটি এ্যাডভান্সও নেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তারপর দরপত্র জমাদান একটি আনুষ্টানিকতা মাত্র হয়ে দাঁড়ায়। তার ইশারায় যে জমা দেয়, সেই কাজ পায়। অন্য কোন প্রতিষ্টান যোগ্যতর হলেও তার কলকাটিতে অবমূল্যায়নের শিকার হতে হয়।’

সিকৃবির প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সিকৃবিতে উন্নয়ণ কাজের দূর্নীতি নিয়ে কমিটি হয়, বৈঠক হয় সুপারিশ হয় কিন্তু সিদ্ধান্তের পূর্বে ফাইল বন্দি হয়ে যায়। ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী সিকৃবির ছাত্র হল ও ছাত্রী হল নির্মাণ কাজের জমাকৃত দরপত্রের ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছিল ‘দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি:’। কিন্তু ভূয়া গ্যারান্টি পত্র প্রদানে কিভাবে শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ এর নেই কোন দালিলীক ভিত্তি। কেবল মাত্র পরবর্তী একটি দরপত্রে দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি: অংশ গ্রহন করলে, মূল্যায়ন কমিটি গড়পড়তাভাবে উল্লেখ করেন আগামী ৫ বছরের কোন কাজে অংশ নিতে পারনে না ‘দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটর্স লি:’। সেই আগামী মেয়াদ কখন কবে শুরু তার কোন উল্লেখ নেই। শাস্তিমুলক ব্যবস্থা কার্যত গ্রহন করলে অবশ্যই ইজিপি ওয়েব পোর্টালে সেই তথ্য উল্লেখ সহ শাস্তিমূলক সিদ্ধান্তের কারন দন্ডপ্রাপ্ত প্রতিষ্টানকে লিখিতভাবে অবহিত করা হতো। যদি তাই হতো তাহলে, পরবর্তী দরপত্রে কিভাবে অংশ নিল দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটর্স লি: তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

সূত্র জানায়, শাস্তির নামে ফায়দা নিয়েছেন সিকৃবির সংশ্লিষ্ট একটি চক্র। তার কথিত ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টির তথ্য ও শাস্তির তকমা তুলে বাগে এসেছিলেন ওই প্রতিষ্টানকে। ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় সফলতা পেয়েই নতুন করে সিকৃবিতে ইন করেছেন জিকে শামীম চক্রকে। এছাড়া ভেটেরিনারী অনুষদ ভবনে নির্মাণ ব্যয় সহ বাড়ানো সহ পাইলিং কেলেংকারী বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হলেও তদারকি সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি দিয়েছেন রহস্যজনকভাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দূর্নীতির চলমান ঘটনা গুলো সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করলে লাগামহীন দূর্নীতির এমন ভয়াবহরূপ হতো না সিকৃবির উন্নয়ণ প্রকল্প ঘিরে।

সিকিৃবির তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী ও সম্প্রতি জিকে শামীম চক্রের হাতে প্রায় ১৪ কোটি টাকার উন্নয়ণ কাজের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য প্রকৌশলী কামাল হোসেন মোল্লা বলেন, এ কাজটি কবে অনুমোদন হয়েছে দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লি: অনুকূলে এই মুর্হুতে তার মনে নেই। অন্য প্রসেঙ্গ কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সারফুদ্দীন বলেণ, ৪/৫ দিন পূর্বে অনুমোদন দেয়া হয়েছে কাজ দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটর্স লি: এর অনুকূলে। এছাড়া তিনি বলেন, ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের কারনে দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটর্স এর উপর কর্তৃপক্ষ যে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছি তা ওভার ফোনে জানানো হয়েছিল। অপরদিকে পাইলিং কেলেংকারীর জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্টান মালিথা ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, তবে সিকৃবির তদারকি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কেন হয়নি তা মনে নেই তার।

সিকৃবি উপাচার্য প্রফেসর মো: মতিয়ার রহমান হাওলদার এ প্রসেঙ্গ বলেন, ‘এসব কিছুর উত্তর দিতে পারেন কেবল মাত্র প্রকল্প পরিচালকই’।



 

Show all comments
  • Jack+Ali ৪ মার্চ, ২০২১, ৫:৩৯ পিএম says : 0
    O'Muslim how long will you sleeping, our country have been destroyed and we are slave of government and their supporter.. our life has been destroyed, no security. no peace, O'Muslim come one banner of Islam and rule our country by Qur;an then we will be able to live in our Beloved Mother Land in Peace, Security, without criminals and there will be no more poor people.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিকৃবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ