পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সারাদেশে নদনদীর দুরবস্থা নতুন করে বলার কিছু নেই। এসব নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও দূষণ রোধ, দখলিকৃত ভূমি পুনরুদ্ধার এবং দূষণ রোধে সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তবে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করতে নানাবিধ উদ্যোগের কথা শোনা গেছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দখল উচ্ছেদ অভিযানগুলো গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হলেও কাজের কাজ তেমন একটা হয়নি। তা না হলে এখনো তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু নদীতে দখলবাজির মচ্ছব দেখা যেত না। মারাত্মক দূষণের ফলে এখনো এসব নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী, এখনো পানিতে কোনো মাছ বা জলজ উদ্ভিদ জন্মায়না। দূষিত পানির তীব্র দুর্গন্ধে নদীপারে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়না। অথচ এক সময় এসব নদীতে স্বচ্ছ পানি ছিল, পানিতে প্রচুর মাছ ও জলজ উদ্ভিদ ছিল। নদীতে মাছ ধরে শত শত জেলে পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। নদীতীরের বিশাল জনগোষ্ঠির পানির চাহিদা পুরণ হতো নদীর পানি দিয়ে। নদীর সাথে যুক্ত হওয়া ঢাকা শহরের খালগুলো ছিল শহরের সাথে যোগাযোগ ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের প্রধান নালা। নদী ও খালগুলোর দখল, দূষণ ও ভরাট হওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকার সেই প্রাকৃতিক পরিবেশগত নিরাপত্তাব্যবস্থা অচল হয়ে যাওয়ার কারণে নানাবিধ নাগরিক সংকট দেখা দিয়েছে।
নদীদখল ও দূষণের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া ও নাগরিক বিড়ম্বনা থেকে মুক্তির জন্য নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদিদের দাবি সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের প্রথমেই আসে দখলদার উচ্ছেদের প্রসঙ্গ। সরকারের নীতি এবং আদালতের নির্দেশনার জন্যও মাঝে-মধ্যেই নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়। গত ১০-১২ বছরে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ-বালু নদী থেকে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদে অনেক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব উচ্ছেদের পিছনে বিআইডবিøওটিএ, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু যখন দেখা যায়, উচ্ছেদ অভিযানের পর অল্পদিনের মধ্যেই নদীর জায়গাগুলো নতুন করে বেদখল হয়ে গেছে। কেউ কেউ এ ধরনের অভিযান ও পুর্নদখলের ঘটনাকে ইঁদুর-বিড়াল খেলা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফুটপাত ও সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের অভিযান যেন দখলের হাত বদলের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসে তুরাগ তীরের ৮০ ভাগ অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল বিআইডাব্লিওটিএ। অথচ বছর ঘুরতেই দেখা গেল, উচ্ছেদকৃত সে সব স্থান আবারো বেদখল হয়ে গেছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না থাকায় প্রভাবশালী দখলদাররা নতুনভাবে নদী দখলে তৎপর হয়ে পড়ে। এভাবে উচ্ছেদের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও নদীগুলো কার্যত বেদখলই রয়ে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ সারাদেশে নদীগুলো স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত রাখতে বিআইডাব্লিওটিএ, সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েক দশকের বাস্তবতায় এখন এ বিষয়টিকে একটি বিশেষ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকার অদূরে মেঘনা নদীর বিশাল এলাকা দখল ও ভরাট করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান করছে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেড(এপিএসসিএল)। দেশে নদ-নদীর উপর দখলদারিত্ব রদ করতে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এক বছর আগে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও প্রতিপালনের দায়িত্ব সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানই যদি নদী দখল করে, বনভ’মি ও পাহাড় দখল করে স্থাপনা নির্মান করে তবে তার প্রতিকার কে করবে? যৌথ নদীর পানিবন্টনের কার্যক্রম তদারকির জন্য যেমন যৌথ নদী কমিশন থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না, একইভাবে দেশের জাতীয় নদী কমিশনের কার্যক্রম, সুপারিশ ও তদারকিও নদী রক্ষায় তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। নদী দখলকারিরা যত শক্তিশালী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। এমনকি এপিএসসিএল-এর মত রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় নদী দখল করে স্থাপনা নির্মান করতে চলেছে তা’ খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকাসহ দেশকে বাসযোগ্য রাখতে, কৃষি ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নদনদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। পুনর্দখলের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে উচ্ছেদকৃত স্থান সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের ব্যবহারিক উপযোগিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।