পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধ্বস পরাজয় বরণ করেছে বিএনপি। এরপর প্রায় প্রতিটি উপ-নির্বাচন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনেও একই চিত্র দেখেছেন দলটির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। দু’একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সকল নির্বাচনেই পরাজিত হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধানের শীষের প্রার্থীদের জামানতই বাজেয়াপ্ত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। যেটি দলের প্রতি সাধারণ মানুষের জনসমর্থনের ভিন্ন চিত্র বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। একারণে চলমান পৌরসভা নির্বাচনের সময় থেকে সারাদেশের নেতাকর্মীরা আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে দলের প্রতি চাপ প্রয়োগ করে। তাদের মনোভাব বুঝতে পেরে গত সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির সভায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির বেশ কয়েকটি জেলা ও উপজেলার নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কোনভাবেই আর কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে। কারণ তারা মনে করেন, এখন এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মানেই অর্থিক ক্ষতি পাশাপাশি কিছু নেতাকর্মীর নামে মামলা, কিছু হামলার শিকার ও গ্রেফতার হয়। এভাবে নির্বাচনে যাওয়ার কোন অর্থই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। বরং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, এর আগে তৃণমূলের আগ্রহের কারণে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছিল। এখন তারা বুঝতে পারছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কোন লাভ নেই। এখন আবার সারাদেশের তৃণমূল থেকে মতামত দেয়া হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার। তাদের মতামতের আলোকেই বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সিলেট জেলার একটি উপজেলার সভাপতি বলেন, আমাদের নেতারা ভুলে গেছেন তাদের কাছে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত কোন বিষয়টি। আমাদের নেত্রী কারাবন্দী। তাকে মুক্ত করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে লোক হাসানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। বারবার প্রমাণ পাওয়ার পরও একই যুক্তিতে বিরক্ত ওই নেতা। ময়মনসিংহ উত্তর জেলার একজন শীর্ষ নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা তো ঘোষণা দিয়েই শেষ, তারা তো বুঝতে পারছেন না নির্বাচন করতে গিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কি অবস্থা হচ্ছে? তিনি জানান, ময়মনসিংহের প্রায় প্রতিটি ইউনিটের নেতারাই আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছেন।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. সাবেরুল হক সাবু বলেন, অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ যে নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে না সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে লাভ কি? কারণ আমরা চেয়েছিলাম সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। কিন্তু এখন যে নির্বাচন হচ্ছে সেখানে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীরা মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এখন নির্বাচন মানেই বল-শক্তি প্রয়োগ, ইভিএমে কারচুপি হচ্ছে। এতে মনে হয় যে সরকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিতে চায়। কারণ জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই, এজন্য সুষ্ঠু ভোট চায় না।
তিনি বলেন, এসব নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নিশ্চয় দলের উপলব্ধি হয়েছে যে, ভোটের আগের দিন নেতাকর্মীদের বল প্রয়োগ করে বাড়ি ছাড়া করা হয়, মামলা দেয়া হয়, হামলা, গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর ভোটের দিন দখলদারিত্ব কায়েম করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, পৌরসভার নির্বাচন যেভাবে হলো এরকম কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা ভালো। আমাদের জেলার নেতাকর্মীরা এরকম আর কোন নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে চায় না। তবে দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হবে বলে মনে করেন তিনি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা মনে করেছিলাম যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এখানে অন্তত সরকার একটা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করবেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার গ্রহণ করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদসহ পৌরসভা-উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে যা হয়েছে- এতো ফ্রাসট্রেটিং যে, আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদের অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি আমরা দলীয়ভাবে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে বলেই চরম প্রতিক‚ল অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। সা¤প্রতিক অন্ষু্িঠত নির্বাচনগুলোতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করবার যোগ্য নয়। বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এই নির্বাচন কমিশনের কাজ।
যদিও এর আগে কয়েকবারই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়ে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপির ভরাডুবির পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকারের অধীনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ-নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা জানায় বিএনপি। সেসময় মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, প্রমাণ হয়ে গেছে এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত আমরা উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিব না। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে নির্বাচনে মানেই প্রহসন। তাই আমরা উপনির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে অংশ নিব না। এই ঘোষণার কিছুদিন পরই আবারও উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা শুরু করে দলটি। যদিও সবকটি নির্বাচনেই বিএনপি প্রার্থীদের লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয়। তারপরও দলটিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এমনকি ঢাকায় দুটি আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সেই দুটি আসনেও ভোটের ফলাফল ব্যতিক্রম হয়নি।
প্রতিটি নির্বাচনেই বিএনপি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনে আবারও বিএনপি অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেয়। এইর মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন শুরু হয়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থিতা দেয় বিএনপি। এই নির্বাচনে বেশিরভাগ বিএনপি প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
আগামীতে সব নির্বাচনেই অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আপাতত ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। কিন্তু আগামীতে কোন উপ-নির্বাচন বা অন্য কোন নির্বাচনে অংশ নিবো কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। যেটাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করেই সেটি জানিয়ে দেয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আরে ভাই, সারা বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তাদের মধ্যে দুই-একটা বাদে ৮০% তারা নিয়েছে। আমার নিজের পৌরসভাতে ৭দিন আগে থেকে তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা সমস্ত নেমে পড়ে বিএনপির যতজন নেতা-কর্মী সবাইকে এরেস্ট করেছে। সব জায়গায় নাই। তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের কী প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন নেই।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।