নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
একসময় অক্ষর প্যাটেলের নামের পাশে লেগে গিয়েছিল সীমিত ওভারের বোলারের তকমা। সেই তিনিই এবার নাম লেখালেন টেস্ট ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে! ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই ৫ উইকেটের স্বাদ পাওয়া মাত্র দ্বিতীয় বাঁহাতি স্পিনার এখন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আহমেদাবাদ টেস্টের প্রথম দিনে ৩৮ রানে ৬ উইকেট নেন অক্ষর। আগের টেস্টে চেন্নাইয়ে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তার শিকার ছিল ৬০ রানে ৫ উইকেট।
সেটিকে আরো উচ্চতায় নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট শিকার করে। আর তাতে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেল মাত্র ৮১ রানে। মাত্র দেড় দিন গড়ানো টেস্টে বৃহস্পতিবার জয়ের জন্য ভারত লক্ষ্য পায় ৪৯। সেটি কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ৭.৪ ওভারেই পেরিয়ে যায় ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা (২৫) ও শুবমান গিল (১৫)। ১০ উইকেটের জয়ে ৪ ম্যাচের সিরিজে ২-১-এ এগিয়ে স্বাগতিকরা। টেস্ট ইতিহাসে মিমাংসা হওয়া দ্বিতীয় দিনে গড়ানো ২২তম ম্যাচ এটি।
বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে অক্ষরের আগে টেস্ট ইতিহাসে প্রথম দুই টেস্টেই ৫ছা উইকেট নেওয়ার কীর্তি ছিল কেবল নিক কুকের। ১৯৮৩ সালের আগস্টে অভিষেক টেস্টে লর্ডসে প্রথম ইনিংসে নেন ৫ উইকেট, দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ট্রেন্ট ব্রিজেও নেন ৫ উইকেট। এই দুজন ছাড়া আর কেউ না পারলেও সামনে সুযোগ আছে আরেকজন বাঁহাতি স্পিনারের সামনে। ২০১৯ সালে অভিষেক টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আফগানিস্তানের বাঁহাতি স্পিনার হামজা হোতাক প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এরপর এখনও আর টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরের টেস্টে মাঠে নামলে তাই কুক ও অক্ষরকে ছোঁয়ার হাতছানি আছে তার সামনে।
তবে গতকাল দিনটি হতে পারতো ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটেরও। ব্যাট হাতে করেন ১৭ রান, আহমেদাবাদের দিন-রাতের টেস্টে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেছে ১১২ রানে। কিন্তু ভারত কি ভেবেছিল বল হাতেই ভয়ংকর হয়ে উঠবেন ইংলিশ অধিনায়কই। কাঁটা দিয়ে কাঁটা (পড়ুন স্পিন দিয়ে উইকেট) তুলে নেবেন! কালেভদ্রে টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং করেন; তা-ও নির্জীব অফ ব্রেক! কিন্তু মোদি স্টেডিয়ামে রুটের সেই নিরীহ অফ ব্রেকই এমন ভয়ংকর হয়ে উঠবে!
৯৯ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারত গতকাল রুটের অফ স্পিনেই উড়ে গেছে! টেস্ট ক্যারিয়ারে এর আগে ৩২ উইকেট পাওয়া ইংলিশ অধিনায়কই মাত্র ৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে গুটিয়ে দেন ১৪৫ রানে। টেস্টে রুটের চেয়ে কম রান দিয়ে ৫ উইকেট নেওয়ার উদাহরণ আছে মোটে চারটি। ১৯৮২ সালের পর টেস্টে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে সেরা বোলিংটাও এদিন নিজের করে নিলেন রুট। ভারত গতকাল ২০.২ ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছে। ৪৬ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে হারিয়েছে ৭ উইকেট। এর মধ্যে ৫ উইকেটই রুটের। আগের দিন শেষে জ্যাক লিচ নিয়েছিলেন ২ উইকেট। গতকাল তিনি তুলে নিয়েছেন আরও ২ উইকেট। ৫৪ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। জফরা আর্চার নিয়েছেন ১ উইকেট।
ভারতের আশা ছিল আগের দিনই ফিফটি পেরুনো রোহিত শর্মাকে ঘিরে। অপরাজিত ছিলেন ৫৭ রানে। কিন্তু তিনি গতকাল ৬৬ রানের বেশি করতে পারেননি। লিচের বলে এলবিডব্লু হয়েছেন তিনি। অজিঙ্কা রাহানে করেছেন ১৭ রান। বাকিদের অবস্থা ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের মতোই। রুট তার উইকেট শিকার শুরু করেন ঋষভ পন্তকে দিয়ে। এরপর একে একে তিনি ফিরিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ওয়াশিংটন সুন্দর, অক্ষর প্যাটেল ও জসপ্রীত বুমরাকে। ভারতের ১১৫ রানে রোহিত ফেরার পর বোলিংয়ে এসেছিলেন। ভারত অলআউট হয়েছে ১৪৫ রানে। এর মাঝে ভারতের যে ৫ উইকেট পড়েছে, সবগুলোই রুটের। সেটাও মাত্র ৮ রান খরচায়! টেস্ট ইতিহাসেই এর চেয়ে কম খরচায় ৫ উইকেট প্রাপ্তির ঘটনা মাত্র ৪টি! এক পর্যায়ে ইংল্যান্ড অধিনায়কের বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৩-৩-০-৩! রীতিমতো অবিশ্বাস্য।
রুট যদি এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন, তবে উড়তে থাকা অক্ষর কেন নয়? আহমেদাবাদের উইকেটে ৩৩ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে কোনো রান না তুলেই ২ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সেটিও এই অক্ষরের প্রথম ওভারে। পরে একে একে তুলে নিয়েছেন আরো তিন ব্যাটসম্যানকে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিজ্ঞ আরেক স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ৮৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকারে এই ঘূর্ণির জাদুকর নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম ৪০০ উইকেটের মালিক এখন ৭৭ ম্যাচ খেলা অশ্বিন। এই তালিকার শীর্ষে থাকা লঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনের লেগেছে ৭১ ম্যাচ।
মাত্রই ম্যাচের রূপ পালটে দিয়েছেন মনে হওয়া এক স্পেল শেষ করে মাঠ ছেড়েছিলেন, সেই রুটই আবার ব্যাট হাতে নেমে গেলেন ইংল্যান্ড ইনিংসের চতুর্থ বলে। একটু পরে ডম সিবলিকেও তুলে নিলেন অক্ষর। খানিকবাদে রুটকেও। যদিও এর আগে আরেকটি রিভিউ এলবিডব্লুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল রুটকে। এত দিন রিভিউ ভারতের পক্ষে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা ইংল্যান্ড সেই সিদ্ধান্তে নিজেদের ভাগ্যবান ভেবেছিল কি না, কে জানে। ভেবে থাকলেও তৃপ্তিটা বেশিক্ষণ টেকেনি। অক্ষর কিছুক্ষণ পরই রুটকে তুলে নিয়েছেন ১৯ রানে। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৫৬। মাঝে অশ্বিনকে প্রথম উইকেটের স্বাদ বুঝিয়ে দিয়ে ফিরেছেন স্টোকসও। সেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে টেনে নেওয়া রুটের বিদায়ের পর চেনা চিত্রনাট্যই দেখা দিল। ১৫ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে বসল ইংল্যান্ড। অক্ষরের ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট আর ক্যারিয়ারে প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেট- দুটিই হয়ে গেছে। এমন অভাবনীয় পার্ফরম্যান্সে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও অক্ষরে অক্ষরে নিজের করে নিয়েছেন অক্ষর।
ইংল্যান্ডের ৮১ রানে অলআউট হওয়া নিশ্চিত করে দিয়েছে আরেকটি জিনিস। ইংল্যান্ড দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯৩ রান করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের লক্ষ্য ৪৯ রান। দিনের শেষ সেশনে বল যত বাজে আচরণই করুক, এ ম্যাচে ভারত হারবে, এমনটা কেউ কল্পনাতেও আনেননি। মীমাংসা হয়েছে এমন টেস্টে দুই দল মিলিয়ে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটি ছিল ২৩৪। সেটা এই টেস্টে দুই দলের প্রথম ইনিংসেই পেরিয়ে গেছে। ভারত যদি ৫২ রান না তুলতে পারতো তবে ১৯৪৬ সালের পর দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে কম রান তোলার রেকর্ডটি কিন্তু হয়েই যেত এদিন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস : ১১২। ভারত ১ম ইনিংস : ৫৩.২ ওভারে ১৪৫ (আগের দিন ৯৯/৩) (রোহিত ৬৬, অশ্বিন ১৭, ইশান্ত ১০*; আর্চার ১/২৪, লিচ ৪/৫৪, রুট ৫/৮)। ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস : ৩০.৪ ওভারে ৮১ (রুট ১৯, স্টোকস ২৫, পোপ ১২; অক্ষর ৫/৩২, অশ্বিন ৪/৪৮, সুন্দর ১/১)। ভারত ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৪৯) ৭.৪ ওভারে ৪৯/০ (রোহিত ২৫*, গিল ১৫*; লিচ ০/১৫, রুট ০/২৫)। ফল : ভারত ১০ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : অক্ষর প্যাটেল। সিরিজ : ৪ ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।