পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) গত শুক্রবারের সভায় বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে। বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে, তখন মিললো এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এটি একটি মাইলফলক অর্জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এভাবে : ১২ বছর ধরে সরকার পরিচালনায় নিরন্তর পরিশ্রম এবং পরিকল্পনার ফসল হচ্ছে এই অর্জন। এ কৃতিত্ব দেশের জনগণের। সরকার শুধু নীতিসহায়তার মাধ্যমে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যাই বলুন, দেশের মানুষ ভালো করেই জানে, এই অর্জন ও কৃতিত্বের জন্য তাঁর ভূমিকা ও অবদানই সবচেয়ে বেশি। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশ তরান্বিত করতে তিনি যেভাবে লাগাতার চেষ্টা ও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, এটা তারই সুফল। দীর্ঘ প্রায় ৫ দশকের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রযাত্রার প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার সব সূচক অর্জন করে। এখানেই বাংলাদেশ থামেনি। এই অর্জনকে ২০২১ পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই ছয় বছর বাংলাদেশের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন নজির আছে, সূচক অর্জন করেও কোনো কোনো দেশ তা ধরে রাখতে পারেনি। ফলে তার উত্তরণ বিলম্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে তার সক্ষমতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে। আগামীর আরো কয়েক বছর শক্তি ও উদ্যমকে জোরদার রাখতে হবে, যাতে শেষ ভালোটা অর্জন করা সম্ভব হয়। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, উন্নয়নের চলমান গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তার এই অকৃত্রিম আশাবাদ সত্যে পরিণত হোক, এই কামনা করে আমরা তাঁকে তাঁর ও তাঁর সরকারের কৃতিত্বের জন্য অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই।
এটা স্বীকার করতেই হবে, বাংলাদেশ অনেক আগেই তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। একইসঙ্গে এও স্বীকার করতে হবে, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সে অনুসরণীয় অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন করেছে। এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের তুলনায় এ অর্জন অনেক বেশি বলে প্রশংসা লাভ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল, ভুটান ও প্রতিবেশী মিয়ানমারও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশে উত্তরণের প্রতিযোগতার পিছিয়ে নেই। তবে বাংলাদেশ যে তাদের চেয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছে, সেটা মানতে হবে। বাংলাদেশ তার অবস্থান উত্তরণে প্রয়োজনীয় মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতাসূচক অর্জনে ধারাবাহিতা সুরক্ষা করে কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অবশ্য একথা বললেই সব বলা হয় না, বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষেই এখন একটি পরিবর্তিত দেশ। বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে প্রশ্ন থাকলেও তারা উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। করোনাকালে সারাবিশ্বের অর্থনীতি অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অনেক দেশই করোনাসংক্রমণ ও মৃত্যু সামলাতে পারেনি। আর অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা প্রায় কোনো দেশই রক্ষা করতে পারেনি। এই দু’ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ লক্ষ্যযোগ্য ব্যতিক্রম। করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। অন্যদিকে উন্নয়ন ও অর্থনীতির গতি সচল রাখতেও সাফল্য প্রদর্শন করেছে। উদ্যম, শক্তি ও সক্ষমতাই যে এর মূলে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাংলাদেশের এই অবস্থান বদলে ফেলার কৃতিত্ব আমাদের জন্যই কেবল স্মরণীয় নয়, অন্য অনেক দেশের জন্যও তা হতে পারে অনুকরণীয়। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে, ভাবগৌরব উজ্জ্বল হবে। একইসঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে, ঋণ পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করতে এই বিনিয়োগ ও ঋণসুবিধা কাজে আসবে।
উত্তরণ বা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশকে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হবে। বিশ্ব বাণিজ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে যেসব সুযোগ ও সুবিধা বাংলাদেশ পায়, তা আর পাবেনা। বিদেশী অনুদান পাবেনা। কম সুদে ও সহজ শর্তে বিদেশী ঋণ পাবেনা। শুল্কমুক্ত সুবিধা ও কোটা বাতিল হবে। মেধাসত্বের জন্য অর্থ দিতে হবে। ভর্তুকি ও প্রমোদণা দেয়ার সুযোগ কমবে। পরিবর্তিত প্রেক্ষিতে বিশেষভাবে, ওষুধ, গার্মেন্ট ও আইটি খাতের ওপর অধিকতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। রফতানি ক্ষতি হতে পারে ৫৩৭ কোটি ডলার বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আশঙ্কা। অবশ্য এখনই কোনো ক্ষেত্রে বৈরি প্রভাব পড়ছে না। জাতিসংঘের নিয়ম মতে, ২০২৪ সালে উত্তরণ কার্যকর হওয়ার কথা। তবে বাংলাদেশ করোনা কারণে সময় দু’বছর বাড়িয়ে ২০২৬ করার আবেদন জানিয়েছে। উত্তরণের পর তিন বছর পূর্ববর্তী বাণিজ্যসুবিধা বহাল থাকবে, এই হিসাব ধরলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অবকাশ পাওয়া যাবে। এই সময়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই ক’ বছরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। বিভিন্ন সক্ষমতা বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ,মানবাধিকার, আইনশৃংখলা ও শাসনের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।