Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেই জিন্নাহর কবরেই খোদিত আছে ‘বাংলা লেখা’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৩২ এএম

মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের জাতির জনক। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় দেয়া ভাষণে দ্ব্যর্থহীন চিত্তে ঘোষণা করেন, ''উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোনো ভাষা নয়।'' এরপরে ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়েও তিনি একই ধরনের বক্তব্য রাখেন।
উপস্থিত ছাত্ররা সমস্বরে না, না বলে চিৎকার করে ওঠে। তার এমন মন্তব্যের জেরে আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এখনকার বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। গর্জে উঠেছিল বাঙালি। তারই ধারাবাহিকতায় বুকের তাজা রক্ত ঢেলে আদায় করে নিয়েছিল মাতৃভাষার সম্মান।
অথচ সেই বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণকারী পাকিস্তানের 'কায়েদে আজম' জিন্নাহর কবরেই টগবগ করছে বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলা। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে প্রথম আপত্তি করা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কবরে বাংলা ভাষাতেই লেখা রয়েছে তার জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ। করাচিতে অবস্থিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমাধিস্থল বা মাজার পাকিস্তানের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।
সবার জন্য উন্মুক্ত এই সমাধিস্থলটি প্রতিদিন হাজার হাজার লোক পরিদর্শন করে। জিন্নাহর সমাধিটি করাচি নগরীর মধ্যস্থলে প্রায় ৬১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। স্মৃতিসৌধটি নির্মিত ৭৫ বাই ৭৫ মিটার প্ল্যাটফরমের ওপর। এর মূল স্তম্ভটির উচ্চতা ৪৩ মিটার। এই স্মৃতিসৌধ ঘিরে রয়েছে বিশাল একটি উদ্যান। সুউচ্চ প্রাসাদ কম থাকায় করাচির বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই মাজারে কায়েদ’ এর সাদা রঙের স্মৃতি সৌধটি নজর কাড়ে।
তবে শুধু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহরই নয়, তারই ছোট বোন ফাতেমা জিন্নাহ, তার ডান হাত বা ‘কায়েদে মিল্লাত’ নামে পরিচিত পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর পাকিস্তানের যোগাযোগমন্ত্রী সরদার আবদুর রব নিশতার-এর কবরেও একইভাবে তাদের নাম, জন্ম ও মৃত্যুর তারিখগুলো বাংলা বর্ণমালায় খোদাই করে লেখা রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার তীব্র বিরোধী ছিলেন।
এই সমাধিস্থলে বাংলা ভাষা লেখা নিয়ে জানা যায়,“মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ অন্যান্যরা যখন মারা যান, তখন দুই দেশ (বাংলাদেশ ও পাকিস্তান) মিলে অখণ্ড পাকিস্তান ছিল। সে সময় পাকিস্তানে উর্দু এবং বাংলা দুটি ভাষা-ই প্রচলিত ছিল। উর্দু ভাষাভাষীদের পাশাপাশি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্যই বাংলা অক্ষরে জিন্নাহসহ এসব নেতাদের নাম, জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ লেখা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সেটি সেভাবেই রাখা হয়েছে। এটা আজও অতীতে দু’দেশের ‘অখণ্ডতার’ প্রমাণ দেয়। ”
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন একাধারে একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা পর্যন্ত জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন।
স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন এবং আমৃত্যু এই পদে বহাল থাকেন। পাকিস্তানে তাকে কায়েদে আজম (মহান নেতা) ও বাবায়ে কওম (জাতির পিতা) হিসেবে সম্মান করা হয়। ‘তার মাজারে ২৪ ঘণ্টাই দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। চারমাস পর পর দেশটির সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী পালাক্রমে সার্বক্ষণিকভাবে এ দায়িত্ব পালন করে।
১৯৪৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর জিন্নাহকে কোয়েটা থেকে ভাইকিং বিমানে চাপিয়ে করাচী নিয়ে আসা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত পাকিস্তানের জনক কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ওজন তখন মাত্র ৪০ কিলোগ্রাম। যে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে গভর্নর হাউসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, মাঝপথে সেটার পেট্রল শেষ হয়ে যায়। সে রাতে তিনি মারা যান।
ব্রিটিশ ভারতের করাচিতে ১৮৭৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত করাচির ওয়াজির ম্যানশনে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। যা বর্তমানে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী। শৈশবে তার নাম ছিল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভাই। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, তার পরিবার শিয়া ইসমাইলি মতের অনুসারী ছিল।



 

Show all comments
  • Monjur Rashed ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:২৮ পিএম says : 0
    Let his soul rest in peace. He was a true lover of our beloved Prophet (sm).
    Total Reply(0) Reply
  • Mujibur Rahman ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৫৪ পিএম says : 0
    ৭১ সালে বৈরিতার সময়েও পাকিস্তানী টাকার উপর বাংলা লেখা ছিল, জিন্না বাংলা ভাষা বিলুপ্তির চেষ্টা করেছিল এমন তথ্য কোথাও পাওয়া যায় নাই! পাকিস্তানীরা পরাজয়ের পরেও পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থাপনার বাংলা লেখা মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছেনা!
    Total Reply(0) Reply
  • Mahdi Hassan ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৫৫ পিএম says : 0
    Very interesting news.
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ দুলাল মিয়া ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৪৬ পিএম says : 0
    যদি তাহা সঠিক হয় তবে যতে শয়তানী দেখি আমাদের দেশে যেমন।বি এন পি মুজিবের নাম মুছে দিতে চায় অন্য দিকে আওয়ামী লীগ জিয়ার নাম মুছে দিতে চায়। আবার বি এন পি ও আওয়ামী লীগ তাহারা এরশাদের নাম মুছে দিতে চায়। এটাই আমাদের দেশের রাজনীতি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নুরুল আমিন ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৫২ পিএম says : 0
    মোদের গৌরব মোদের আশা আমারি বাংলা ভাষা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলা

২১ অক্টোবর, ২০২২
২৬ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ