গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন বর্তমানে আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি লড়াইয়ের বিকল্প নেই। বাঁচতে হলে লড়াই সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল হবে না। কারণ বর্তমান সরকার সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে ফেলছে, মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। কাজেই লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। যার শুরুটা হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে সরকারকে বাধ্য করানোর মধ্য দিয়ে। গতকাল সোমবার ঢাবি ক্যাম্পাস আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নুর বলেন, যেকোনো সংকট, সম্ভাবনায় সারা দেশের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। একসময় এমপি-মন্ত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে পায়ের ধূলো নিতো। আর এখন শিক্ষকরা পদের জন্য এমপি-মন্ত্রীদের কাছে ধরনা দেয় এটা আমাদের জন্য লজ্জার। দলীয়করণ করতে করতে রাষ্ট্রের সকল কাঠামোকে আজকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। জোর-জুলুম করে এই অবৈধ সরকার আর বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না। ঢাবি প্রশাসনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নিম গাছ লাগিয়ে আঙ্গুল ফল আশা করলে তো হবে না। যে প্রক্টর মেয়র ফজলে নূর তাপসের হয়ে নৌকায় ভোট চায়, সে প্রক্টরের নিকট শিক্ষার্থী সুলভ আচরণ কিভাবে আশা করেন। যে ভিসি শিক্ষার্থীদের জঙ্গির সাথে তুলনা করেন, তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বলতে দশ টাকায় চা, চমুসা সিঙ্গারা বুঝায় তার থেকে কিভাবে শিক্ষার্থী সুলভ আচরণ প্রত্যাশা করেন।
পুলিশকে লক্ষ্য করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, পুলিশের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি করে দাঁড় করে দেওয়া হয়েছে। আপনারা রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারী , আপনারা কেন আওয়ামিলীগ ছাত্রলীগের হয়ে কাজ করছেন। আমি এডিসি হারুনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি। তিনি ছাত্রলীগের গুন্ডা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। নুর বলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশের গাড়ি থাকবে কেন! এটাতো কোনো ক্যান্টোনম্যান্ট এরিয়া না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বলবো ক্যাম্পাসে পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিবেন প্রয়োজনে আমাকে হুকুমের আসামী করবেন।
সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রাশেদ খাঁনের সভাপতিত্বে ও ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রিয় যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হাসান, মাহফুজুর রহমান, তারেক রহমান, ঢাবি শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন, যুব অধিকার যুগ্ম আহবায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সালেহ উদ্দিন সিফাত, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ আহসান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন প্রমূখ। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মুশতাক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বিচার, ঢাবিসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
ঢাবি সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, গতকালকে টিএসসি থেকে ঢাবির তিনজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে লেখক মুশতাকের হত্যার প্রতিবাদে যখন শাহবাগে মশাল মিছিলে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা করে এবং সেখান থেকে পুলিশ সাতজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তারা কোন কোন ডাকাতি বা ধর্ষণের আসামি ছিল না। কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি সরকারকে বলতে চাই আপনার ছাত্র সংগঠন আছে, ছাত্রলীগ আছে। আপনি যদি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে চান, ছাত্রলীগকে পাঠিয়ে দিন। গণতান্ত্রিকভাবে আমরা ছাত্রলীগকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন আছে। ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক বোঝাপড়া ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলোকে করতে দেন, ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের করতে দেন। পুলিশ পাঠিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখাবেন না। পুলিশ পাঠিয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রদেরকে হয়রানি করবেন না। আপনাদের পেটোয়া বাহিনী, ডিবি তারা এসে রাজনৈতিক কারণে শিক্ষার্থীদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে আর আমরা শিক্ষার্থীরা বসে বসে আঙ্গুল চুষবো এরকম ভাবার সুযোগ নেই। আমরা মনে করি আমরা আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তার পরে যদি আমরা কোন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে থাকি সেটি আমাদের পরিচয়। সুতরাং সাবধান হয়ে যান। আপনি পুলিশ নিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খেলতে আসবেন না।
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জায়গাও এখন নিরাপদ নয়। যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কথা বলা হচ্ছে সেই অ্যাক্ট কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে যখন এই আইনে একজন লেখককে জেলের ভেতর হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, এর প্রতিবাদে ছাত্ররা যখন রাস্তায় নেমে আসে, তাদের ওপর নির্যাতন করে তাদেরকে আবার হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।