প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
আমাদের চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থা বহুদিন ধরেই চলছে। করোনা এসে এই অবস্থাকে আরও শোচনীয় করে দিয়েছে। সিনেমা হল বন্ধ। খুললেও দর্শক যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও চলচ্চিত্রের দুরবস্থা রয়েই গেছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আমাদের চলচ্চিত্র টিকে থাকবে কিনা? কিভাবে এ দুরবস্থার উত্তরণ ঘটানো যায়? কি ধরনের সিনেমা নির্মাণ করলে দর্শক হলমুখী হবে? চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসবে? এসব প্রশ্ন নিয়ে দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ববিতার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, করোনার আগে থেকেই আমাদের চলচ্চিত্র ভালো অবস্থায় ছিল না। কিছু সিনেমা নির্মিত হলেও তা চলচ্চিত্র শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট মনে হয়নি। এর মধ্যেই করোনা এসে পুরো চলচ্চিত্রকে থামিয়ে দিয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সরাবিশ্বেই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্র যেহেতু আগে থেকেই দুর্দশাগ্রস্থ ছিল, করোনা এসে তা একেবারেই থমকে দিয়েছে। এ অবস্থা কাটতে সময় লাগবে। তবে চলচ্চিত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে যে ধরনের সিনেমা নির্মাণ করা দরকার তা একেবারেই হচ্ছে না। ববিতা বলেন, আমাদের সময়ে দেখেছি, একের পর এক ভাল গল্পের সিনেমা হতো, এখন তা হচ্ছে না। এ সময়ের সিনেমার গল্পের গভীরতা বা স্থায়িত্ব কম। ওয়ান টাইম গল্পের মতো। মনে রাখার মতো নয়। দেখলাম আর ভুলে গেলাম। আগে যেখানে একজন পরিচালক গল্প নিয়ে মাসের পর মাস মাথা খাটাতেন, এখন তা দেখা যায় না। এখন প্রযোজকরাই পরিচালককে গল্প বলে দেন। চার-পাঁটটি গান, ফাইট দিয়ে সিনেমার গল্প সাজানো হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এখন যেসব নির্মাতা সিনেমা নির্মাণ করেন, তাদের অনেকের কাছে সিনেমা হয়ে পড়েছে জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর। ফলে তারা প্রযোজকের ফরমায়েশ মতোই চলছে। কিছু নির্মাতা আছেন পুরস্কার পাওয়ার জন্য সিনেমা নির্মাণ করেন। এ ধরনের সিনেমার দর্শক আলাদা। সংখ্যায় খুব কম। এ সিনেমা দিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সচল করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, আমাদের সময়ে জহির রায়হান, আমজাদ হোসেন, কাজী জহির, খান আতা, নারায়ণ ঘোষ মিতা, আলমগীর কবির, কামাল আহমেদের মতো প্রখ্যাত নির্মাতারা আপামর জনসাধারণের জন্য সিনেমা নির্মাণ করতেন। তাদের সিনেমা যেমন সব শ্রেণীর দর্শক দেখতেন, তেমনি সেগুলো পুরস্কারও পেত। সিনেমা তো এমনই হওয়া উচিৎ। এখন সময় বদলেছে, প্রযুক্তি এবং মানুষের জীবনযাপনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অনেকে বলেন, এ সময়ের সাথে কি সে সময়ের তুলনা চলে? এমন প্রশ্ন করলে ববিতা বলেন, ভাল গল্পের আবেদন তো চিরকালের। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম, শেক্সপিয়ারের গল্প-উপন্যাসের আবেদন কি এখন নেই? আমাদের যে সমাজ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট, মূল্যবোধ ও শিল্প-সংস্কৃতি, তার মূল চরিত্র কি বদলে গেছে? আমরা কি অন্য কোনো সমাজে বসবাস করছি? করছি না। আমরা হাজার বছর ধরে এই সামাজিক ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটেই বসবাস করছি। কাজেই, আমাদের সমাজ ও পরিবারিক প্রেক্ষাপটে যদি ভাল গল্পের সিনেমা নির্মাণ করা হয়, তবে তা দর্শক নিশ্চয়ই দেখবেন। আমরা সময়ের সাথে তাল মেলাব, তবে নিজের শিল্প-সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে নয়। প্রযুক্তির উৎকর্ষ তো আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে উপস্থাপনের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমরা কি এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারছি? পারছি না। বরং আমাদের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে অপসংস্কৃতিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। বলিউড কিংবা তাদের দক্ষিণের সিনেমা কিন্তু প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের সংস্কৃতিই বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছে। আমরা তা করতে পারছি না। ববিতা বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সিনেমার গল্প এখন আর গল্পকার ও পরিচালকের সমন্বয়ে হয় না। গল্প হয়, প্রযোজকের নির্দেশনায়। তাহলে গল্পকার বা স্ক্রিপ্ট রাইটারের দরকার কি! এই যে যার কাজ তাকে করতে না দেয়া, এ কারণে আমাদের চলচ্চিত্র ভাল সিনেমা পাচ্ছে না। প্রযোজকের দায়িত্ব অর্থ লগ্নি করা। নির্মাতার দায়িত্ব প্রযোজকের লগ্নি রক্ষা হয়, এমন গল্পের সিনেমা নির্মাণ করা। এ কাজটি এখন নেই বলেই আমাদের সিনেমা দীর্ঘদিন ধরে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। সিনেমার দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ববিতা বলেন, সিনেমা নির্মাণ করতে হবে সব শ্রেণীর দর্শককে মাথায় রেখে। এটি হবে জনগণের। এই বৃহৎ পরিসরের চিন্তা নিয়ে সিনেমা বানাতে হবে। জহির রায়হান, আমজাদ হোসেন, কাজী জহিররা কিন্তু তাই করেছেন। তাদের চিন্তার প্রশস্থতা ও দূরদর্শীতা ছিল। ছিল বলেই এখনও তাদের সিনেমা মানুষ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখেন। তাদের সিনেমা কালজয়ী হয়ে রয়েছে। এ ধরনের চিন্তা মাথায় নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলে চলচ্চিত্রকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব। মূল কথা হচ্ছে, দর্শককে ভাল গল্পের বাণিজ্যিক সিনেমা উপহার দিতে হবে। এ কাজটি করতে পারলে অবশ্যই আমাদের সিনেমা ঘুরে দাঁড়াবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।