Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অধরা অবৈধ অস্ত্রধারীরা

চট্টগ্রামে সঙ্ঘাত সহিংসতায় জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ শঙ্কা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। ডাকাতি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, এলাকায় প্রভাব বিস্তারে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। সম্প্রতি নির্বাচনী সংঘাত সহিংসতায়ও প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে গোলাগুলিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আগামী ১১ এপ্রিল জেলার ২৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সহসা বিশেষ অভিযান না হলে গ্রামেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার আর অপরাধীদের গ্রেফতারে নেই বিশেষ অভিযান। নিয়মিত অভিযানে কিছু কিছু অস্ত্র গোলাবারুদ ধরা পড়লেও বেশির ভাগ অস্ত্রধারী থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি নগরী এবং জেলায় সংগঠিত বেশ কয়েকটি সহিংসতায় প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে যারা মাঠে নেমেছিলো তারাও অধরা। এতে অস্ত্রধারীদের দাপট কমছে না। ফলে জনমনে উদ্বেগ-শঙ্কা বিরাজ করছে। বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। তবে র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ অভিযান না হলেও নিয়মিত অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, অপরাধীরাও ধরা পড়ছে। কোন ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

এই অঞ্চলে নানা অপকর্মে অপরাধীরা দেশি-বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করছে। তাদের গোপন আস্তানায় মজুদ আছে হরেক অস্ত্র গোলাবারুদ। তুচ্ছ ঘটনায়ও নগরীতে অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটছে। তবে সম্প্রতি নির্বাচনী সহিংসতায় নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে সিটি নির্বাচন ঘিরে ৩ জনের প্রাণ গেছে। গত ১৪ ফেব্রæয়ারি পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই নিহত হন। একই দিন চন্দনাইশেও পৌরসভা নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ভোট কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারে বেশ কয়েকটি এলাকায় অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটে। পটিয়ার গোবিন্দের খিলসহ কয়েকটি এলাকায় গোলাগুলি হয়।

গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনেও সহিংসতায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আমবাগান এলাকায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে প্রকাশ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। পাহাড়তলীতেও অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটে। পাথরঘাটায় বিএনপি সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে অস্ত্রহাতে মহানগর ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায় তিনি প্রতিপক্ষের প্রতি অস্ত্র তাক করে গুলি ছুঁড়ছেন। তাকে এখনও পাকড়াও করতে পারেনি পুলিশ। নির্বাচনের আগে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে মারামারিতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গত ১২ জানুয়ারি নগরীর পাঠানটুলীর দামুয়া পুকুড় পাড় এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আজগর আলী বাবুল গুলিতে প্রাণ হারান।

এই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে ওই দিন একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। নির্বাচনের আগে একই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে গোলাগুলিতে এক যুবলীগ নেতার ভাই মারা যান। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং নানা অপরাধে সস্ত্রাসীরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র ব্যবহার করছে। কিশোর অপরাধীরাও অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অস্ত্রসহ ধরাও পড়ছে।

র‌্যাব পুলিশের হাতে বিভিন্ন সময় অস্ত্র ধরাও পড়ছে। সম্প্রতি নগরীর পাঠানটুলির বংশাল রোডের একটি বাড়ি থেকে অস্ত্র তৈরির কারখানা উদ্ধার করে পুলিশ। একটি গুলির উৎস খুঁজতে গিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা নিজাম খানের বাড়িতে এই কারখানার সন্ধান মিলে। কবুতরের বাসার আড়ালে বাড়ির ছাদে অস্ত্র তৈরি করা হতো। সেখান থেকে একটি এয়ার গান, অস্ত্র তৈরির বিপুল সমরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ নিশ্চিত হয় সেখানে তৈরি অস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি হতো।
এর আগে জেলার বোয়ালখালী, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অস্ত্র তৈরির কারখানা উদ্ধার করে র‌্যাব-পুলিশ। গত বছরের ৩০ আগস্ট বাঁশখালীতে র‌্যাবের অভিযানে ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান নৌদস্যু মো. ইরান (৩৫)। জেলার রাঙ্গুনিয়াম স›দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকায় সস্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার হয় বিভিন্ন সময়ে। দেশি অস্ত্রের পাশাপাশি সীমান্ত পথেও বিদেশি অস্ত্র আসছে। এসব অস্ত্র পাচার এবং বিক্রির সময় ধরাও পড়েছে। এদিকে অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্রের অপব্যহারের ঘটনাও ঘটছে। চট্টগ্রামে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা চার হাজার ২৭৫টি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ