Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দখলমুক্ত জমিতে তারকাঁটার বেড়া

চট্টগ্রাম বন্দরের উচ্ছেদ অভিযান উন্নয়ন প্রকল্প হবে লালদিয়ার চরে

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

নগরীর পতেঙ্গায় লালদিয়ার চরে দখলমুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৫২ একর জমি। গতকাল সোমবার শান্তিপূর্ণ উচ্ছেদ অভিযানে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে পুরো এলাকা দখলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কর্ণফুলীর তীরে মূল্যবান এ জমিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর। অভিযান শুরু হতেই অবৈধ দখলদারেরা তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেন। তাতে সহযোগিতা দেয় অভিযানে অংশগ্রহণকারী শ্রমিক ও কর্মীরা। ফলে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান সফল হওয়ায় স্বস্তি বিরাজ করছে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সহ¯্রাধিক র‌্যাব-পুলিশের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। তবে তার আগেই ৯০ ভাগ স্থাপনা সরিয়ে নেন স্থানীয়রা। তাই অভিযানের শুরুতেই সেখানে প্রস্তুত ২২টি বুলডোজার ও স্কেভেটর ব্যবহার করতে হয়নি। কর্মীরা স্থানীয়দের মালামাল সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করেন। দখলদারদের অনেকে তাদের ঘরবাড়িসহ মালামাল সরিয়ে নিয়ে গেছেন।
আদালতের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে লালদিয়ার চরের ওই জমি দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেয়ার পর বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে রাস্তায় নামেন দখলদার এবং সেখানে বসবাসকারীদের অনেকে। তারা পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখার দাবি জানান। এ দাবিতে সোচ্চার হন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও। তবে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কড়া হুঁশিয়ারিতে উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন থমকে যায়। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বন্দরের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। আদালতের নির্দেশনায় উচ্ছেদ করতে বাধ্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষও উচ্ছেদ অভিযানের আগে স্থানীয়দের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন। সর্বশেষ শনিবারের বৈঠকে পুনর্বাসন আন্দোলনের নেতা এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ডেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা জানিয়ে দেয়া হয়। মূলত এরপর থেকেই স্থানীয়রা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। রোববারে মধ্যেই ৭০ ভাগ স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হয়।
গতকাল সকালে উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গিয়ে দখলদারদের নিজ থেকে সরে যাওয়ারকে অভিনন্দন জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি তাদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, তারা গরীব হলেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা তাদের নিজে থেকে সরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছি। এতে সাড়া দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগেই ৯০ ভাগ স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অভিযানে তাদের পক্ষ থেকে একটি ঢিলও ছোঁড়া হয়নি। তিনি উচ্ছেদ অভিযানে নিয়োজিত কর্মীদের স্থানীয়দের মালামাল সরিয়ে নেয়ার কাজে সহযোগিতার নির্দেশ দেন। পরে তিনি বোট ক্লাব এলাকায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বন্দরের প্রয়োজনেই এসব জমি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। উচ্ছেদের সাথে সাথে সীমানা প্রাচীর দিয়ে পুরো এলাকা দখলে নেয়া হচ্ছে। সেখানে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জায়গা বন্দরের এবং বন্দরের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরি। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিটিসি)’র ব্যাকআপ হিসাবে এ জমি ব্যবহার হবে। আগে এ এলাকার আরও ২৬ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়।
বিকেল নাগাদ মালামাল নিয়ে স্থানীয়রা সরে যাওয়ার পর বুলডোজার দিয়ে স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়। উচ্ছেদ অভিযানে ৭শ পুলিশ, ১শ র‌্যাব সদস্য এবং ২শ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। দুই শতাধিক শ্রমিক স্থাপনা সরানোর কাজে নিয়োজিত আছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব জানান, বিকেল নাগাদ লোকজন সবাই সরে গেছেন। এরপর বুলডোজার দিয়ে পরিত্যক্ত ভবন ভেঙ্গে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়। তার আগেই শুরু হয় সীমানায় তারকাঁটা বেড়া দেয়ার কাজ। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি জমি দখল করে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। দখলদাররা সরে যাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান সফল হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পুরো জমি মুক্ত করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
উচ্ছেদ অভিযানে থাকা চট্টগ্রাম বন্দরের এস্টেট বিভাগের সহকারী ম্যানেজার জিল্লুর রহমান বলেন, পরিত্যক্ত স্থাপনা বিশেষ করে পাকা ভবন উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এসব ভবন উচ্ছেদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। আরও দুয়েকদিন অভিযান অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি। তবে দখলদাররা সবাই সরে যাওয়ায় পুরো এলাকা এখন বন্দরের নিয়ন্ত্রণে বলেও জানান তিনি।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী লালদিয়ার চরের জমি উদ্ধারে এ অভিযান পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আদালত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় বেঁধে দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ